শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনায় সংকটে ফুটবল

এক দল বদলে দুই লিগ!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক দল বদলে দুই লিগ!

২৪ মার্চ থেকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রথম দফায় সিদ্ধান্ত ছিল ১৫ দিন লিগ না হওয়ার। পরে দেশে করোনাভাইরাস ভয়াবহ হয়ে উঠলে ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই অনির্দিষ্টকালের জন্য লিগ বন্ধ রাখা হয়। ক্লাবগুলো ক্যাম্প স্থগিত করে স্থানীয় খেলোয়াড়দের ছুটি দেয়। বিদেশিরা ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে ঢাকায় অবস্থান করছে। ইউরোপিয়ান লিগগুলো করোনাভাইরাসে স্থগিত রাখা হলেও এখন আবার দর্শকশূন্য অবস্থায় মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে। কোনো কোনো ক্লাব আবার অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান বা এশিয়ার অনেক দেশই লিগ শুরুর চিন্তাভাবনা করলেও বাংলাদেশের পেশাদার লিগের ভাগ্য কি আছে? ফিফা জানে বাংলাদেশের লিগ মাঠে গড়ালেও তা সময় লাগবে। তাই দুই মৌসুমের জন্য খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের বিষয়টি সমন্বয় করতে। এখানে ফিফা কোনো গাইডলাইন দেয়নি। খেলোয়াড় ও ক্লাব কর্মকর্তারা আলোচনা করেই সবকিছু চূড়ান্ত করবে। কথা হচ্ছে আলোচনাটা করবে কীভাবে? এ ধরনের নির্দেশনা তো কারো জানা নেই। এমন পরিস্থিতির শিকার হবে কেউ তো ভাবেনি।

প্রশ্ন হচ্ছে বাফুফে বা লিগ কমিটির ভালোভাবে জানা আছে বাংলাদেশের কোন ক্লাবের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। দীর্ঘদিন লিগ না হওয়ায় কোনো কোনো ক্লাবের মাঠে নামাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ক্লাব বাফুফেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে তাদের পক্ষে এবার লিগ খেলা সম্ভব নয়। আবার কেউ চাচ্ছে এক দলবদলেই নতুন লিগ চালু করা। বাফুফের কি উচিত ছিল না এমন নির্দেশনার পর ফিফার কাছে বাংলাদেশের বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরা? উল্টো কি না ক্লাবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। দলবদল ও ক্যাম্প চালাতে ক্লাবগুলোর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। তারপরও আবার লিগ মাত্র ছয় রাউন্ডে থাকা অবস্থায় স্থানীয়দের অর্ধেকের বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। বিদেশিরা বসে বসে মোটা অঙ্কের বেতন পাচ্ছেন। তাই ক্লাবগুলো চাচ্ছে অনির্দিষ্ট নয়, লিগ শুরুর সুস্পষ্ট তারিখ নির্ধারণ করতে। হতে পারে তা তিন বা চার মাস। তবুও মানসিকভাবে প্রস্তুত তো থাকতে পারবে। বিদেশিদের বেতন বন্ধ রেখে লিগ শুরুর পর ডাকা যাবে।

এ ব্যাপারে বাফুফে বা লিগ কমিটির ভাবনা কী? বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এমপি বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতি গোটা দুনিয়ায় পড়েনি। তাই আমাদের এককভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন। আগামীকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ক্লাব প্রতিনিধির সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব। ফুটবল ও আমাদের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কথা চিন্তা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব আশা রাখি। তাও সবকিছু নির্ভর করবে সরকারের অনুমতির ওপর।’

তিনবারের পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক মনজুর কাদের বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ওপর কারোর হাত নেই। তবে ফেডারেশন তো জানে দীর্ঘদিন লিগ না হওয়ায় আমরা কতটা ভয়াবহ সংকটে। স্থানীয়দের প্রায় ফুল পেমেন্ট করা হয়েছে। বিদেশিরা বসে বসে বেতন পাচ্ছে। এভাবে কত দিন চলবো? এই দুঃসময়ে বাফুফে ক্লাবগুলোর লাখ লাখ টাকার বকেয়াও দিচ্ছে না। অথচ এ নিয়ে নীরব কর্মকর্তারা। আমার ক্লাব ভালো পজিশনে ছিল। তারপরও বাফুফেকে বলছি ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত দিন যা আমাদের মানা সম্ভব। অযথা আর ঝুলিয়ে রাখবেন না।’

