দেশকে শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসানো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী তার মাতৃভূমি রংপুরে পৌঁছেছেন। গতকাল দুপুরে রাস্তার দুই ধারে শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল ছিটিয়ে তাকে বরণ করে নেন। এর আগে ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এসে পৌঁছালে রংপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে শতাধিক মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন গাড়ির একটি শোভাযাত্রা প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করে সংবর্ধনা মঞ্চে নিয়ে আসেন তাদের প্রিয় আকবরকে। তার আগমন ঘিরে সকাল থেকে উৎসবের আমেজ শুরু হয় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠসহ তার বাড়ি জুম্মাপাড়ায়। চিরচেনা আকবরকে নতুন রূপে দেখতে ভিড় জমান ছোট-বড় সবাই। টাউন হল চত্বরের মূল ফটকের সামনে মেট্রোপলিটন পুলিশের সুসজ্জিত ব্যান্ড দলের বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে, ভক্তদের ছিটানো ফুলের পাপড়িসিক্ত ভালোবাসা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন ক্রিকেট-সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাট আকবর।
আকবর আকবর স্লোগানে যেমন উচ্ছ্বসিত রংপুর, তেমন ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামেও রঙিন হয়ে উঠেছে রংপুর। যেন ছোট-বড়-বয়সী মানুষের মাঝে আনন্দে উচ্ছ্বাসের দিন এসেছে। সকাল থেকেই আকবরের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করেন তারা।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এই মহানায়ক বোনের মৃত্যুর ১৯ দিনের মাথায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিশ্বকাপ শিরোপার আনন্দে ভাসিয়েছেন গোটা দেশকে। উনিশের হাত ধরে আকবর তা-বে ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শুনেছে বাংলাদেশের জুনিয়র টাইগারদের গর্জন। রচিত হয়েছে ক্রিকেট বাংলায় আকবরনামার গল্প।আকবরের নেতৃত্বে বিশ্বজয়ী সেই যুবারা ১২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশের মাটিতে ফিরে এক ঝলমলে ঐতিহাসিক সন্ধ্যায় অকল্পনীয় সংবর্ধনায় সংবর্ধিত হয়েছেন; যা সত্যি বিস্ময়ের, গর্বের আর স্মরণীয় করে রাখার।
সংবর্ধনা আয়োজন নিয়ে পশ্চিম জুম্মাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের আকবর বিশ্ব ক্রিকেট যুদ্ধে যে ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছে, তা বাংলাদেশের আগামীর উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিগন্তকে উন্মোচিত করেছে। আকবরের জন্য যেমন বাংলাদেশ গর্বিত, তেমন রংপুরের মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত। বীরোচিত অধিনায়ক আকবরকে আমাদের সন্তান হিসেবে ক্লাবের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হবে।’
আকবর শুরুতে মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও পরে বাড়ির পাশে বেগম রোকেয়া উচ্চবিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে নগরের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন। ক্লাস সিক্সে উঠে রংপুরের অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন। সেখানে অঞ্জন সরকারের হাত ধরে রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে তার ক্রিকেটের সত্যিকারের হাতেখড়িটাও হয়ে যায়। ২০১২ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ পান। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প তৈরি করেন আকবর। বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলে খেলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতাও হতে থাকে সমানতালে।
শুধু ক্রিকেট নিয়েই অবশ্য পড়ে থাকেননি আকবর। পড়াশোনাটাও দারুণভাবে করেছেন। ২০১৬ সালে তার এসএসসি পরীক্ষার সময় চলছিল প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। তখন খেলা ও লেখাপড়া দুটিই সামলেছেন দারুণ মনোযোগে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি। এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৪২।
সবকিছুতে ভালো করার ধারাবাহিকতায় এবার বাংলাদেশ যুব দলের নেতৃত্বের ভার তার কাঁধে। দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্বের ভার সামলে চমক দেখালেন আকবর আলী।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত ফাইনালে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে নেয় বাংলাদেশ দল। এই প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।