শিরোনাম
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মিরপুরে এক মহাকাব্যিক ম্যাচ

মেজবাহ-উল-হক

মিরপুরে এক মহাকাব্যিক ম্যাচ

ছবি : রোহেত রাজীব

মহাকাব্যিক এক ম্যাচ। দুই ইনিংস মিলে রেকর্ড ৪৪১ রান, দু-দুটি সেঞ্চুরি এবং এক হ্যাটট্রিক। মিরপুরের শেরেবাংলায় কাল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী এবং ফরচুন বরিশালের ম্যাচ যেন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেল। টি-২০এর ইতিহাসে এক ম্যাচে এত সব ঘটনা আর ঘটেছে কি না!

মিরপুরের উইকেটে নাকি রান-খরা! এ নিয়ে ব্যাটসম্যানদের আক্ষেপের শেষ নেই। কিন্তু সেই রান-খরার বাইশগজে কাল রীতিমতো রান-বন্যা হয়ে গেল।

রান উৎসবের এই ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর দেওয়া টার্গেট ২২১ রানের এভারেস্টে ফরচুন বরিশাল পৌঁছে যায় ১১ বল হাতে রেখে। ক্যারিশম্যাটিক এই জয়ে খাদের কিনারে থাকা বরিশাল যেন লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য একটি ‘লাইফলাইন’ পেয়ে গেল।

বাইশগজে গিয়েই কাল ঝড় তোলেন রাজশাহীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মাত্র ৫২ বলে বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের প্রথম সেঞ্চুরি আদায় করে নেন। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে রীতিমতো টর্নেডো হয়ে আবির্ভূত হন পারভেজ হোসেন ইমন। মাত্র ৪২ বলে খেলেন ১০০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।

বরিশালকে জয় এনে দেওয়ার পাশাপাশি নাজমুলের আলোক ঝলকানির মতো ১০৯ রানের ইনিংসটাকে যেন অনেকটাই ম্লান করে দেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, ব্যাটসম্যানদের উৎসবের এমন দিনেও হ্যাটট্রিক করলেন কামরুল ইসলাম রাব্বী। রাজশাহীর ইনিংসের শেষ ওভারে টানা তিন বলে আউট করেন নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল হোসেন শান্ত ও ফরহাদ রেজাকে।

নাজমুল শান্তর ঝড়ো ইনিংসে ছিল ১১টি ছক্কার মার। সঙ্গে চারটি বাউন্ডারি। এ ম্যাচে শান্ত যে কতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন সেটা তার ২০০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটও তার সাক্ষ্য দেয়।

রাজশাহী ক্যাপ্টেন যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন মনে হচ্ছিল যেন হাইলাইটস চলছে। বরিশালের বোলার আফিফের করা ১৪তম ওভারেই হাঁকিয়েছেন তিন ছক্কা। তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ, কামরুল ইসলাম, মেহেদী মিরাজ -কেউই শান্তর হাত থেকে রক্ষা পাননি। তাদের বলেও ছক্কা আদায় করে নিয়েছেন। ম্যাচের ১৯তম ওভারে তাসকিন আহমেদের বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েই সেঞ্চুরি পূরণ করেন নাজমুল।

রাজশাহীর অধিনায়কের পর তা-ব চালান বরিশালের পারভেজ হোসেন ইমন। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই বাইশগজ ছাড়েন।

বরিশালের ব্যাটিংয়ের সময় মনে হচ্ছিল শেরেবাংলার বাইশগজ যেন একটা ক্যানভাস। আর সেখানে মনের খুশি মতো তুলির আঁচড় দিচ্ছেন ‘শিল্পী’ ইমন!

কী অসাধারণ ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং। রাজশাহী বোলার আনিসুলের যে বলে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করলেন একই বলে পূরণ হয়ে যায় তার শতকও। অথচ ম্যাচ শেষে কি না ইমন বললেন, ‘আমি রানের দিকে লক্ষ্য করিনি। কেবল ওভার দেখেছি আর নিজের স্বাভাবিক খেলাটা প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছি।’

বাইশগজে ইমন যে কতটা দৃঢ়চেতা তা ক্রিকেট বিশ্ব জেনে গেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে। ইনজুরি নিয়ে মাঠে নেমে কী অসাধারণ এক ইনিংস খেলেই না বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের শিরোপা। এবার বড়দের মঞ্চেও নিজেকে আলোকিত করছেন ইমন।

বরিশালের এই ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ২৩৮.০৯। বোলারদের ওপর যেন রীতিমতো তা-ব চালিয়েছেন। তবে ইমনের টর্নেডোর সামনে পড়ে এক ওভারে ২৪ রান দিয়েছেন রাজশাহীর পরীক্ষিত বোলার ফরহাদ রেজা।

অবশ্য কাল বরিশালের ইনিংসে শুরু থেকেই ঝড় তুলেছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসান। ইমন বাইশগজে যাওয়ার পর যেন বিদ্যুৎ গতিতে বাড়তে থাকে রান। টার্গেট ২২১। টি-২০-তে অসম্ভবই! শেষ পর্যন্ত যেন অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেললেন ইমন। ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা প্রদর্শন করতে। উইকেট ভালো ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য খুবই ভালো।’

ইমন বলেন, ‘অনেক ভালো লাগছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এটা কাজে লাগিয়ে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’

অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা এই তারকার আত্মবিশ্বাস যেন তুঙ্গে তা মুখে না বললেও চলত! ইমন যেভাবে ব্যাটিং করছেন জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানদের যেন হুমকিতে ফেলে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপে ছয় ম্যাচে তার গড় ৪০-এর ওপরে। আর পরের ম্যাচগুলোতে এই ধারাবাহিকতা থাকলে জাতীয় দলে তার অভিষেক আটকায় কে!

সর্বশেষ খবর