রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
শুভ জন্মদিন জেসন গিলেস্পি

এক নাইটওয়াচম্যানের গল্প

আজ ১৯ এপ্রিল। এই দিনটি গিলেস্পির জন্য বিশেষ কিছু। ১৯৭৫ সালের এই দিনেই তিনি প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। তবে এই দিনে জন্ম হয়েছিল বিশ্বের আরও ৬৪ ক্রিকেটারের (ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলে)। তারাও ক্রিকেট খেলে আলোকিত করেছেন পৃথিবীকে। তবে জেসন গিলেস্পির বিষয়টি যেন আলাদা। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে অমর কীর্তি গড়ার জন্যই -স্পেশাল। শুভ জন্মদিন ‘দ্য গ্রেট নাইটওয়াচম্যান’!

মেজবাহ্-উল-হক

এক নাইটওয়াচম্যানের গল্প

দুই দশকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। বল হাতে বোলিং মার্কে গেলেই কাঁপন ধরে যেত ব্যাটসম্যানের বুকে। সেই আগ্রাসী বোলারই কিনা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের (টেস্ট) শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে এমন এক কীর্তি গড়লেন যা তাকে যেন ‘অমরত্ব’ দিয়ে দিল।

বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তিতুল্য পেসার জেসন গিলেস্পির কথা!

২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস। ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন নাইটওয়াচম্যানের সবচেয়ে বড় ইনিংস এটি। এই এক ইনিংসের কাছেই যেন তার উজ্জ্বল বোলিং ক্যারিয়ারটাও খানিকটা ম্লান হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে খেলা এই ইনিংসের জন্য ক্রিকেট বিশ্বে গিলেস্পির পরিচয় ‘দ্য গ্রেট নাইটওয়াচম্যান’!

কী ঘটেছিল স্মরণীয় সেই ‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া’ টেস্টে...

টাইগাররা টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। গিলেস্পি মাত্র ৫ ওভার বোলিং করেই সব ওলটপালট করে দেন। ২ মেডেন এবং ৩ উইকেট নেন।

নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের ওপেনার শাহরিয়ার নাফীসকে ব্রেট লি-র ক্যাচে পরিণত করেন। দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনকে পাঠিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে। নিজের চতুর্থ ওভারে আরেক ওপেনার জাভেদ ওমরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। গিলেস্পির তাণ্ডবে ইনিংসের শুরুতেই ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত আটকে যায় ১৯৭ রানে।

বিকালেই ব্যাট করতে নামতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। দিনের খেলা শেষ হওয়ার বেশ কয়েক ওভার আগে আউট হয়ে যান ওপেনার ম্যাথু হেডেন। ওয়ানডাউনে অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের ব্যাট করতে নামার কথা। কিন্তু পড়ন্ত বিকালে নিজে না নেমে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে পাঠিয়ে দেন গিলেস্পিকে। এরপর বাকিটা ইতিহাস...!

মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং শাহাদত হোসেনের গতি গিলেস্পিকে টলাতে পারেনি। এমনকি মোহাম্মদ রফিক ও আবদুর রাজ্জাক রাজের ঘূর্ণি জাদুর বিরুদ্ধেও বুক চিতিয়ে ব্যাটিং করেছেন।

একটু একটু করে হাফ সেঞ্চুরি... সেখান থেকে সেঞ্চুরি! তারপর ডাবল সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দিলেন গিলেস্পি। ক্যারিশম্যাটিক ওই ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও ২৬ বাউন্ডারির মার। ৪২৫ বল মোকাবিলা করেছেন। একজন পেসার হয়েও দেখিয়েছেন কী অসীম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন! ব্যাট হাতে বাইশগজে কাটিয়েছেন ৯ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট। নিজের শেষ টেস্টে একজন বোলার ব্যাটিংয়ের জন্য পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

পেসার গিলেস্পির ক্যারিয়ারও কিন্তু সোনায় মোড়ানো!

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭১ টেস্টে নিয়েছেন ২৫৯ উইকেট। ১৯৯৬ সালে তার সাদা পোশাকে অভিষেক। পরের বছর ইংল্যান্ড সফরেই লিডসে করে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।

রঙিন পোশাকেও গিলেস্পির ক্যারিয়ার আলোক ঝলমলে। তবে টি-২০ তিনি মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছেন। কিন্তু ৯৭ ওয়ানডেতে তিনি নিয়েছেন ১৪২ উইকেট। ক্যারিয়ারে তিনবার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। কেনিয়ার নাইরোবিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ২২ রানে ৫ উইকেটের ইনিংসটিই ছিল সেরা।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গিলেস্পির উইকেট সংখ্যা ৬১৩। এছাড়া লিস্ট-এ ম্যাচে নিয়েছেন ২৫৫ উইকেট। তার বর্ণাঢ্য বোলিং ক্যারিয়ার দিয়েই কিংবদন্তিদের কাতারে জায়গা পেতে পারেন।

ক্রিকেটার গিলেস্পি কোচ হিসেবেও দুর্দান্ত। খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেওয়ার দুই বছর পরেই শুরু করে কোচিং। প্রথমে জিম্বাবুয়ের একটি বয়সভিত্তিক দলের কোচ হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে আইপিএলের দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দেন। তারপর পুনে ওয়ারিয়র্সের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের নভেম্বরে ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারের কোচ হন। এরপর তিনি পাপুয়া নিউগিনের জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। বর্তমানে কাউন্টি ক্লাব সাসেক্সের প্রধান কোচ।

তবে বোলার কিংবা কোচ গিলেস্পিকে যেন ছাড়িয়ে গেছে এক ম্যাচের ‘নাইটওয়াচম্যান গিলেস্পি’। এক ডাবল সেঞ্চুরি তাকে বসিয়েছে এমন এক সিংহাসনে যেখানে ভবিষ্যতে আর কেউ বসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

আজ ১৯ এপ্রিল। এই দিনটি গিলেস্পির জন্য বিশেষ কিছু। ১৯৭৫ সালের এই দিনেই তিনি প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন। তবে ১৯ এপ্রিলে জন্ম হয়েছিল বিশ্বের আরও ৬৪ ক্রিকেটারের (ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলে)। তারাও ক্রিকেট খেলে আলোকিত করেছেন পৃথিবীকে। তবে জেসন গিলেস্পির বিষয়টি যেন আলাদা। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে অমর কীর্তি গড়ার জন্যই -স্পেশাল।

শুভ জন্মদিন ‘দ্য গ্রেট নাইটওয়াচম্যান’!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর