মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
ইংলিশরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়

সাউদাম্পটনে ক্যারিবীয় কীর্তি

উইন্ডিজের সাফল্য ও ইংল্যান্ডের ব্যর্থতার নেপথ্যে...

মেজবাহ্-উল-হক

সাউদাম্পটনে ক্যারিবীয় কীর্তি

আটলান্টিকে ডুবে যাওয়ার আগে ১৯১২ সালে এই সাউদাম্পটন থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল ‘টাইটানিক’। করোনায় বদলে যাওয়া পৃথিবীতে সেই সাউদাম্পটনেই নতুন করে যাত্রা হলো ক্রিকেটের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার স্মরণীয় মুহূর্তকে ক্যারিবীয়রা জিতে অবিস্মরণীয় করে রাখলেও ইংলিশদের কাছে সাউদাম্পটন টেস্ট হয়ে থাকল টাইটানিক ডুবির মতোই বিষাদময়!

 

আটলান্টিকে ডুবে যাওয়ার আগে ১৯১২ সালে এই সাউদাম্পটন থেকেই যাত্রা শুরু করেছিল ‘টাইটানিক’। করোনায় বদলে যাওয়া পৃথিবীতে সেই সাউদাম্পটনেই নতুন করে যাত্রা হলো ক্রিকেটের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার স্মরণীয় মুহূর্তকে ক্যারিবীয়রা জিতে অবিস্মরণীয় করে রাখলেও ইংলিশদের কাছে সাউদাম্পটন টেস্ট হয়ে থাকল টাইটানিক ডুবির মতোই বিষাদময়!

১১৭ দিন পর মাঠে ফিরেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ম্যাচ শুরুর আগে ক্যারিবীয়দের খুব একটা পাত্তাই দেয়নি ইংলিশ মিডিয়া। স্বয়ং ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা মন্তব্য করেছিলেন, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ দিন টিকবে কিনা ইংলিশদের সামনে! সেই দলটাই সাউদাম্পটন টেস্ট জিতে যেন ক্রিকেটবিশ্বকেই চমকে দিল। ইংল্যান্ডের মাটিতে ক্যারিবীয়দের এই সাফল্য এবং স্বাগতিকদের ব্যর্থতার নেপথ্যে বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করেছে। সে বিষয়গুলো নিয়েই এই আলোচনা-

হোল্ডারের সামনে থেকে নেতৃত্ব

সাউদাম্পটন টেস্ট যেন সব কিছু উজাড় করে দিয়েছে ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন।

২০০তম উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। অধিনায়ক হিসেবে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক বেন স্টোকসকে দুই ইনিংসেই আউট করে আরেকটি কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এমন ঘটনা টেস্টে তিনবার করলেন হোল্ডার।

তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তো দলীয় সাফল্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই তিনি বীরত্বের সঙ্গে এনে দিয়েছেন অসাধারণ এক জয়।

স্টোকসের ভুল সিদ্ধান্ত

অধিনায়ক হিসেবে শুরুটা স্মরণীয় করার সুযোগ ছিল বেন স্টোকসের সামনে। কিন্তু দল হেরে যাওয়ায় উল্টো সমালোচনা শুনতে

হচ্ছে। দুটি সিদ্ধান্তের জন্য স্টোকসকে দোষারোপ করা হচ্ছে! বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচেও কেন তিনি টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিলেন? আর ফর্মের তুঙ্গে থাকা স্টুয়ার্ট ব্রডকে কেনই বা একাদশে রাখলেন না? প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ২০৪ রানেই প্যাকেট হয়ে যায় ইংলিশরা। এই প্রথম ইনিংসই পিছিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের। আর গতির কথা চিন্তা করে ব্রডের পরিবর্তে দলে নেওয়া মার্কউড তেমন নজর কাড়তে পারেননি।

গ্যালারিতে দর্শক না থাকা

গ্যালারিতে দর্শক থাকলে বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন স্বাগতিক ক্রিকেটাররা। সমর্থকরা খেলোয়াড়দের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেন। অন্যদিকে, স্বাগতিক দর্শকদের কারণে প্রতিপক্ষের দর্শকদের মনঃসংযোগেও বিঘœ ঘটায়। করোনাভাইরাসের কারণে এই প্রথম দর্শক ছাড়া টেস্ট অনুষ্ঠিত হলো ইংল্যান্ডে। ইংলিশরা ঘরের মাঠে বাড়তি সুবিধা পায়নি। এই বিষয়টি যেন দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে ক্যারিবীয়দের।

বাটলারের ব্যর্থতা

জস বাটলারের দলে থাকারই কথা ছিল না। শেষ ১১ টেস্ট তার গড় মাত্র ২১.৩৮। কিন্তু জো রুট না থাকায় নিয়মিত সহঅধিনায়ক বেন স্টোকসকে অধিনায়ক করা হয়। আবার ডেপুটি করা হয় বাটলারকে। সহঅধিনায়ক বলে একাদশেও জায়গা পেয়ে যান। কিন্তু সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি বাটলার। সাউদাম্পটন টেস্টের দুই ইনিংস মিলে তার স্কোর মাত্র ৪৪ রান। তবে সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন উইকেটের পেছনে, মাত্র ২০ রানের মাথায় ব্লাকউডের ক্যাচ ফেলে দিয়ে। সেই ব্লাকউডই কিনা ৯৫ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। বাটলারের ব্যর্থতা ক্যারিবীয়দের ম্যাচ জিততে দারুণ সহায়তা করেছে ইংলিশ মিডিয়ার খবর।

অধিনায়ক রুটের অনুপস্থিতি

জো রুট যতটা না অধিনায়ক তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনি টেস্টে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের প্রাণ। টপ অর্ডারে তার অভাব কেউ পূরণ করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে টপ অর্ডার ভালো করতে না পারার জন্যই মাত্র ২০৪ রানেই আটকে যায় ইংলিশদের ইনিংস। তা ছাড়া রুট না থাকায় স্টোকসের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে যায়। এটিও ইংলিশদের হারার পেছনে বড় কারণ। অন্যদিকে, রুট না থাকায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে ক্যারিবীয়রা।

ক্যারিশম্যাটিক গ্যাব্রিয়েল

দুই ইনিংস মিলে একাই ৯ উইকেট নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। প্রথম ইনিংসে ৪টি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি। দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। গ্যাব্রিয়েল সম্পর্কে অধিনায়ক হোল্ডার বলেন, ‘কী বলে যে শ্যাননের প্রশংসা করব বুঝতে পারছি না। সে এত ভালো করেছে যে বলার ভাষা নেই। দেখেছি, সাফল্যের জন্য সে খুবই ক্ষুধার্ত ছিল। দুর্দান্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছে।’

ইংলিশদের অতি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ও ক্যারিবীয়দের সাফল্যের ক্ষুধা-এই টেস্টে দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ম্যাচের প্রতিচ্ছবিও এমনই। সিরিজের আরও দুটি ম্যাচ আছে। তবে পরের দুই ম্যাচে জিততে না পারলেই বা কি? ঐতিহাসিক টেস্টে সাউদাম্পটনে ক্যারিবীয়রা তো ঠিকই তাদের ক্যারিশমা দেখিয়ে দিল। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে জয় পাওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এই মুহূর্তে ক্যারিবীয়দের আনন্দ- নিশ্চয়ই ডুবে যাওয়া টাইটানিক থেকে উদ্ধার পাওয়া যাত্রীদের মতো- ‘বাঁধভাঙা’!

সর্বশেষ খবর