শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস

আসিফ ইকবাল

ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস

স্বপ্নের ফাইনালে শেখ রাসেলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস। স্বাধীনতার পর কোনো দল অভিষেক মৌসুমে শিরোপা জিততে পারেনি। কিন্তু বসুন্ধরা কিংস গতকাল স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

ক্রিকেটে সেরাদের সেরা শচীন টেন্ডুলকার। অসাধারণ ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখিয়ে নিজেকে  নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। দলে প্রয়োজনে ভারতীয় কিংবদন্তি আকাক্সিক্ষত উইকেটও তুলে নিতেন বলে সতীর্থরা তাকে ডাকতেন ‘গোল্ডেন আর্ম’ বলে। নামে-যশে কিংবা ক্যারিশমায় ভারতীয় কিংবদন্তির ধারে কাছেও নন মতিন মিয়া, কিন্তু তিনিই এখন বসুন্ধরা কিংসের ‘ট্রাম্প কার্ড’!

জার্সি নম্বর ৯। একজন জেনুইন স্ট্রাইকার। অথচ কিংসের নিয়মিত একাদশে নাম থাকে না। কিন্তু  মাঠে নামেন সৌভাগ্যকে সঙ্গী করে। গতকাল স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে তিনি নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। তারপর বদলে দিলেন বসুন্ধরা কিংসের ভাগ্য। তার চোখ ধাঁধানো গোলেই স্বাধীনতা কাপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে শিরোপা জিতল বসুন্ধরা কিংস।

মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও উঠেছিল দলটি। কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি। তবে ফেডারেশন কাপের আক্ষেপ ভুলেছে কাল স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে। 

অন্যদিকে, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ২০১৩ সালের পর ফাইনালে উঠে রানার্স আপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। দলটি এর আগে ২০১১ সালেও ফাইনাল খেলেছিল।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এর আগে কোনো ক্লাব প্রথম আসরে অংশ নিয়েই ফাইনালও খেলতে পারেনি।  তাই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেই রেকর্ড গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। আর এবার স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে নজির স্থাপন করল।

রাশিয়া বিশ^কাপের ফুটবলার কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস, ব্রাজিলের মার্কোস ভিনিসিয়াস, কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুইশভেকভ ও স্পেনের জর্জ গোটর এবং বাংলাদেশের আনিসুর রহমান জিকো, মতিন মিয়া, মাহাবুবুর রহমান সুফিলদের নিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে বসুন্ধরা। দলকে এক সুতোয় গাঁথতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত অস্কার ব্রজোনের হাতে। স্প্যানিশ ভদ্রলোক তার ক্ষুরধার মস্তিকে দারুণ এক দলে রূপ দেন বসুন্ধরা কিংসকে। ছোট ছোট পাসে, ওয়াল করে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে দুই দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে জিতে নিয়েছে একটি শিরোপা।

ফেডারেশন কাপে পারেনি। সেই ব্যর্থতা ঘুচাতে স্বাধীনতা কাপে অনেক বেশি গোছানো ফুটবল খেলেছে ব্রুজোনের বসুন্ধরা। গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে দলটি জায়গা করে নেয় দুই ড্রয়ে। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের কঠিন হার্ডল টপকায় ট্রাইব্রেকারে আনিসুর রহমান জিকোর দুরন্ত পারফরম্যান্সে। দুই দুটি ম্যাচে বসুন্ধরাকে একাই জয় উপহার দেওয়া জিকো গতকালও ছিলেন দুর্দান্ত। ২/৩টি দুর্দান্ত গোল সেভ করেন তিনি। বিশেষ করে ২৯ মিনিটে শেখ রাসেলের রাফায়েল ওডোইনের ডান পায়ের সোয়ার্ভিং শট যেভাবে রক্ষা করেছেন তিনি, যার তুলনায় আসে বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের নেইমারের শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে বেলজিয়ামের কর্তোয়ার দুর্দান্ত সেই সেভটি। কাল  গোলপোস্টে দুর্দান্ত ছিলেন শেখ রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাও। তিনি ম্যাচে ৩/৪টি গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। ১৯ ও ১০৪ মিনিটে কলিনড্রেসের দুই দুটি ভলি এতটাই সুনিপুণভাবে রক্ষা করেন, যা মন ভরিয়েছে মাঠে উপস্থিত হাজার পাঁচেক ফুটবলপ্রেমীর।

  দুর্দান্ত ও মনভোলানো ফাইনালের তিন গোলই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে থাকবে বহুকাল।

প্রথম গোলটি করেন বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান রিক্রুট মার্কোস ভিনিসিয়াস। ১৭ মিনিটে প্রায় ২৫ মিটার দূর থেকে বাঁ পায়ের বুলেট শটে মার্কোস চোখ ধাঁধিয়ে দেন শেখ রাসেলের গোলরক্ষক রানার (১-০)। মার্কোসের বা পায়ের শটটির গতি এতটাই ছিল, যা চোখের পলক পড়ার আগেই দ্বিতীয়বার দিয়ে গোলপোষ্টে জায়গা করে নেয়। দুই মিনিট পর কলিনড্রেসের শটে গতি না থাকায় পরাস্ত হননি শেখ রাসেলের গোলরক্ষক রানা। গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে উঠে রাসেল। আক্রমণের পর আক্রমণ শানিয়ে সমতায় ফেরে ৪৩ মিনিটে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল ওডোইন ডান পায়ের প্লেসিং শটে আরও একটি বিশ^মানের গোল করে তাক লাগিয়ে দেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক জিকোকে (১-০)। ওই গোলের কিছু পর বিরতির বাঁশি বাজান রেফারি সুজিত ব্যানার্জি।       

দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই বল নিজেদের পায়ে রেখে খেলতে থাকে। ৬৭ মিনিটে ওডোইন তাড়াহুড়া করতে গিয়ে গোল মিস করেন। তার শটে গতি না থাকায় পা বাড়িয়ে রক্ষা করেন নাসির চৌধুরী। ৭৬ মিনিটে ফের মিস করেন ওডোইন। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় ১-১ গোলে। এরপর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে জয় তুলে মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা কিংস। অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে  শিরোপাজয়ী গোলটি করেন মতিন। ডি- বক্সের ভিতর থেকে দেখে শুনে বাঁকানো শটে দ্বিতীয় বারপোষ্ট দিয়ে জয়সূচক গোলটি করেন মতিন। ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে শিরোপা উৎসব করতে করতে মাঠ ছাড়েন অস্কার ব্রুজোন, কলিনড্রেস, মার্কোস, জিকো, মতিন, সুফিলরা।

সর্বশেষ খবর