ফুটবলকে বিদায় বলেননি। বিদায় বলেননি বসুন্ধরা কিংসকে। তবুও ছেড়ে যাচ্ছেন হৃদয়ের অংশ হয়ে যাওয়া প্রিয় ক্লাব ও প্রিয় আঙিনা বসুন্ধরা কিংস। জন্মভূমি কোস্টারিকায় ফিরে যাচ্ছেন প্রিয় বন্ধু মতিন মিয়া, জনি, ইমন বাবু, তপু বর্মণদের ছেড়ে। ড্যানিয়েল কলিনড্রেস- রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছেন মধ্য আমেরিকার অনিন্দ্যসুন্দর দেশ কোস্টারিকার হয়ে। ওই বছরই বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রায় ১৩ হাজার মাইল দূরের আরেকটি ফুটবলপাগল দেশ বাংলাদেশে আসেন ঝলক দেখাতে। বসুন্ধরার হয়ে গত ২১ মাসে তিনি শিরোপা জিতিয়েছেন তিনটি এবং রানার্সআপ করেছেন একটিতে। কাল ট্রফিগুলো ছুঁয়ে যখন ছবি তুলেছেন, তখন তার হাত দুটি প্রসারিত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার বিশালকায় ঈগলের মতো! যে শিকারি ঈগল ডানার ঝাপটায় লন্ডভন্ড করত শিকারকে। তেমনি পায়ের নিপুণ কাজে ফুটবলশিল্পী কলিনড্রেস ছিন্নভিন্ন করতেন প্রতিপক্ষকে। অসাধারণ একজন ফুটবলার কলিনড্রেস আনুষ্ঠানিক বিদায় নেননি। কিন্তু কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান তার অফিসকক্ষে কোচ অস্কার ব্রুজোনের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদায় জানিয়েছেন প্রিয় এই ফুটবলারকে। বিদায়বেলায় চিৎকার করে কাঁদেননি বিশ্বকাপ ফুটবলার। কিন্তু তার ভেজা চোখ স্পষ্ট করেছে, প্রিয় ক্লাব বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে যেতে হৃদয় ভেঙেচুরে খানখান হয়েছে। ফ্রেমে চিরস্থায়ী হতে ছবি তুলেছেন সবার সঙ্গে।
১৯৭৪ সাল থেকে ঢাকার ফুটবল মাতাচ্ছেন বিদেশি ফুটবলাররা। গত ৪৬ বছরে ঢাকার ফুটবলে প্রায় পৌনে ৭০০ ফুটবলার শিল্পিত ফুটবল খেলে বিমোহিত করেছেন ঢাকার ফুটবলপ্রেমীদের। খেলেছেন নাসের হেজাজি, সামির সাকির, করিম মোহাম্মদ, এমেকার মতো বিশ্বকাপ ফুটবলার। খেলেছেন ঝুকভ, নালজেগার, বিজন তাহিরি, প্রেমলাল, সনি নর্দেদের মতো সৃষ্টিশীল ফুটবলার। কিন্তু পুরো দলকে আগলে রেখে চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিতেই ট্রফি উপহার দিয়ে কলিনড্রেস নিজেকে ঠাঁই দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। তিনি হয়তো ব্রাজিলের রোনালদিনহোর মতো স্কিলফুল ফুটবলার ছিলেন না, কিন্তু ব্রাজিলিয়ান তারকার মতোই বল পায়ে রেখে আক্রমণ রচনা করে প্রতিপক্ষের রক্ষণব্যুহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করতেন। অসাধারণ সব ক্রস কিংবা চুলচেরা পাসে গোল করাতেন। আর প্রয়োজনে গোল করে দলকে রংধনুর সাত রঙে রাঙাতেন। তিনি ছিলেন রোনালদিনহোর মতো একজন কমপ্লিট ফুটবলার। তিনি ছিলেন বসুন্ধরা কিংসের রোনালদিনহো! বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান কাল বিদায়ী অনুষ্ঠানে একটি তথ্য দিলেন, যা বিস্মিত করেছে উপস্থিত জনদের। বিশ্বকাপ তারকা কলিনড্রেস বসুন্ধরার পক্ষে খেলেছেন ২৬ নম্বর জার্সি পরে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে গোলও করেছেন ২৬টি। প্রিমিয়ার লিগে ১৫টি, ফেডারেশন কাপে ৮টি এবং স্বাধীনতা কাপ, এএফসি কাপ ও শেখ কামাল আমন্ত্রমূলক টুর্নামেন্টে একটি করে গোল করেন।
এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে গুঁড়িয়ে দেয় বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচটিতে একাই চার গোল করেন দলের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হারনান বারকোস। এএফসি কাপে বাকি ম্যাচগুলোতে দুজনে জুটি বেঁধে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো ক্লাবকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারতেন। কিন্তু কলিনড্রেসের বিদায়ে সেটা আর হচ্ছে না। এর পরও কোস্টারিকান তারকা গতকাল স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন তিনি বাংলাদেশে খেললে বসুন্ধরা কিংসেই খেলবেন, ‘বাংলাদেশে আবার খেললে বসুন্ধরা কিংসেই খেলব।’ দুই মৌসুমে কলিনড্রেসের ভালো লেগেছে এ দেশের মানুষকে, ‘বাংলাদেশের মানুষ খুব বন্ধুবৎসল।’ বলেন, এখানকার পরোটা ও চিকেন বিরিয়ানি মিস করবেন তিনি।
গতকাল কলিনড্রেসকে সভাপতির স্বাক্ষরখচিত বসুন্ধরা কিংসের একটি জার্সি এবং বেশ কয়েকটি ছবিসহ একটি ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়।