১৯৮৬ সালে ইরাকের পক্ষে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন সামির শাকির ও করিম মোহাম্মদ। বিশ্বকাপ খেলা দুই ফুটবলার পরের বছর ঢাকায় মাঠ মাতিয়েছেন আবাহনীর জার্সি গায়ে। বিশ্বকাপের দুই ফুটবলারের পাশাপাশি আশির দশকে ঢাকার মাঠ মাতিয়েছেন নাইজেরিয়ার এমেকা, রাশিয়ার জুকভ, উজবেকিস্তানের রহিমভ, ইরানের নালজেগার, ভিজেন তাহিরি, শ্রীলঙ্কার পাকির আলিরা। এসব বিদেশি ফুটবলারের শৈল্পিক ফুটবল এখনো মুগ্ধতা ছড়িয়ে রেখেছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। ওরা চলে যাওয়ার পর আরও বিদেশি ফুটবলার ঢাকায় খেলে গেছেন। কিন্তু হাইতির সনি নর্দের মতো মাঠ রাঙাতে পারেননি কেউ। নর্দের গতি ও স্কিলের অপূর্ব মিশেলের ফুটবলে মুগ্ধ হয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। এরপর সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকেন, ঢাকার মাঠের বিদেশি ফুটবলারদের সেরা কে? কেউ বলেন সামির, কারও মতে জুকভ, কেউ আবার নালজেগার, আবার কারও মতে নর্দে। এসব নজরকাড়া ফুটবলারের সঙ্গে চলতি মৌসুমে যোগ হয়েছে আরও ২/৩ ফুটবলার। রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস, হাইতির কারভেন্স বেলফোর্ট। এদের মধ্যে থেকেই হয়তো ফুটবলপ্রেমীরা পারফরম্যান্সের বিচারে সেরা ফুটবলার খুঁজে নিবেন। ঢাকা মাঠের সেরা ফুটবলার যিনি হোন, ক্লাব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কোচরাও স্বীকার করেছেন, ক্লাবগুলোর সাফল্য নির্ভর করে বিদেশি ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের ওপর। এবার প্রতি দলে ৪ বিদেশি খেলছেন বলেই হয়তো নির্ভরতাও বেশি।
দুর্দান্ত ফুটবল খেলে ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্বাধীনতা কাপে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর কাছে বসুন্ধরা কিংস হেরেছে দুই বিদেশির পারফরম্যান্সে। ৩-১ গোলের ওই ফাইনালের চার গোলই করেছে বিদেশি ফুটবলাররা। বসুন্ধরার পক্ষে বিশ্বকাপ ফুটবলার কলিনড্রেস, আবাহনীর পক্ষে দুটি করেছেন সানডে চিজোবা ও একটি বেলফোর্টের। হ্যাটট্রিকসহ ৬ গোল করে ফেডারেশন কাপের শীর্ষ গোলদাতা ছিলেন চিজোবা। ৫ গোল করেছিলেন কলিনড্রেস। ৩টি করে গোল করেছিলেন মার্কোস ভিনিসিয়াস, ল্যান্ডিং ডারবো, ডেনিস বলশাভেকভ, ওটাভেক ভিলাজেনভ। শীর্ষ ৬ গোলদাতার সবাই বিদেশি। স্বাধীনতা কাপেও একই চিত্র। সর্বোচ্চ ৪ গোল করে সবার ওপরে ছিলেন টিম বিজেএমজির ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার পল এমিল। ৩টি করে গোল শেখ রাসেলের উজবেকিস্তানের স্ট্রাইকার আজিজভ আলিশের ও চট্টগ্রাম আবাহনীর গাম্বিয়ান স্ট্রাইকার মামাদো বোহ। ৩ গোল করেছিলেন আরামবাগের বাংলাদেশি স্ট্রাইকার রবিউল ইসলাম। সেমিফাইনাল ও ফাইনালেও চমৎকার দুটি গোল করে বিদেশিদের আড়াল করে আলো নিজের দিকে টেনে নেন বসুন্ধরা কিংসের ‘সুপার সাব’ স্ট্রাইকার মতিন মিয়া।
ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে দলগুলোর যে পারফরম্যান্স তার প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল ছিল বিদেশিদের বুটের ঝলকের ওপর। মৌসুমের তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি শেষ। বাকি শুধু প্রিমিয়ার লিগ। দেশের একমাত্র পেশাদার লিগে সাফল্য পেতে ক্লাবগুলোকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে বিদেশি ফুটবলারদেও নৈপুণ্যের ওপর। বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ মাহাবুব হোসেন রক্সিও স্বীকার করেছেন বিদেশিদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা, ‘আগের বছর দুজন করে বিদেশি খেলতেন। এবার ৪ জন করে খেলছেন। বিদেশিদের উপস্থিতি বেড়েছে। দলগুলোও তাদের পজিশন মতো ফুটবলার ভিড়িয়েছে। শিরোপাপ্রত্যাশী দলগুলো স্ট্রাইকার পজিশনের ফুটবলার এনেছে। নিচের দিকের দলগুলো এনেছে রক্ষণভাগের ফুটবলার। এতে করে ক্লাবগুলো নিজেদের দুর্বলতাগুলো ঢেকে নিয়েছে। বেশি সংখ্যক বিদেশি খেলছেন বলেই তাদের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় ক্লাবগুলোকে। তাদের পারফরম্যান্সের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে দলগুলোর পারফরম্যান্স।’ রক্সি ভুল বলেছেন কি? ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর মূল ভরসা ছিলেন চার বিদেশি। স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের মূল অস্ত্র কলিনড্রেস, মার্কোস, বখতিয়ার ও গোটর। যদিও স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে গোটর খেলেননি এবং জয়সূচক গোলটি করেছেন মতিন মিয়া।খেলতে আসা বিদেশি ফুটবলাররা এবার মন ভরাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীদের। রক্ষণভাগ সামলাচ্ছেন ওডোকা, জর্জ গোটর, বখতিয়াররা। আবার গোল করছেন কলিনড্রেস, মার্কোস, চিজোবা, বেলফোর্টরা। বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ রক্সি বিদেশি ফুটবলারদের মান নিয়ে সন্তুষ্ট, ‘ইনজুরির জন্য আমাদের দলের মার্কোস অনেকগুলো ম্যাচ খেলতে পারেননি। কিন্তু ফাইনালে তিনি যে গোলটি করেছেন, সেটাই প্রমাণ করেছে, তিনি কতটা মানসম্পন্ন ফুটবলার। বিশ্বকাপ খেলা কলিনড্রেস নিয়ে কিছু বলার নেই। এ ছাড়া বেলফোর্ট, চিজোবা, ডেনিস, মামাদো বোহ, রাফায়েল ওডোইনরা সবাই মানসম্পন্ন ফুটবলার। আমি মনে করি এসব মানসম্পন্ন বিদেশি ফুটবলারের উপস্থিতিতে প্রিমিয়ার লিগ দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ শেষ। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মাঠে গড়াবে প্রিমিয়ার লিগ। দলগুলো বিশ্রাম দিয়েছেন ফুটবলারদের। বিশ্রাম নিয়ে দেশি ও বিদেশি ফুটবলাররা ফের মাঠে নামবেন উদ্দীপ্ত হয়ে। ফুটবলপ্রেমীরাও অপেক্ষায় থাকছেন জমজমাট লিগ দেখার।