ব্যাডমিন্টন আর সিলেট, একই সুতোয় গাঁথা। সিলেটের শাটলারদের বাদ দিয়ে হিসেব কষলে বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন হয়ে যাবে জৌলুসবিহীন। হাল সময়ের জাতীয় ও সামার র্যাঙ্কিংয়ের ফলাফলও বলছে এমনটাই। দেশের র্যাঙ্কিং চার্টের উপরের নামগুলো সিলেটের। ডিসেম্বরে ‘হিমালয় দুহিতা’ নেপালে সাফ গেমসের জন্য অনুশীলন ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ৮ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৫ জনই সিলেটের। দেশের হয়েও তারা দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে করে আসছেন প্রতিনিধিত্ব। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ দেশের ব্যাডমিন্টনকে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব মনে করেন সিলেটের কৃতী শাটলাররা।
১৯ জুলাই শেষ হয়েছে ‘মেয়র চট্টগ্রাম ৩৬তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ’। জাতীয় এ টুর্নামেন্টেও জয়জয়কার ছিল সিলেটের শাটলারদের। পুরুষ এককে এবারও চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি নিজের দখলে রেখেছে মো. সালমান খান। চট্টগ্রাম থেকে রানারআপ ট্রফিটাও সিলেটে এসেছে গৌরব সিংহের হাত ধরে। পুরুষ দ্বৈতে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে খেলা সিলেটের কৃতী খেলোয়াড় জামিল আহমদ দুলাল ও রাহাত কবীর খালেদ জিতেন হ্যাট্রিক শিরোপা। আর মিশ্র দ্বৈতেও নারায়ণগঞ্জের শাপলা আক্তারকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সিলেটের খালেদ।
সাফল্য শুধু এ বছরের নয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় ব্যাডমিন্টনেও দাপট ছিল সিলেটের খেলোয়াড়দের। সে বছরও পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হন মো. সালমান খান। ২০১৮ সালের সামার র্যাঙ্কিংয়ের দুই ফাইনালিস্টই ছিলেন সিলেটের। গৌরব সিংহ চ্যাম্পিয়ন আর মাইবাম মাঙ্গাল রানারআপ ট্রফি নিয়ে ফিরেন ঘরে। ওই টুর্নামেন্টে পুরুষ দ্বৈতে সিলেট জেলা দলের হয়ে বগুড়ার আহসান হাবিব পরশকে সঙ্গে নিয়ে ট্রফি জেতেন সিলেটের এবাদুল হক চৌধুরী সোহেল।আরেকটু পেছনেও যদি তাকানো যায় তবুও দেখা যাবে ব্যাডমিন্টনে সিলেটের জয়জয়কার। ২০১৭ সালে পুরুষ এককের রানারআপ ছিলেন এনামুল হক এনাম। আর পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালিস্ট দুদলই ছিল সিলেটের। ওই বছর পুরুষ দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জামিল আহমদ দুলাল-রাহাত কবীর খালেদ জুটি আর রানারআপ হয়েছিল এবাদুল হক চৌধুরী সুহেল-জয়নাল আবেদীন জুটি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়নি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। এর আগের বছর ২০১৪ সালে পুরুষ এককে রানারআপ হয়েছিলেন ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন সিলেটের এনামুল হক এনাম। আর পুরুষ দ্বৈতে ফাইনাল খেলে সিলেট জেলা দলের দুই জুটি। ওই ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাহাত কবীর খালেদ-সালেহ আহমদ শ্যামল জুটি। আর রানারআপ হয় জয়নাল-সুহেল জুটি।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকেও বাংলাদেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে এনেছেন সিলেটের কৃতী শাটলাররা। ২০১০ ও ২০১৬ সালে সাফ গেমসে ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ পদক জিতে বাংলাদেশ। ২০১০ সালে সাফ গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী টিমে ছিলেন সিলেটের এনামুল হক এনাম ও জামিল আহমদ দুলাল। আর ২০১৬ সালের টিমে এনাম, দুলালের সঙ্গে ছিলেন খালেদও।
শুধু এনাম, দুলাল, খালেদ, সালমানরাই নয়; একসময় জাতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা হিসেবে সিলেট অঞ্চলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আহমদ জুলকারনাইন, লোকমান আহমদ, আবু আইয়ূব ও আজাদুর রহমান আজাদরা। তাদের অনুপ্রেরণাই মূলত সিলেট হয়ে ওঠে ব্যাডমিন্টনের উর্বর চারণভূমি।