ঢাকা মোহামেডানের বাদল রায় বলেন, ‘ক্লাবগুলো ধ্বংসের মুখে। অথচ বাফুফে যেন তামাশায় মেতেছে। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সব সিদ্ধান্ত আবার আমাদের নিতে বলছেন। তাহলে তিনি চেয়ারে বসে আছেন কেন? আমরা স্পষ্ট শুনতে চাই লিগ হবে কি  হবে না। বকেয়া শোধ করবে না অথচ আমাদের অর্থ নষ্ট করবে এ অধিকার বাফুফের নেই।’ এবার লিগে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীই। সেই ক্লাবেরই সহ-সভাপতি অভিজ্ঞ সংগঠক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বাফুফে বা লিগ কমিটির দায়িত্বহীনতা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এই আপদকালীন সময়েও ক্লাবগুলোর বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে টু-শব্দ করছে না। অথচ তারা জানে আমাদের বিপদের কথা। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে করোনাভাইরাসে লিগ শুরু করাটা ঠিক হবে না। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারণ যে অবস্থা দেখছি সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এ অবস্থায় চলতি লিগ বাতিল করে আবার নতুনভাবে নতুন মৌসুমে শুরু করা। হতে পারে আগের দলবদল বহাল রেখেই লিগ শুরু করা। তা না হলে অনেক ক্লাবের মাঠে নামাটা মুশকিল হয়ে পড়বে।’

পেশাদার লিগের একবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘আমরা লিগ কমিটিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবারের লিগ বাতিল করতে। সামনে নতুনভাবে লিগ হোক। এভাবে লোকসান আর কত দেব। কষ্ট লাগে এমন সংকটের সময়ও বাফুফে ক্লাবগুলোর বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছে না।’ সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কেউ কেউ লিগ শুরুর কথা বলছি। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? কেউ কি ভেবে দেখেছেন তিন মাস পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাববে। আমরা বা আরও ২/৩টি ক্লাবের না হয় অর্থ আছে। বাকিদের তো মাঠে নামাটাই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় এবারের লিগ বাতিল ঘোষণা করে আগের দলবদল অটল রেখে নতুন মৌসুমে লিগ চালু করা। অনেকে হয়তো বলতে পারেন এক দলবদলে নতুন করে লিগ হয় কিভাবে? দেখেন আমাদের বা আরও কয়েকটি দলের সামনে আরও শক্তিশালী দল গড়া সম্ভব। কিন্তু অন্যদের কি হবে সেটাওতো ভাবতে হবে। ৪ কিংবা ৫ দলকে নিয়ে তো আর পেশাদার লিগ হয় না। হলেও আমরা খেলব না।’


মনজুর কাদের 

এই দুঃসময়ে বাফুফে ক্লাবগুলোর লাখ লাখ টাকার বকেয়াও দিচ্ছে না। অথচ এ নিয়ে নীরব কর্মকর্তারা। আমার ক্লাব ভালো পজিশনে ছিল। তারপরও বাফুফেকে বলছি ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত দিন যা আমাদের মানা সম্ভব। অযথা আর ঝুলিয়ে রাখবেন না


বাদল রায়

লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সব সিদ্ধান্ত আবার আমাদের নিতে বলছেন। তাহলে তিনি চেয়ারে বসে আছেন কেন? আমরা স্পষ্ট শুনতে চাই লিগ হবে কি  হবে না। বকেয়া শোধ করবে না অথচ আমাদের অর্থ নষ্ট করবে এ অধিকার বাফুফের নেই


তরফদার মো. রুহুল আমিন

যে অবস্থা দেখছি সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এ অবস্থায় চলতি লিগ বাতিল করে আবার নতুনভাবে নতুন মৌসুমে শুরু করা। হতে পারে আগের দলবদল বহাল রেখেই লিগ শুরু করা। তা না হলে অনেক ক্লাবের মাঠে নামাটা মুশকিল হয়ে পড়বে'


সালেহ জামান সেলিম  

আমরা লিগ কমিটিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবারের লিগ বাতিল করতে। সামনে নতুনভাবে লিগ হোক। এভাবে লোকসান আর কত দেব। কষ্ট লাগে এমন সংকটের সময়ও বাফুফে ক্লাবগুলোর বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছে না


মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী

আমরা কেউ কেউ লিগ শুরুর কথা বলছি। কিন্তু বাস্তবে তা কি সম্ভব? কেউ কি ভেবে দেখেছেন তিন মাস পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে। আমরা বা আরও ২/৩টি ক্লাবের না হয় অর্থ আছে। বাকিদের তো মাঠে নামাটাই সম্ভব নয়


এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর