সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

পথ দেখাচ্ছেন জেমি ডে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পথ দেখাচ্ছেন জেমি ডে

ফুটবল যতই পিছিয়ে থাকুক না, একদিক দিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আর তা হলো কথায় কথায় কোচ বদল। ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে কত কোচ যে বদল হয়েছে তা হিসাব মেলানো মুশকিল। দল খারাপ করলেই কোচ বরখাস্ত। একমাস দায়িত্ব থেকেও কোচ বদলের ঘটনা রয়েছে। অথচ অনেক খ্যাতিমান কোচ বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেছেন। অটো ফিস্টার বিশ্বকাপে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন যোগ্য ব্যক্তিকেও বাফুফে ব্যর্থ কোচ বলে বিদায় দিয়েছে। যে নাসের হেজাজি মোহামেডানকে এশিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলে তিনবার চূড়ান্তভাবে নিয়ে গেছেন। তাকেও বাফুফে চাকরিচ্যুত করেছিল সাফ গেমসে ফাইনালে হারায়।

যাক বাফুফে শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করেছে বার বার কোচ বদলে লাভের চেয়ে ফুটবলে ক্ষতিটাই হচ্ছে বেশি। এখানে বড় উদাহরণ হতে পারেন ইংল্যান্ডের জেমি ডে। বাফুফে যখন হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন জেমির হাতে তুলে দেয় দায়িত্ব। তার প্রশিক্ষণে জাতীয় দল ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নেয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও ব্যর্থ। এ অবস্থায় জেমি ডের বিদায় ঘটবে অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন।

বাফুফে সবাইকে অবাক করে জেমি ডেকে রেখে দেন। ট্রফি না জিতুক জেমির প্রশিক্ষণে ফুটবলে যে পরিবর্তন আসছে তা মাঠের পারফরম্যান্সেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিশেষ করে গত আগস্টে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের নকআউট পর্ব খেলাটা বড় চমকই বলা যায়। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান গেমসে ফুটবলে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবারই গ্রুপপর্ব খেলেই দেশে ফিরেছে। ২০১৮ ইন্দোনেশিয়াতেই তার ব্যতিক্রম দেখা গেল। কাতারকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নকআউট পর্ব খেলে।

পরবর্তীতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ব্যর্থ হলেও বাফুফে তাকে রেখে দেয়। এতে করে আশার আলো জাগছে। ট্রফি জেতা মানেই কোচ সাকসেস তা যে ঠিক না বাফুফে তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। সত্যি কথা বলতে জাতীয় দল অলিম্পিক যা বলি না জেমির প্রশিক্ষণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেখা যেত ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে হাফ টাইমে দম শেষ। ক্লান্ত শরীরে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না খেলোয়াড়দের। অনেক ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলেও হেরেছে বাংলাদেশ। 

সেই দৃশ্যটা কিছুটা হলেও পাল্টে গেছে। অনেকে হয়তো বলবেন, কম্বোডিয়া, কাতারে একটি ম্যাচ ও অনূর্ধ্ব-২৩ এএফসি বাছাইপর্বে শ্রীলঙ্কাকে হারানোয় জেমির প্রশংসা করা হচ্ছে। না এখনকার ফুটবলারদের লড়াকু মনোভাব ও গতিময় খেলাতেই প্রমাণ মিলছে বেহাল দশাটা কাটতে শুরু করেছে। জানি না জেমি ডেকে নিয়ে বাফুফের চিন্তাভাবনা কি? তবে চাঙ্গা ফুটবল দেখে মনে হয় জেমিকে রেখে ফুটবল উন্নয়নের চিন্তাটা করা উচিত। হারিয়ে যাওয়া ফুটবলকে নতুন করে পথ দেখাচ্ছেন জেমি। কোচ তার শিষ্যদের ওপর সন্তুষ্ট। শিষ্যরাও চান গুরুকে। জেমি অবশ্য আরও সময় চেয়েছেন। হুট করে পরিবর্তন সম্ভব নয়। লিগে বিদেশি খেলোয়াড় নিয়ে তার আপত্তি নেই। তবে আক্রমণভাগে স্থানীয়দের খেলানোর তাগাদা দিয়েছেন। সহজ গোল হাত ছাড়া করার পেছনে এটাই বড় কারণ মনে করছেন জেমি। সামনে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাই পর্ব খেলতে হবে। মূল বাছাই পর্বে যেতে না পারলে প্রায় ৪ বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবু ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী জেমি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর