‘অনেক আগেই ক্রীড়ানীতি হওয়া উচিত ছিল। তবে আশা করছি আমার সময়েই জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরি করা সম্ভব হবে। কেবল তাই নয়, শিগগিরই যেন বাস্তবায়ন শুরু হয় সেই চেষ্টাও করব।’
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জাতীয় ক্রীড়ানীতি হয়েছে ১৯৮৪ সালে। পাকিস্তানে ক্রীড়ানীতি আছে। শ্রীলঙ্কাতেও আছে। অথচ বাংলাদেশে নেই। স্বাধীনতার পরের বছরই বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৭৪’ নামক বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। গঠিত হয় বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল। নাম বদলে এটাই এখন ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল। দুই বছর আগে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট-১৯৭৪’র বিধানাবলী যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর প্রায় ৪৯ বছর হলেও জাতীয় ক্রীড়ানীতির মুখ দেখেনি বাংলাদেশ।
জাতীয় ক্রীড়ানীতি কী? একটি দেশের ক্রীড়ানীতি হচ্ছে দেশটির সব ধরনের খেলাধুলাকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করার মূলমন্ত্র। কিভাবে একটি খেলা বিশ্বমঞ্চে সুনাম অর্জন করবে। কোন পদ্ধতিতে ক্রীড়া সংস্থাগুলো চলবে। কোন পদ্ধতিতে অগ্রসর হলে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হবে। ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করেই ক্রীড়ানীতি তৈরি হয়। ভারত যেমন ১৯৮৪ সালে ক্রীড়ানীতি করার পর ২০০১ সালে আবার সেই নীতিতে সংযোজন-বিয়োজন করে। এর মাধ্যমে ভারত এখন বিশ্ব ক্রীড়ায় এক বিশেষ স্থান অর্জনের পথে ছুটে চলেছে।
বাংলাদেশে ক্রীড়ানীতি না থাকায় অসংখ্য অনিয়মে ভরে গেছে ক্রীড়াঙ্গন। একই ব্যক্তি বিভিন্ন ফেডারেশনে দায়িত্ব নিচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে দায়িত্বটা আঁকড়ে ধরে থাকছেন। কিন্তু ক্রীড়াক্ষেত্রে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। প্রতি বছরই বিরাট অঙ্কের অর্থ বাজেট থাকে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য (চলতি বছর ১৪৭৪ কোটি টাকা)। কিন্তু ক্রীড়ানীতি না থাকার কারণে সঠিকভাবে বাজেট কাজে লাগিয়ে দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব হচ্ছে না। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ ব্যাপারে বললেন, ‘জাতীয় ক্রীড়ানীতি থাকা খুব প্রয়োজন। দীর্ঘ প্রায় ৪৯ বছরেও আমরা ক্রীড়ানীতি করতে পারি নাই। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। অনেক আগেই ক্রীড়ানীতি করা উচিত ছিল। এই নীতি না থাকার ফলে কোনো সিস্টেমই গড়ে উঠে নাই আমাদের ক্রীড়া জগতে। যে যার মতো নিয়মনীতি ঠিক করে নিচ্ছে। ক্রীড়ানীতি হলে, একটা সিস্টেম গড়ে উঠবে। তখন আর কেউ নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারবে না। তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা ঠিক করতে পারব সবকিছু। কোন ধাপটা আগে আসবে কোনটা পরে আসবে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
তবে আশার বাণী শোনালেন জাহিদ আহসান রাসেল। শিগগিরই জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ এগিয়েছে। কমনওয়েলথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এসে টেকনিক্যাল দিকগুলো দেখার কথা রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরিতে কমনওয়েলথ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কারিগরি ব্যাপারেও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে উদ্যোগটা থমকে গিয়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই কমনওয়েলথের সঙ্গে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই মেইলের উত্তর পেয়ে যাব। আর না পেলেও আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে হলেও জাতীয় ক্রীড়ানীতি করতে হবে। কিছুদিনের মধ্যেই একটি সভা আছে। সেখানে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করব।’ তবে বিষয়টা বেশ জটিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, বিভিন্ন ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা করে সামনে এগুতে হবে। দীর্ঘ সময়ের ব্যাপারে। কঠোর পরিশ্রমেরও ব্যাপার।
অতীতে জাতীয় ক্রীড়ানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা শেষ হয়নি। এর কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ আহসান রাসেল বললেন, ‘অনেক আগেই ক্রীড়ানীতি হওয়া উচিত ছিল। তবে আশা করছি আমার সময়েই জাতীয় ক্রীড়ানীতি তৈরি করা সম্ভব হবে। কেবল তাই নয়, শিগগিরই যেন বাস্তবায়ন শুরু হয় সেই চেষ্টাও করব।’ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এরই মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। হয়ত তার হাত ধরেই জাতীয় ক্রীড়ানীতি গঠন এবং বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশে!