রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডমিঙ্গোকে বেছে নিল বিসিবি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডমিঙ্গোকে বেছে নিল বিসিবি

মাইক হেসনের সম্মতি পেতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে বিসিবি। অপেক্ষা করেছে মিকি আর্থারের সবুজ সংকেতের। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচ হতে অপারগতা প্রকাশ করেননি দুজনের কেউই। কিন্তু পারিশ্রমিকের দাবি ছিল আকাশছোঁয়া। তাদের দাবি পূরণ সম্ভব নয় বলে বাধ্য হয়ে পিছু হটে ক্রিকেট বোর্ড। এতে দরজা খুলে যায় রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গোর। বিসিবির সব শর্ত পূরণ করতে এক পায়ে রাজি বলেই সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহদের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কোচ ডমিঙ্গো। টাইগারদের দায়িত্ব নিতে ২১ আগষ্ট আসছেন সাবেক প্রোটিয়াস কোচ। তার সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছে বিসিবি এবং স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন স্টিভ রোডসের। টাইগারদের পাঁচজন কোচিং স্টাফের একজন বাদে সবাই দক্ষিণ আফ্রিকান। হেড কোচ ডমিঙ্গো ছাড়া বাকি তিনজন ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি, পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টে ও ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। স্পিন কোচ নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ড্যানিয়েল ভেট্টরি। ডমিঙ্গোর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ৫-৯ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট।

সেমিফাইনালের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ফিরেছে সাকল্যে তিন জয় নিয়ে। ১০ দলের আসরে আট নম্বর পজিশনে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বিসিবি। তাই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় রোডসকে। অথচ ১১ টেস্ট ও ৯ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞ ইংলিশ ভদ্রলোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গত বছর চন্ডিকা হাতুরাসিংহের বিদায়ের পর। রোডসের বিদায়ের পর তার শূন্যস্থান পূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে বিসিবি। হেড কোচ ছাড়াই শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। কোচ ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তখন থেকেই বিসিবি মরিয়া কোচ নিয়োগে। ৮ আগষ্ট বিসিবির কাছে সাক্ষাৎকার দেন ডমিঙ্গো। তার প্রেজেন্টেশনে সন্তুষ্ট হন বিসিবি সভাপতি। তারপরও বিসিবি আলাপ করেছেন হেসন, আর্থার, এন্ডি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ট ফ্লাওয়ারসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে। কিন্তু কেউই পূর্ণ সময় দিতে পারবেন না বলে জানান। এছাড়া আর্থিক বিষয়টি বড় বাঁধা ছিল। শোনা যায় মাসিক বেতন অর্ধ লাখ ডলারের উপর চেয়েছেন হেসন। আর্থার চেয়েছেন প্রায় অর্ধ লাখ ডলার চেয়েছেন। সে হিসেবে ডমিঙ্গোকে পানির দরে নিয়েছে বিসিবি। গতকাল ডমিঙ্গোর নাম ঘোষণার সময় বিসিবি সভাপতি ভূমিকা রেখে বলেন, ‘দলকে পূর্ণ সময় দিতে পারেন এমন একজন কোচ চেয়েছি আমরা। সেটা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ডমিঙ্গো। তাই তাকেই কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। যদিও কোচ হিসেবে আরও কয়েকজন বিশ্বমানের কোচের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট মেয়াদে সময় দিতে পারবেন বলে জানান। সেজন্য তাদের সঙ্গে আলাপ বেশিদূর এগোয়নি।’ ডমিঙ্গোকে দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ডমিঙ্গো সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেছেন, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দুর্বার। অথচ দেশের বাইরে তেমন সাফল্য পায় না। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ভারতে। পরিচিত কন্ডিশন। আমরা সেই বিষয়টাকে মাথায় রেখেই এগোতে পারব।’ শুধু জাতীয় দল নয়, সময় ও সুযোগ পেলে ‘এ’ দল, হাইপারফরমেন্স (এইচপি) ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলকেও কোচিং করাবেন তিনি।

ক্যারিয়ারে খুব ভালো ক্রিকেটার ছিলেন না তিনি। খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় সারির লিগ।  বড় ক্রিকেটার না হলেও কোচিংয়ে বেশ অভিজ্ঞ। সবাই যে বয়সে ক্রিকেট খেলেছেন, সে বয়সে তিনি কোচিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রভিন্স যুব দলের দায়িত্ব নেন। এরপর তিনি কোচিং করিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৯, ‘বি’ দল ও ‘এ’ দলকে। ২০০৫ সালে দেশের সেরা ওয়ারিয়র্সের দায়িত্ব পান ডমিঙ্গো। ২০১২ সালে গ্যারি  কার্স্টেন দায়িত্ব নেন দক্ষিণ আফ্রিকার। কার্স্টেন দায়িত্ব নিয়েই সহকারী করেন ডমিঙ্গোকে। ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ দলের হেড কোচ হন ডমিঙ্গো। কার্স্টেন বিদায় নিয়ে তিন সংস্করণের কোচ হন তিনি। তার কোচিংয়ে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডমিঙ্গোর কোচিংয়ে ১৩টি টেস্ট সিরিজের ৮টি, ২২ ওয়ানডে সিরিজের ১৪টি এবং ৪২ টি-২০ ম্যাচের ২৩টিতে জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোচিং করিয়ে বিদায় নেন ডমিঙ্গো। একজন সফল কোচকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। উপমহাদেশের কোনো দলের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার ক্যারিয়ার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত রাসেল ডমিঙ্গো, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য অনেক সম্মানের। দিন দিন উন্নতি করতে থাকা দলটিকে আমি চেষ্টা করব টার্গেটে পৌঁছাতে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নিয়ে’।

রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়োগ দিয়ে আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিসিবি। তবে তিনি কতদিন দায়িত্বে থাকবেন, এটাই এখন বড় প্রশ্ন। 

সর্বশেষ খবর