সুব্রত ভট্টাচার্য। ভারতীয় ফুটবলে একজন কোচ হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ও আই লিগে অনেক ফুটবলারই তার হাতে গড়া। এএফসি এ লাইসেন্সধারী এই কোচ বর্তমানে বাংলাদেশে। প্রিমিয়ার লিগের দল আরামবাগের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। গতকাল মুঠোফোনে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ও ভারতের ফুটবল নিয়ে অনেক কথাই বললেন। দুই দেশের ফুটবলে পার্থক্যটা তুলে ধরলেন। বললেন, ভারতে ফুটবলের প্রচারটাই বেশি হচ্ছে। এখানেই পিছিয়ে বাংলাদেশ। মানের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ।
মুম্বাই এফসি, গোয়া ভাস্কো এসসি, কলকাতা মোহামেডানের সাবেক কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রচারের উপর দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় ফুটবল। বাংলাদেশের ফুটবলও প্রচার থাকলে এ অবস্থায় পৌঁছাতে পারত। প্রচারের পাশাপাশি অবশ্য সংগঠনও দরকার। ভারত যেমন ক্লাব ফুটবলে এএফসি লাইসেন্সের সব শর্ত পূরণ করছে বাংলাদেশকেও তা করতে হবে।’ ভারতের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের একটা ব্যাখ্যাও দিলেন তিনি। ‘ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের উন্নতিটা একটা লোক দেখানো ব্যাপার মাত্র। ওরা শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, ম্যাকাও, মায়ানমারের মতো দলগুলোর সঙ্গে জয় পেয়ে র্যাঙ্কিং বাড়িয়েছে। কিন্তু বাহরাইন, ওমান, আরব আমিরাত ওদের সঙ্গে কী জয় পেয়েছে? বাংলাদেশও এমন ফিফা ফ্রেন্ডলি খেলে র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে নিতে পারে।’
প্রচারের দিকটায় বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন সুব্রত। তিনি বলেন, ‘ভারতীয় ফুটবলের খেলা এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আইএসএলের খেলা দেখছে সবাই। এশিয়ান লেভেলে এই লিগের খ্যাতি অনেক। এই চাকচিক্যটা দরকার। ফুটবলকে বিক্রি করতে না পারলে ভালো ফুটবলার আসবে কোথা থেকে। বাংলাদেশের যে মেধা আছে তা সবখানে ছড়িয়ে দিন। ফুটবল বদলে যাবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে ডাক পেলে বাংলাদেশের একজন ফুটবলার ছুটে যাবে। কারণ, সেখানে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে সবখানে।’ সুব্রত বলেন, ‘ভারতীয় ফুটবলে অনেক ক্লাবেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এখন যারা আইএসএল ও আই লিগে খেলছে তাদের অনেক ফুটবলারই আমার হাতে গড়া। ওদের সঙ্গে তুলনা করলে বলব, বাংলাদেশের ছেলেরা খুব পিছিয়ে নেই। তফাতটা সামান্য। এটা দূর করে বাংলাদেশও এগিয়ে যেতে পারে।’ এর প্রমাণও আছে। গত বছরের অক্টোবরে সল্ট লেকে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছেন জামাল ভূইয়ারা।বাংলাদেশের ফুটবলের বড় একটা বাস্তবতার কথাও বললেন তিনি। ‘বাংলাদেশের ফুটবলে অনেকাংশেই বৈষম্য আছে। যেমন সব ক্লাব একইরকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। পরিকাঠামো দিক দিয়ে এই বৈষম্য বেশ চোখে পড়ে। বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী, সাইফের মতো কয়েকটা দল বাদ দিলে বাকিদের অবস্থা ভালো নয়। এই পার্থক্যটা কাছাকাছি আনা গেলে ফুটবলীয় লড়াইয়ে প্রতিযোগিতা বাড়বে। আর প্রতিযোগিতা বাড়লে ফুটবলেরও উন্নতি হবে।’
কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘একটা দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। এখানে ক্লাব ফুটবলে ম্যাচের সংখ্যা বেশি। লিগে ম্যাচের সংখ্যা বেশি। তাছাড়া ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ আছে। আবার শেখ কামাল ফুটবলও হয়। ভারতে কিন্তু এত বেশি ম্যাচ নেই। বাংলাদেশে সবই আছে। এটাকে কেবল প্রচার করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে।’
ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ হিসেবে ২০১৭ সালে কাজ করে গেছেন সুব্রত ভট্টাচার্য। আরামবাগের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আরামবাগে মাত্র তো দায়িত্ব নিলাম। এখনো এই ক্লাবের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। তবে ঘানার দুজন ফুটবলার আমার সঙ্গে আলোচনা করেই নিয়েছে ক্লাব। তারা ভালো ফুটবলার। কয়েক সপ্তাহ পরে হয়তো দলের ব্যাপারে কিছু বলা যাবে।’