সাগরিকায় কাল মাত্র ৫৭ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন থান্ডারের আন্দ্রে ফ্লেচার। ৩৮ বলে ৯০ রান করেন জনসন চার্লস। দুই ক্যারিবীয় তারকার তান্ডবে ২৩২ রান করে সিলেট
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কিংবা রূপসা থেকে পাথুরিয়া-শীতের তীব্রতায় কাঁপছে পুরো দেশ। কিন্তু কাল সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাঘরা কাঁপল বজ্রপাতের কবলে পড়ে!
তিন ম্যাচে টানা জয় পাওয়া মুশফিকুর রহিমের ‘অপ্রতিরোধ্য’ খুলনা টাইগার্সকে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিল সিলেট থান্ডার। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন আন্দ্রে ফ্লেচার। এছাড়াও গতকাল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রেঞ্জার্স।
থান্ডার শব্দের বাংলা অর্থ ‘বজ্রপাত’। নামের সঙ্গে মিলে সিলেট থান্ডারের স্লোগান ‘ব্যাটে-বলে বজ্রপাত’। দলটির কোচের দায়িত্বও দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক মারকুটে ব্যাটসম্যান খুনে মেজাজের হার্শেল গিবসের ওপর! কিন্তু নামের সঙ্গে পারফরম্যান্সের কোনো মিল ছিল না! টানা চার ম্যাচে হার। অবশেষে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঘুম ভাঙল সিলেটের।
প্রথম তিন ম্যাচে বাঘের (খুলনা টাইগার্স) গর্জনে রীতিমতো উড়ে গিয়েছিল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, আন্দ্রে রাসেলের রাজশাহী রয়্যালস ও রংপুর রেঞ্জার্স। সেই দলটাই কাল ধরাশায়ী হলো পয়েন্ট তালিকার তলানিতে পড়ে থাকা দল সিলেট থান্ডারের কাছে।
সাগরিকায় কাল মাত্র ৫৭ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন থান্ডারের আন্দ্রে ফ্লেচার। ৩৮ বলে ৯০ রান করেন জনসন চার্লস। দুই ক্যারিবীয় তারকার তা-বে ২৩২ রান করে সিলেট। এবারের আসরে দলীয়ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, আর বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ।
জয়ের জন্য রানের পাহাড় টপকাতে নেমে ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা টাইগার্সের ইনিংস। এ ম্যাচেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন প্রোটিয়া তারকা রাইলি রুশো। চার ম্যাচে এখন তার তিন হাফ সেঞ্চুরি। সব মিলে ২২৪ রান। গত আসরের মতো বিপিএলে এবারও রুদ্ধশ্বাসে চলছে ‘রুশো এক্সপ্রেস’!
হারতে হারতে যেন দেয়ালে পীঠ ঠেকে গিয়েছিল থান্ডারের। এই ম্যাচে জিততে না পারলে রীতিমতো খাদে পড়ে যেত দলটি। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের পথে এগিয়ে যেত আরেক ধাপ! তবে সব শঙ্কা দূর করে প্রবল পরাক্রমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি।
কাল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন থান্ডারের দুই ক্যারিবীয় তারকা ফ্লেচার ও চার্লস। তবে বাইশগজে ফ্লেচারের আগে তা-ব শুরু করেন চার্লস। খুলনার বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে একের পর এক ছক্কা-চার মারতে থাকেন।
ফ্লেচার হাফ সেঞ্চুরি করেন ২৮ বলে, চার্লস সেখানে ২৫ বলে। মাত্র ৪৯ বলেই দলীয় সেঞ্চুরি পূরণ হয়ে যায়। একটা সময় দুই ব্যাটসম্যানের মধ্যে বাইশগজে শুরু হয়ে যায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা- কে কার চেয়ে বেশি বাউন্ডারি হাঁকাবেন! সাগরিকার দর্শকরা প্রাণ ভরে উপভোগ করছিলেন দুই ক্যারিবীয় তারকার ব্যাটের ঝড়!
সেঞ্চুরির খুব কাছে যাওয়ার পর থামতে হয় চার্লসকে। শাহিদুল ইসলামের স্লোয়ার বুঝতে না পারায় বল গিয়ে লাগে তার প্যাটে। লেগ বিফোর হয়ে যান সেন্ট লুসিয়ার এই তারকা। রিভিউ নিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। তার ৩৮ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি ছক্কা এবং ১১টি চারের মার। স্ট্রাইকরেট ২৩৬.৮৪।
চার্লসের আউট থেকে যেন খানিকটা শিক্ষা নিয়ে ‘তুলনামূলক’ ধীরগতিতে এগুতে থাকেন ফ্লেচার। বাড়তির সর্তকায় সেঞ্চুরিও আদায় করে নেন। তারপরও গ্রানাডার এই তারকা শতক পূরণ করতে খেলেছেন মাত্র ৫৩ বল। সিলেট থান্ডারের দলীয় ২০০ রান হয়েছিল ১০০ বলে (১৬.৪ ওভারে)। স্লগ ওভারের বাকি ৩.২ ওভারে (২০ বল) স্বাভাবিক গতিটা থাকলেও বিপিএলে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা (রংপুর রাইডার্স ২৩৯ রান) ভেঙে যেত। কিন্তু শেষের ওভারগুলোতে ততটা সুবিধা করতে পারেননি থান্ডারের পরের ব্যাটসম্যানরা। তারপরও ২৩২ রানের স্কোরটাই বা কম কিসে, খুলনা যেখানে আটকে গেছে মাত্র ১৫২ রানই! সিলেটের প্রথম জয়ের দিনে খুলনার প্রথম হার! থান্ডার ফিরে পেল মোমেন্টাম, টাইগার্স কি তবে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলল? ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে খুলনার ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম রসিকতা করে বললেন, ‘এই হারে চিন্তার কিছু নেই। বিপিএল জমিয়ে দিলাম!’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট : ২৩২/৫ (২০ ওভার) (ফ্লেচার ১০৩*; ফ্রাইলিংক ২/৩৭)।
খুলনা : ১৫২/১০ (১৮.৩ ওভার) (রুশো ৫২; কৃষমার ৩/৩৭)।
ফল : সিলেট ৮০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : আন্দ্রে ফ্লেচার।
চট্টগ্রাম : ১৬৩/৭ (২০ ওভার) (ফার্নান্দো ৭২; মুস্তাফিজ ২/২৩)।
রংপুর : ১৬৭/৪ (১৮.৪ ওভার) (গ্রেগোরি ৭৬*; রুবেল ২/৩৭)।
ফল : রংপুর ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : গ্রেগোরি।