সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টেস্টে এখনো শিক্ষানবিশ!

টেস্টে এখনো শিক্ষানবিশ!

একাই লড়াই করছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেও হার মানতে হলো। মুশফিকের আউটের পর পরই ভারতীয় শিবির ম্যাচ জয়ের আগাম উৎসবটা সেরে নিয়েছিল। দিবারাত্রির টেস্টে তৃতীয় দিনের শুরুতেই পরাজয়। ইডেন গার্ডেনে গোলাপি বলের অভিজ্ঞতা খুব বাজে হলো টাইগারদের। তবে মুশফিকের ৭৪ রানের ইনিংস বহুদিন মনে রাখবে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা -এএফপি

উমেশ যাদবের বাউন্সারে মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন ইমরুল। মোহাম্মদ সামির বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পেয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন লিটন। ঈশান্ত শর্মার বাউন্সারে পালিয়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা মিথুনের। ‘নন্দনকানন’ ইডেনে ভারতীয় পেসারদের বিপক্ষে এসব ছবি নাজেহাল টাইগার ব্যাটসম্যানদের। দুই ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা বাউন্সারে সব মিলিয়ে দশবার আঘাত পেয়েছেন হেলমেটে, কাঁধে ও হাতে। অথচ সোয়া দুদিনে ইনিংস ও ৪৬ রানে লজ্জাজনক হারের পরও নিজেদের টেকনিক্যাল দুর্বলতার কথা স্বীকার করেননি বাংলাদেশের ১১ নম্বর টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। উল্টো জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল উন্নতির জন্য তাদের আরও শিখতে হবে। লজ্জার হারে বিমর্ষ না হয়ে ইন্দোরের পর কলকাতা থেকে শিখে যাওয়া কাজে লাগাবেন আগামী বছরের ১০ টেস্টে। শতক টেস্ট পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। এখনো শেখার কথা বললেন অধিনায়ক। তাহলে শিখতে আর কত দিন লাগবে?      

ইডেনে ভারতীয় পেসারদের সাঁড়াশি আক্রমণে মুমিনুলদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, বাঘের খাঁচায় তাদের ছেড়ে দিয়েছে কেউ। ধেয়ে আসা বুলেট গতির বলগুলো থেকে জানপ্রাণ চেষ্টা করছেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু বাঘের থাবা থেকে বাঁচতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। গতি, সুইং ও বাউন্সারের বিপক্ষে এতটাই নাজেহাল হচ্ছিলেন মুমিনুল, মিথুন, সাদমানরা, তাদের সামর্থ্যরে উপমা দিতেও ভয় পাচ্ছিলেন ধারাভাষ্যকাররা। কিন্তু টাইগার অধিনায়ক কোনোভাবেই নিজেদের টেকনিক্যাল দুর্বলতার কথা স্বীকার করেননি, ‘আমার চোখে টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। টেকনিকের উন্নতির শেষ নেই। আমার মনে হয়, আমাদের সবার উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সবার টেকনিক্যাল ও টেকটিক্যাল উন্নতির চেষ্টা করতে হবে।’

ইন্দোরে হার আড়াই দিনে। চারশ বছরের পুরনো কলকাতায় হারল মাত্র সোয়া দুদিনে। স্বাগতিক দলের বিপক্ষে গতকাল মুমিনুল বাহিনী প্রতিরোধ গড়েছিলেন মাত্র ৪৭ মিনিট। টিকেছিলেন মাত্র ৫২ বল। রান যোগ করেন আগের দিনের সঙ্গে আরও ৪৩। প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসের সংগ্রহ ১৯৫। লজ্জাজনক হারের পর নিজেদের টেকনিক্যাল সমস্যা না থাকার কথা বললেও হারের অজুহাত অবশ্য দেননি মুমিনুল, ‘পেশাদার ক্রিকেটারদের অজুহাত দেখানোর কোনো মানে নেই। হারের জন্য আমি কোনো অজুহাত দেখাচ্ছি না। দল হিসেবে ভালো করতে পারিনি। একটা জুটিও গড়তে পারিনি। মুশফিক ভাই ও রিয়াদ ভাইয়ের মধ্যে একটা জুটি হয়েছিল। যদি এ রকম অনেকগুলো কিংবা এর চেয়েও বড় কয়েকটি জুটি হতো, তাহলে হয়তো ওদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারতাম। সব মিলিয়ে আমরা খুবই বাজে ব্যাটিং করেছি।’

গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্টে টাইগারদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। মুমিনুলরা দুই ইনিংসে রান করে ৩০১ ( ১০৬+১৯৫) এবং ওভার খেলেন ৭১.৪ (৩০.৩+৪১.১)। প্রথম ইনিংসে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক লড়েছেন একা। ভারতীয় বোলারদের পাল্টা আক্রমণে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২১ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। যাদবের বলে সাজঘরে ফেরার আগে নামের পাশে লিখেন ৭৪ রানের লড়াকু ইনিংস। সাবেক অধিনায়ক ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা একত্রে করেছেন ১২১ রান! দলের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না হলেও বোলারদের নিয়ে হতাশ হননি অধিনায়ক, ‘দল হিসেবে আমরা ভালো খেলিনি। ব্যাটিং ভালো হয়নি। বোলারটা মোটামুটি বোলিং করেছে।’ এরপরই টাইগার অধিনায়ক উন্নতির কথা বলেন। শেখার কথা বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের উন্নতির অনেক জায়গা আছে। সামনের বছর অনেক খেলা আছে আমাদের। এসব জায়গায় আমরা যদি উন্নতি করতে পারি, সেখানে ভালো করতে পারব। শেখার শেষ নেই।’

বাংলাদেশের টেস্ট খেলার বয়স ১৯ বছর। ২০ বছরে পা দিয়েও শিখছে। হাতে গোনা দুই-তিনটি টেস্ট ছাড়া প্রায় সব ম্যাচেই অগোছালো ক্রিকেট উপহার দেয় টাইগাররা। ইডেনে গোলাপি বলে ভারতের বিপক্ষে সুর, তাল ও লয় হারিয়ে অগোছালো ক্রিকেট খেলেছে দল। এজন্য অনেক বেশি টেস্ট না খেলার কথা বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘টেস্ট আমরা নিয়মিত খেলি না। সামনের বছর আমাদের ১০টি টেস্ট আছে। আমরা যখন টানা টেস্ট ম্যাচ খেলব তখন এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।’

বাংলাদেশের মতো ভারতও এই প্রথম গোলাপি বলে টেস্ট খেলেছে। গোলাপি বলের বিপক্ষে বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, চেতেশ্বর পুজারাদের এতটা বেসামাল মনে হয়নি। যতটা বেহাল হয়েছেন মুমিনুল, ইমরুল, সাদমান, মাহমুদুল্লাহ, মিথুনরা। সোয়া দুদিনে হেরে যাওয়া মুমিনুল স্বীকার করেন গোলাপি বলে চ্যালেঞ্জের কথা, ‘লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। নতুন বলে চ্যালেঞ্জটা একটুও বেশিই। যদি নতুন বলটা ঠিকঠাক সামলাতে পারতাম, তাহলে আরও ভালো করতাম। গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ আমরা নিতে পারিনি।’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১০৬/১০ ও ১৯৫/৯।

ভারত : ৩৪৭/৯ (ডিক্লে.)

ফল : ভারত ইনিংস ও ৪৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : ইশান্ত শর্মা (ভারত)

ম্যান অব দ্য সিরিজ : ইশান্ত শর্মা (ভারত)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর