সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বছরটা ফ্রান্স ও লুকা মডরিচের

ফি রে দে খা ২ ০ ১ ৮

রাশেদুর রহমান

বছরটা ফ্রান্স ও লুকা মডরিচের

ফুটবলে বছরের সেরা ছবিগুলোর একটা হলো, গত জুলাইতে রাশিয়ান শহর কাজানে ফ্রান্সের কাছে আর্জেন্টিনার ৪-৩ গোলে পরাজয়ের পর লিওনেল মেসির পিঠে কিলিয়ান এমবাপ্পের সান্ত্বনার হাত রাখার দৃশ্যটা। শেষ ষোলর সেই ম্যাচে ১৯ বছরের এক তরুণ পাঁচবারের বর্ষসেরাকে এভাবে সান্ত্বনা দেওয়াটা কেবল একটা ছবিই ছিল না। ফুটবলে সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটা বাঁক বদলের ইঙ্গিতও ছিল এটা। অন্যদিকে পর্তুগালকে বিদায় করে উরুগুয়েও এই বাঁক বদলে বড় অবদান রেখেছিল।

ফ্রান্সের রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়, ক্রোয়েশিয়ার অবিশ্বাস্যভাবে ফাইনালে উঠে আসা এবং মেসি-রোনালদোকে টপকে লুকা মডরিচের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন; এই ঘটনাগুলোর সমন্বয়ে বছরটা ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত বছর হয়েই থাকল।

বিশ্বকাপের গ্র“প পর্বেই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলের দুর্দান্ত জয়। পরের দুই ম্যাচ জিতে গ্র“প চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নকআউটে উঠা। এরপর একের পর এক ডেনমার্ক, স্বাগতিক রাশিয়া এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল। বছরটা স্বপ্নের মতো ছিল ক্রোয়েশিয়ার। ফাইনালে অদম্য ফ্রান্সের কাছে হেরে গেলেও ইতিহাসের সেরা দলটা নিজেদের যোগ্যতার পরাকাষ্ঠ দেখিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপে। লুকা মডরিচ জিতেছেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল। বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়েই বুঝিয়েছিলেন মডরিচ, এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিতেই কেবল চুমু দেওয়া হয়নি। এছাড়া বাকি সবই তো হলো। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার, ব্যালন ডি’অর, ইউরোপসেরা; ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের সব ট্রফিই শোকেসে পুরেছেন ক্রোয়েশিয়ান তারকা লুকা মডরিচ। লিওনেল মেসি এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গত ১০ বছরের সাম্রাজ্য শেষ করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত অর্জনে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে থাকলেও দলীয় অর্জনে ফ্রান্সের কাছাকাছিও কেউ নেই। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর পল পগবার সেই পাগলাটে নাচ, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের উদ্যম নৃত্য, শীতের রাতেও শ্যাম্পেনে গোসল করার দৃশ্যগুলো ফুটবল ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রইল। ইংলিশরা বহু সাধ করে এবার ‘ইটস কামিং হোম’ গান ধরেছিল। প্রতিবারই তারা গানটা গায়। সেই ১৯৬৬ সাল থেকে। কিন্তু কোনোবারই নাগাল পায় না। এবার তাদের বিশ্বাস ছিল, হ্যারি কেইনরা ঠিকই বিশ্বকাপ ট্রফিটা ব্রিটেনের মাটিতে নিয়ে আসবে। কিন্তু তা আর হলো কই! সেমিফাইনালেই বিদায় নিল তারা। অন্যদিকে ফরাসিরা বিদায় করল বেলজিয়ামকে। মধ্য ইউরোপের এই দেশটাকে এতদিন সবাই রেসের কালো ঘোড়া বলেই জানতো। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে তারা জাপান আর ব্রাজিলের মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল। বেলজিয়ামকে নিয়ে বড় আশা করেছিল ভক্তরা। ইডেন হ্যাজার্ড, কর্টয়েস, ডি ব্র“ইনদের নিয়ে গড়া দলটা কী দুর্দান্তই না ছিল। কিন্তু ফ্রান্সের কাছে তারা হেরে যায় সেমিতে। জিদান যুগের পর আরও একবার বিশ্বকাপ জয়ের পণ করেছিল ফরাসিরা। পেলের পর তরুণ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জনের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অলিভিয়ের গিরদ আর লরিসের মতো অভিজ্ঞদের পাশাপাশি দলটাতে ছিল গ্রিজমান, এমবাপ্পে, পগবা, উমতিতিদের মতো তরুণরা। কী অসাধারণ একটা দলই না ছিল ফ্রান্স। বিশ্বকাপের আগে যে কয়টা দলকে ফেবারিট হিসেবে ধরা হচ্ছিল, তাদের অন্যতম ছিল ফ্রান্স। তরুণ অদম্য এই দলটাকে কেউ রুখতে পারেনি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেই তারা থামল। এছাড়াও আরও অনেক ঘটনায় পূর্ণ ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবল। প্রথমবারের মতো মেয়েদের ফুটবলে দেওয়া হয়েছে ব্যালন ডি’অর ট্রফি। জিতেছেন আডা হেগেরবার্গ। ক্লাব ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ছাড়াও তারা এবার জয় করেছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা হারিয়েছে লিভারপুলকে। অন্যদিকে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে আল আইনকে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। চার নম্বর শিরোপা জিতে এই টুর্নামেন্টে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা ছাড়িয়ে গেছে বার্সেলোনাকে।

সবমিলিয়ে ফুটবলভক্তদের জন্য ২০১৮ সাল ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর একটা বছর।

সর্বশেষ খবর