শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

তরুণরাই আশার বাতিঘর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তরুণরাই আশার বাতিঘর

বিশ্বকাপ মহাসাগরে বাংলাদেশ দল যেন ছোট্ট এক জাহাজ! ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, আর তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য আছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেনের মতো অভিজ্ঞরা। উত্তাল মহাসাগরে হাজারও ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদ-আপদ পাড়ি দিয়ে জাহাজটিকে ‘শিরোপা’ নামক গন্তব্যে পৌঁছাতে দিক নির্দেশক ‘বাতিঘর’ হিসেবে কাজ করবেন তরুণ ক্রিকেটাররা!

কিন্তু সত্যিই কি তরুণ ক্রিকেটাররা পারবেন বিশ্বকাপে আশার বাতিঘর হতে?

এবারের স্কোয়াডে থাকা ১৫ ক্রিকেটারের মধ্যে ৭ জনেরই প্রথম বিশ্বকাপ এটি। মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিথুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন ও আবু জায়েদ রাহী-এরা কেউই আগে কখনো বিশ্বকাপ খেলেননি। এদের মধ্যে আবার আবু জায়েদের তো জাতীয় দলের জার্সিতে ওয়ানডে অভিষেকই হয়নি। তারপরও এই তরুণদের ওপরই নির্ভর করছে টাইগারদের বিশ্বকাপ-ভাগ্য!

২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল, ২০১৮ এশিয়া কাপে ফাইনাল-এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবার শিরোপার খোঁজেই ইংল্যান্ড যাচ্ছে বাংলাদেশ।

কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে মাস খানেক আগেই ইউরোপে চলে যাচ্ছেন টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নেওয়ার পর বিশ্বকাপে অংশ নিতে ইংল্যান্ডে চলে আসবেন মাশরাফিরা। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও হাতে থাকছে।

এছাড়া বড় আসরে অনেক সময় বড় ফ্যাক্টর দাঁড়ায় গ্যালারির দর্শক ও উইকেট। এখানেও দুশ্চিন্তা নেই। কেননা ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে দেখা গেছে গ্যালারিতে টাইগারদের সমর্থন প্রায় ‘ফিফটি-ফিফটি’। অন্য দলের বিরুদ্ধে খেলা হলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের পর ইংল্যান্ডের মাটিতেই সবচেয়ে বেশি সমর্থন পায় লাল-সবুজরা।

আর বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে উইকেট তৈরি করে স্বয়ং আইসিসি। এখানে স্বাগতিক দলের খুব একটা প্রাধান্য থাকে না। সব দলের কথা বিবেচনা করেই বানানো হয় স্পোর্টিং উইকেট। তাই সব কিছুই যেন অনুকূলে!

তবে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ভালো কিছু করতে হলে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি পারফরম্যান্সে জ্বলে উঠতে হবে তরুণদের। মুস্তাফিজ-মিরাজরাও যেন নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন।

সব কিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ একাদশে অন্তত ৪-৫ তরুণ ক্রিকেটারকে দেখা যাবে যাদের বিশ্বকাপ খেলার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের চাপ কতটা সে সম্পর্কে ধারণা নেই। তাই বলে অন্য ক্রিকেটারদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবেন এমনও নয়।

মুস্তাফিজুর রহমান -বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপে প্রধান ভরসা। কাটার মাস্টার ৪৩ ওয়ানডেতে ৭৭ উইকেট নিয়েছেন। কাটার, সুইং, স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানের কাছে হয়ে গেছেন এক আতঙ্ক। পুরো টুর্নামেন্টে মুস্তাফিজ সুস্থ থাকলে বেড়ে যাবে টাইগারদের সম্ভাবনাও।

মেহেদী হাসান মিরাজ-২০১৭ সালে অভিষেকের পর খেলেছেন ২৫ ওয়ানডে। ব্যাটে দলে দাপট দেখিয়ে হয়ে গেছে নির্ভরতার প্রতীক। ২৬ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে নেমে ২০.৭৮ গড়ে করেছেন ২৯১ রান।

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন- দলের একমাত্র পেস অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী এক ক্রিকেটার। জাতীয় লিগে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন। যেমন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তেমনি লোয়ার অর্ডারে হার্ডহিটিং ব্যাটিংও করেছেন। সামনের বিশ্বকাপে তিনিই হতে পারেন বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড।

মোহাম্মদ মিথুন - জাতীয় দলে অভিষেক ২০১৪ সালে হলেও পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা না থাকায় খেলতে পারেননি ২০১৫ বিশ্বকাপে। কিন্তু এখন মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসা তিনি। সব শেষ নিউজিল্যান্ড সফরে কঠিন পরিস্থিতিতে টানা দুই ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। বিশ্বকাপেও তার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।

লিটন কুমার দাসও পরীক্ষিত এক ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে তার সেঞ্চুরিটি ভোলার নয়।

ঘরোয়া লিগে ধারাবাহিকতার জন্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। কন্ডিশনের কথা বিবেচনা করে সুইং বোলিংয়ের জন্য নেওয়া হয়েছে পেসার আবু জায়েদ রাহীকে। একাদশে সুযোগ পেলে দুই তরুণও দেখাতে পারেন ক্যারিশমা।

 

রুবেলের ক্যারিশমা

দুই দুটি বিশ্বকাপে খেলেছেন রুবেল হোসেন। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে আহামরি কিছু করতে না পারলেও ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে তার শেষ স্পেলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টিকিট পায় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে সেটিই ছিল রুবেলের সেরা বোলিং। এবারও ক্যারিশম্যাটিক কিছু ঘটানোর লক্ষ্যে ইংল্যান্ড যাচ্ছেন।

সাব্বিরের হাফ সেঞ্চুরি

২০১৫ বিশ্বকাপে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন সাব্বির রহমান। বলার মতো বড় ইনিংস নেই বললেই চলে। বিশ্বকাপ স্মৃতি বলতে মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫৩ রানের ইনিংসটি। তবে এবার দারুণ ফর্মে রয়েছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। সবশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে দারুণ একটি সেঞ্চুরি করেছেন। প্রিমিয়ার লিগেও রান পেয়েছেন জাতীয় দলের এই তারকা।

সাদামাটা সৌম্য

২০১৫ বিশ্বকাপে সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্স ছিল খুবই সাদামাটা। ৬ ম্যাচে ২৯.১৭ গড়ে করেছেন ১৭৫ রান। একটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছেন তার। তবে এবার ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন জাতীয় দলের এই তারকা ব্যাটসম্যান। আগেই প্রিমিয়ার লিগে ডাবল সেঞ্চুরি করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বকাপেও তার এমন আগ্রাসী চেহারা দেখতে চান সমর্থকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর