শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটবল কিং বসুন্ধরা কিংস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবল কিং বসুন্ধরা কিংস

স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়ল নবাগত বসুন্ধরা কিংস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘরোয়া ফুটবলে শক্তিশালী দল গড়ে ১৯৭২ সালে আলোড়ন তুলেছিল আবাহনী ক্রীড়া চক্র। ১৯৭৫ সালে তারুণ্যনির্ভর ব্রাদার্স ইউনিয়নও সাড়া ফেলেছিল। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও অভিষেকে ফুটবলপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে লিগে রানার্স আপ হয়ে। কিন্তু অভিষেক ইতিহাসে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বসুন্ধরা কিংস। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালেই তো ঘরোয়া ফুটবলের যাত্রা। ৪৬ বছর ইতিহাসে বসুন্ধরা কিংসের আগমনটা ঘটেছে সত্যিই রাজকীয় ভাবে। বলা যায় ফুটবলে কিং বসুন্ধরা কিংস।

প্রশ্ন উঠতে পারে ফুটবলে কিং উপাধিটা আসে কীভাবে? ইতিহাস পর্যালোচনা করেই এ কথা বলা হচ্ছে। কেননা অভিষেক মৌসুমে কোনো দলের ট্রফি জেতাতো দূরে কথা ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব নেই। সেখানে বসুন্ধরা কিংসের আগমন ঘটে রাজকীয়ভাবে। টানা দুই টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠে শুরুতেই ইতিহাস লিখে ফেলেছে দলটি। ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। এগিয়ে থেকে ও বিতর্কিত রেফারিংয়ে হেরে যায় বসুন্ধরা কিংস। দ্বিতীয় ফাইনালে ইতিহাসটা সোনার অক্ষরে লিখে ফেলেছে কিংস। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে সেমিফাইনালে আবাহনীকে হারিয়ে প্রতিশোধ নেয় বসুন্ধরা কিংস। ফাইনালে শেখ রাসেলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন। যেমন নাম তেমন কাজ। ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে বসুন্ধরা কিংসই প্রথম দল যারা অভিষেক মৌসুমের চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করল। গতবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসুন্ধরা কিংস এবার ঘরোয়া ফুটবলে সেরা আসর পেশাদার লিগ খেলা।

দক্ষ ম্যানেজমেন্ট ও সুন্দর পরিবেশ একটি দলের সাফল্যের চাবিকাঠি। তার বড় উদাহরণ হতে পারে বসুন্ধরা কিংস। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দলের অভিষকটা এতটা আলোচিত হয়নি। যা অন্যদের করা সম্ভব হয়নি তা করে দেখাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। দলের সভাপতি, ইমরুল হাসান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা জয়ের পর ঘোষণা দেন বসুন্ধরা কিংস শুধু নিজেদের সাফল্যের জন্য নয় দেশের ফুটবলে হারানো গৌরব ও জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। অনেক ক্লাবই ফুটবল উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাফুফে উন্নয়নের কথা বার বার বললেও এসব মুখেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। বসুন্ধরা কিংসই ব্যতিক্রম। কথা ও কাজের মধ্যে তাদের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলার সন্ধানের লক্ষ্যে অনূর্ধ্ব-১৭ ক্যাম্প করেছে। বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশেষ ক্যাম্পও চালু করেছে। রংপুরে সিনিয়র ও জুনিয়রদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এক টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করে কিংস। আর নীলফামারীকে হোম ভেন্যু বেছে নেওয়ায় নতুনত্ব আনে ঢাকার বাইরে ফুটবলে। বসুন্ধরা হোম ভেন্যু করায় বাফুফে নীলফামারীতে জাতীয় দল ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে প্রীতিম্যাচের আয়োজন করে। দর্শকে উপচে পড়ে পুরো গ্যালারি। শুধু কি তাই নিজ ভেন্যুতে বসুন্ধরা কিংস প্রীতি ম্যাচে খেলে মালদ্বীপ চ্যাম্পিয়ন নিউ রেডিয়্যান্টের সঙ্গে। এটাও এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কেননা এর আগে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবই নিজ খরচায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদেশি দলের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ খেলেনি। জাতীয় দল যেখানে মালদ্বীপের সামনে দাঁড়াতে পারেনি সেই দেশের চ্যাম্পিয়ন দলকে উড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা কিংস। অভিষেক মৌসুমটা শুরু করে রাখতে দেশি বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে শক্তিশালী দল গড়ে। বিশেষ করে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া ফেলে দেয়। কিংসই প্রথম দল যাদের অভিষেকেই বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড় যোগ দিয়েছেন। মার্কোস, বখতিয়ার, গোটর ও উঁচুমানের বিদেশি ফুটবলার। লোকাল সেরা খেলোয়াড়। কোচের দায়িত্বে আছেন স্পেনের আস্কার। এমন শক্তিশালী দল ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে জাতীয় দলের ব্যর্থতায় ফুটবল অনেকটা নীরবই ছিল বলা যায়। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের রাজকীয় আগমনে ফুটবলে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে টানা দুই আসরে ফাইনাল খেলেছে। একটা ট্রফি জিতেছে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। শুধু ট্রফি নয়, শুরুতে ফুটবল উন্নয়নে নানা কর্মকান্ড দেখিয়ে বসুন্ধরা কিংস যেন ফুটবলে কিংয়ে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতা কাপ জয়ের পর অপেক্ষা এখন পেশাদার লিগ। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য এখন পেশাদার লিগই। আমার বিশ্বাস টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলে পুরো দল উজ্জীবিত হয়ে লিগে নামবে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে আরেকটি ইতিহাস গড়বে বসুন্ধরা কিংস।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর