সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

১৭ বছর পর ট্রফি জয়ের হাতছানি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৭ বছর পর ট্রফি জয়ের হাতছানি

ফুটবলে জাতীয় দল ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতে। এটাই শেষ, দেড় যুগ হতে চলল ট্রফির দেখা নেই। ২০১০ সালে ঢাকায় আফগানিস্তানকে হারিয়ে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জিতলেও তা ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। ২০১৫ সালে জুনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে বাংলাদেশের কিশোররা। জাতীয় দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফাইনালে উঠলেও রানার্স-আপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। বাংলাদেশের শিরোপা তো দূরের কথা, এখন সাফে সেমিফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

২০১৮ সালে ঘরের মাঠেই নেপালের কাছে ০-২ গোলে হারে বাংলাদেশ টানা চারবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিতে খেলতেই পারেনি। নকআউট পর্ব থেকেই আউট। এমন ভরাডুবিতে হতাশা জাগাটা স্বাভাবিক। তবে ২০০৩ সালের পর ট্রফি জয়ের হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তাও আবার নেপালের বিপক্ষে। এটা ঠিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে এ ট্রফির তুলনা করা ঠিক হবে না। তবুও প্রীতিম্যাচের ট্রফির গুরুত্ব কম নয়। বাংলাদেশ-নেপালের দুই প্রীতিম্যাচ উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর জন্য। তাই তো ট্রফির নামকরণ মুজিবশতবর্ষ ট্রফি। টুর্নামেন্ট না হলেও মুজিবশতবর্ষের নামে সিরিজ জয়ের ট্রফি। ১৭ বছর পর ঘরে যেমন একটা বিজয়ের ট্রফি আসবে, তেমনি ফুটবল এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবে।

প্রথম ম্যাচে দারুণ জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। আগামীকাল ড্র বা ২-১ গোলে হারলেও ট্রফি জিতবে বাংলাদেশ। অধিনায়ক জামাল দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ড্র নয় আমাদের ভাবনায় শুধুই জয়। সত্যি কথা বলতে কি, শুক্রবার বাংলাদেশ যে অলআউট ফুটবল খেলেছে, তাতে জয়ের আশা করতেই পারে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথম লেগে জামালরা কোনো জয় পাননি। তবুও তাদের পারফরম্যান্স মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে। করোনাভাইরাসে দীর্ঘ আট মাস ফুটবলাররা অলস সময় কাটিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে শঙ্কা ছিল ফুটবলাররা মাঠে সুবিধা করতে পারবেন কিনা।

সেই শঙ্কা যে ভুল ছিল তা ম্যাচেই প্রমাণ মিলেছে। সুফিল, জীবনদের গতিময় খেলা দেখে মনেই হয়নি তারা দীর্ঘসময় মাঠের বাইরে ছিলেন। টিম বাংলাদেশ হয়ে অসাধারণ খেলেছে তারা। ফুটবলে এখন সালাউদ্দিন, চুন্নু, কায়সার, কানন, মুন্না বা আসলামদের মতো তারকা নেই। সত্যি বলতে কি, তারা খ্যাতি পেয়েছেন ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের কারণে। এখনকার ফুটবলাররা খেলেন সম্মিলিতভাবে। সেলফিস বলতে যা বোঝায় তা জাতীয় দলে নেই। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, দীর্ঘ সময় মাঠে না থাকায় ফুটবলারদের ফিটনেস নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তারা আমার ধারণা পাল্টে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে জয়ে ১০ লাখ টাকার বোনাস ঘোষণা করেছি। সিরিজ জিতলে আরও বড় পুরষ্কার পাবে তারা।

এমনিতে আত্মবিশ্বাসী। তারপর আবার সভাপতির এ ঘোষণায় আরও উজ্জীবিত জামালরা। এখনকার ফুটবলারদের নিয়ে শুধু সমালোচনাই হয়েছে। ভালো খেলেও প্রশংসা পায়নি। মনের ভিতর একটা জেদ তৈরি হয়েছে তাদের। কতটা অপমান, বলা হয়েছে, জার্সি নম্বর ছাড়া এখনকার ফুটবলারদের চেনাই যায় না। অথচ তারাই কিনা ফুটবলকে পাল্টে দিতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দেখে সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেছিলেন, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের এত গতিময় খেলা চোখে পড়েনি।

বাংলাদেশ তো ১৯৭৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছে। অনেক গোলও পেয়েছে। কিন্তু শুক্রবার নেপালের বিপক্ষে নাবীব নেওয়াজ জীবন ও মাহবুবুর রহমান সুফিল যে দুটো গোল করেছেন তা কি সেরা তালিকায় স্থান পায় না? এক ম্যাচ জিতে যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুড় তোলা যায় না। তেমনি উৎসাহ জোগাতে প্রশংসা করলে তো ক্ষতি নেই। নতুন করে জাগতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। তাদের তো অনুপ্রেরণা জোগানোর দায়িত্ব সবারই।

সর্বশেষ খবর