বৃষ্টিতে এক-দুদিন ভেসে যাওয়ার বহু নজির রয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে। দুদিন ভেসে গেলেও ফল হয়েছে বহু ম্যাচে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এমন হারের তিক্ত স্বাদ রয়েছে দেড় দশক আগে। ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্টটির প্রথম দুদিন ভাসিয়ে নিয়েছিল বৃষ্টি। তারপরও হারের গোলক ধাঁধা থেকে বেরোতে পারেনি। হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। ১৮ বছর পর, হ্যামিল্টনের পুনরাবৃত্তি হলো ওয়েলিংটনে! বৃষ্টি বাঁধায় রাজধানীর বেসিন রিজার্ভে দুদিন মাঠেই নামতে পারেননি দুই দলের ক্রিকেটাররা। গতকাল প্রথমবার নামল দুই দল। তাতেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় প্র্রকৃতি। যার ফলে খেলা হয়েছে মাত্র ৭২.৪ ওভার। তাতেই অলআউট বাংলাদেশ। ধাক্কা সামলাতে ব্যর্থ নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারও ফিরেছেন সাজঘরে। এমনই জটিল পরিস্থিতি এখন ওয়েলিংটন টেস্টের। যদিও টেস্টের বাকি আছে আরও দুদিন এবং তিন ইনিংস। তাতে কি, বৃষ্টি¯œাত টেস্টটিতে ফল হতেই পারে! ফল যে দলের দিকেই হেলে পড়ুক না কেন, কাল নিউজিল্যান্ডের পেসারদের লাগাতার শর্ট বলে নাভিশ্বাস উঠেছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। বিশেষ করে বাঁ হাতি পেসার নেইল ওয়াগনারের বাউন্সারে কাহিল হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ২১১ রানে। অবশ্য আবহাওয়ার সুবিধা নিয়ে স্বাগতিকদের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন টাইগার পেসার আবু জায়েদ রাহি। আজ চতুর্থ দিন ম্যাচে ফিরতে নামবেন মুস্তাফিজ, রাহি, এবাদতরা।
দূর থেকে আলাদা করে বোঝার উপায় নেই উইকেট এবং আউট ফিল্ডের। আউট ফিল্ডের মতোই সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত উইকেট। তার ওপর দুদিনের টানা বৃষ্টিতে উইকেট পুরোপুরি স্যাঁতসেঁতে। এমন উইকেটে আগে ব্যাটিং করা আত্মাহুতিরই নামান্তর! তাই টস জিততে মরিয়া ছিলেন দুই দলের অধিনায়কই। কিন্তু টস ভাগ্য হেলেছিল কেন উইলিয়ামসনের দিকে। তাই টস জিতে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে। ঠা-া আবহাওয়া ও সবুজ উইকেটে ভীত না হয়ে অসাধারণ ব্যাটিং করেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলাম। ট্রেন্ট বুল্ট, টিম সাউদিদের সামাল দিয়ে দুই বাঁ হাতি ওপেনার বিচ্ছিন্ন হন ৭৫ রান যোগ করে। এই নিয়ে দুই ওপেনার টানা তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি ঊর্ধ্বে জুটি গড়েন। নিউজিল্যান্ডে টেস্টে কোনো সফরকারী দলের উদ্বোধনী জুটি টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়ার রেকর্ড রয়েছে কেবল একবার। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্যারি কারস্টেন ও হার্শেল গিবস এই রেকর্ডটি গড়েছিলেন। হ্যামিল্টনে তামিম ও সাদমান গড়েছিলেন যথাক্রমে ৫৭ ও ৮৮ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ২৭ রানে সাজঘরে ফিরেন সাদমান। এরপরও তামিম আঁকড়ে ছিলেন উইকেট। দেশসেরা ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিল ৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে।
হ্যামিল্টন টেস্টের নায়ক ওয়াগনার ৩১ নম্বর ওভারে বোলিংয়ে এসে নাভিশ্বাস তুলেন টাইগার ব্যাটসম্যানদের। নিজের দ্বিতীয় ওভারে শর্ট বলে ফেরত পাঠান মুমিনুল হককে। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে ফের শর্ট বলে বোকা বানান মোহাম্মদ মিথুনকে। ৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরও পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছেন তামিম। কিন্তু হ্যামিল্টনের দুই সেঞ্চুরিয়ানকে শর্ট বলে ফেরত পাঠান ওয়াগনার। এরপর আর টিকে থাকেনি টাইগারদের ব্যাটিং দৃঢ়তা। ওয়াগনারের পর টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট তুলে বাংলাদেশের লেজ মুড়ে দেন বুল্ট। ১ উইকেটে ১১৯ রান থেকে ২১১ রানে গুটিয়ে যায়। তামিম সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন। ১১৪ বলের ইনিংসটিতে ছক্কা না থাকলেও বাউন্ডারি ছিল ১০টি। নিউজিল্যান্ড সফরে টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেন বাঁ হাতি ওপেনার। প্রথম টেস্টে ১২৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ৭৪ রান। মিডল অর্ডারের ব্যর্থতাকে সামাল দিতে চেষ্টা করেছিলেন লিটন দাস। ৪৯ বলে ৬ চারে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে করে ২১১ রানের বেশি করা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৬১ ওভার।সফরকারীদের অল্প রানে বেঁধে ফেলে খেলতে নামেন দুই কিউই ওপেনার। কিন্তু ৮ রানের মধ্যে হ্যামিল্টন টেস্টের দুই সেঞ্চুরিয়ান জিত রাভাল ও টম ল্যাথামকে সাজঘরে ফিরিয়ে আশা জাগিয়ে তুলেন জায়েদ রাহি। কিন্তু শুরুর ধাক্কা ধরে রাখতে পারেননি মুস্তাফিজ, এবাদতরা। দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান রস টেলর ও উইলিয়ামসন ৩০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পার করেন।