বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাগ্য বিপর্যয়ে ৪ হাজার ফুটবলার

করোনায় করুণ হাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ভাগ্য বিপর্যয়ে ৪ হাজার ফুটবলার

করোনাভাইরাসে বিপর্যয়ের মুখে ফুটবল। দেশসেরা আসর পেশাদার, চ্যাম্পিয়ন্স, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পাইওনিয়ার লিগ সব কিছুই এখন বন্ধ। কবে মাঠে গড়াবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিছুদিন আগে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের বলেছেন, তার টার্গেট রয়েছে নভেম্বরে ঘরোয়া আসর মাঠে নামানোর।

ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এমপি বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবশ্যই ঘরোয়া আসর শুরু করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে ক্লাবগুলো প্রস্তুত কি না। আমি দেখছি ছয়টি দলের লিগ খেলার সামর্থ্য রয়েছে। বাকিরা কি পারবে? কেননা বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্লাবই পরিচালিত হয় ব্যবসায়ীদের ডোনেশনের ওপর। করোনায় দেশের অর্থনৈতিক যে বেহাল অবস্থা তাতে ব্যবসায়ীরা কতটুকু সহযোগিতা করবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ধরেন পাঁচটি ক্লাবই অর্থনৈতিক মন্দার কারণে খেলতে রাজি না হয় তাহলে কি পেশাদার লিগ আয়োজন করা সম্ভব? আমি খেলোয়াড়দের কষ্টটা বুঝি। তাদেরও বোঝা উচিত বাফুফে চাইলেও এখানে অনেক বাধা রয়েছে। কোরবানি ঈদের পর আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে বসব। তখন বোঝা যাবে ঘরোয়া আসর শুরু করা যাবে কি না। আমি আবারও বলছি লিগ শুরু করতে বাফুফের কোনো বাধা নেই।

এত গেল পেশাদার লিগের অনিশ্চয়তার কথা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং পাইওনিয়ার লিগই তো বন্ধ হয়ে গেছে। কত জন ফুটবলার বেকার হয়ে বসে আছেন তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন। অনেকের পরিবারই চলে ফুটবলের আয় থেকে। এ অনিশ্চিয়তা না কাটলে তো অনেকে না খেয়ে মরবেন। ইতিমধ্যে কোনো কোনো ফুটবলার রিকশা চালাচ্ছেন। কেউ বা আবার ভ্যানে ফল ও সবজি বিক্রি করছেন। সালাম মুর্শেদীও স্বীকার করেছেন ফুটবল নামাতে না পারলে সামনে আরও করুণ অবস্থা হবে।

ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক সালেহ জামান সেলিমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছয় বিভাগের লিগে ৪ হাজার ৫৩৫ জন নিবন্ধন করা ফুটবলার রয়েছে। অবশ্য বিদেশি বাদ দিলে পেশাদার লিগের সংখ্যা কমবে। সেরা একাদশ বা রির্জাভ বেঞ্চ সব ফুটবলারই দল থেকে কম বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এখন তো তারা পুরোপুরি বেকার। সেলিম অবশ্য জানান, ‘পেশাদার লিগে অধিকাংশ ক্লাব ফুটবলারদের ৮০ বা ৫০ ভাগ পেমেন্ট দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা হয়তো এক বছর স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবেন। আমার জানা মতে মাঠে না গড়ালেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অনেক ফুটবলারই পারিশ্রমিক পেয়েছে। হতাশার সুরেই তিনি জানান, বাকি লিগের তো খুবই করুণ হাল। এরাতো মূলত দরিদ্র ঘর থেকে আসে। এদের অনেকের আয় দিয়ে সংসার চলে। কতটা অমানবিক জীবনযাপন করছে একবার ভেবে দেখুন। অনেক কোচ ও সংগঠক অর্থ কষ্টে আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করছি। এভাবে তো হয় না।’ সেলিম বলেন, ‘এখানে বাফুফেরই বা দোষ  দেই কীভাবে। করোনা তো সব কিছু চুরমার করে দিয়েছে। তবে সভাপতি সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনি যত দ্রুত সম্ভব যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে বসেন। আমার বিশ্বাস ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে সাড়া পাওয়া যাবে। প্রায় ৫ হাজার ফুটবলারের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। এ বিপর্যয় না কাটাতে পারলে ফুটবলে তো ধস নেমে আসবে। ব্যবসায়ীরা যদি প্রণোদনা পান তাহলে ক্লাব বা ফুটবলাররা কেন পাবেন না। ফুটবলও তো দেশের বড় সম্পদ।

করোনাকালে ফুটবলে যে বেহাল দশা এ নিয়ে শঙ্কিত সাবেক ফুটবলারও। তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘দেশে নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলছে না। এখন জুনিয়র লিগের ফুটবলারদের না খেয়ে মরার উপক্রম। এতে তো পাইপ লাইনই অচল হয়ে যাবে। বাফুফের উচিত হবে ফিফা থেকে যে অনুদান পেয়েছে তা দরিদ্র ফুটবলারদের পেছনে ব্যয় করা। তা না হলে সামনে আর ফুটবলারই খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

 

সর্বশেষ খবর