‘ম্যাজিক ইন দ্য ইয়ার’ গানের তালে তালে নাচছে বসুন্ধরা কিংস। ফুটবলারদের সঙ্গে এই নাচে অংশ নিয়েছেন কোচ অস্কার ব্রুজোনসহ অন্যরাও। কিংসের এই নাচ শুরুর আগে ফাইনালে পরাজিত দল সাইফ স্পোর্টিংয়ের বেলজিয়ান কোচ পল পুট জানিয়ে গেলেন শুভেচ্ছা। তার চোখে, আচরণে বসুন্ধরা কিংসের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। হাতের ইশারায়, চোখের ভাষায় যেন বলতে চাইলেন, যোগ্য দল হিসেবেই বিজয়ী তোমরা। অভিনন্দন তোমাদের। ফেডারেশন কাপ ফাইনালে অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যদের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছে পল পুটের দল।
নির্ধারিত ৯০ ও যোগ করা ৩ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছে রেফারি জালাল উদ্দিনের বাঁশিতে। সঙ্গে সঙ্গেই কিংসের অফিশিয়ালরা মাঠে প্রবেশ করলেন। বুকে-পিঠে ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি গায়ে জড়ালেন সবাই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মধ্যমাঠে গোল হয়ে উৎসব করলেন। ভক্তদের দিকে ছুটে গিয়ে তাদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন। কিন্তু অস্কার ব্রুজোন কোথায়! তিনি তখন উৎসব থেকে খানিকটা দূরে মাঠের এক কোণায় আশাহত হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাইফ স্পোর্টিংয়ের ফুটবলারদের কাছে। তাদের বুকে-পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনার বাণী শোনাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি গায়ে তিনিও যোগ দিলেন দলের বিজয়োৎসবে।
বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলারদের বল পায়ে ধরে রাখার অ™ভুত কৌশল শিক্ষা দিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। ‘টিকি-টাকা’ ফুটবল খেলা দেশের মানুষ তিনি। হয়তো সে কারণেই তাঁর শিক্ষাটা বেশ রপ্ত করেছেন ইব্রাহিম-মতিন মিয়ারা। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে তা নিজেদের দখলে রাখায় বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন তারা।
গতকাল কিংসের বিপক্ষে সাইফের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বল দখল করা। বল পায়ে এলেই তারা দ্রুততালে আক্রমণে গেছে। সাইফের অধিনায়ক রাফি ম্যাচের পর নিজেদের কৌশলের কথা জানিয়ে গেলেন। ‘আমরা বল পেলেই আক্রমণে যাচ্ছিলাম। এটাই ছিল আমাদের পরিকল্পনা।’ রাউলের গোলের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি সাইফ। কথাটা স্বীকার করলেন তিনি। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক তপু বর্মণ আনন্দিত স্বরে জানিয়ে গেলেন, সাইফ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও নিজেদের পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে বিজয়ী হয়েছে কিংস। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই ছিল, সুযোগ পেলেই তা কাজে লাগাতে হবে। আর সুযোগ পেয়ে তা ঠিক সময়ে কাজে লাগিয়েছেন রাউল। আমরা ভালো খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।’
জয়টা তো ওই গোলেই এসেছে।
কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন বললেন, ‘দারুণ একটা টুর্নামেন্ট জয় করলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন মৌসুমের বাকি ট্রফিগুলো জিততে আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে এ টুর্নামেন্ট।’ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিয়ে যাওয়ার পথে যখনই শুনলেন লিগ মাঠে গড়াছে ১৩ জানুয়ারি থেকে, কিংস কোচ অস্কারের কপালে ভাঁজের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠল। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আবার মাঠের লড়াইয়ে নামতে হবে! উৎসব শেষ হওয়ার আগেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে চ্যাম্পিয়নদের।
চ্যাম্পিয়ন : বসুন্ধরা কিংস
রানার্সআপ : সাইফ স্পোর্টিং
ফেয়ার প্লে ট্রফি : চট্টগ্রাম আবাহনী
ম্যান অব দ্য ফাইনাল : রাউল অস্কার বেসেরা (বসুন্ধরা কিংস)
টুর্নামেন্ট সেরা : কেনেথে ইকেচুকু (সাইফ স্পোর্টিং)
সর্বোচ্চ গোলদাতা : রাউল অস্কার বেসেরা ও কেনেথে ইকেচুকু
টিম স্পিরিটেই এ সাফল্য
-ইমরুল হাসান, সভাপতি, বসুন্ধরা কিংস
‘সত্যিই আমি আনন্দিত। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ফুটবলাররা কথা দিয়েছিল এবারও শিরোপা ঘরে তুলবে। ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কথা রেখেছে তারা। টিম স্পিরিটেই এ সাফল্য। আসরে প্রতিটি ম্যাচেই ছেলেরা ভালো খেলেছে। বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা খেলেছে। এ ট্রফি আমাদের লিগে অনুপ্রেরণা জোগাবে। সাইফ ফাইনালে হেরে গেছে। ওরাও ভালো খেলেছে।
ফাইনাল সেরা রাউল
বসুন্ধরা কিংসের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড রাউল অস্কার বেসেরা ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র গোলেই ম্যাচটা জয় করেছে বসুন্ধরা কিংস। টানা তৃতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটা। তবে বসুন্ধরার জয়ের পেছনে বড় অবদান ছিল গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোরও। তিনি অন্তত ৫টা গোল সেভ করে জয়ের পথ সহজ করেছেন।
টুর্নামেন্ট সেরা ইকেচুকু
সাইফ স্পোর্টিং প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলে ইতিহাস গড়েছে। দলের এ অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কেনেথ ইকেচুকুর। ৩২ নম্বর জার্সিধারী এ ফুটবলার টুর্নামেন্টে ছয় ম্যাচ খেলে ৫টি গোল করেছেন। গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন অনেকবার। গ্রুপপর্বে ব্রাদার্সের বিপক্ষে দুই গোল করে দলকে বড় জয় উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
ফেডারেশন কাপ ৭ চ্যাম্পিয়ন
মোহামেডান
১৯৮০ সালেই প্রথম ফাইনালে খেলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ফাইনালে গোল না হওয়ায় দু’দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৯৮১, ১৯৮২ ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৮৯, ১৯৯৫,২০০২, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়।
ব্রাদার্স ইউনিয়ন
গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়ন এককভাবে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯১-৯২ মৌসুমে। ফাইনালে টাইব্রেকারে হারায় মোহামেডানকে। ২০০৫ সালে তারা শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়।
আবাহনী
১৯৮২ সালের ফাইনালে নির্ধারিত সময় ড্র থাকলে মোহামেডানের সঙ্গে তারা যুগ্মচ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৫ সালে তারা এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০০, ২০১০, ২০১৩, ২০১৬, ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী।
মুক্তিযোদ্ধা
১৯৯৪ সালে ফেডারেশন কাপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় মুক্তিযোদ্ধা। এরপর ২০০১, ২০০৩ সালে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়। দলটি আরও তিনবার ফাইনালে উঠলেও রানার্স আপ হয়। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা প্রিমিয়ার লিগও চ্যাম্পিয়ন হয়।
শেখ জামাল
২০১১-১২ মৌসুমে প্রথম চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি। এরপর ২০১৩ ও ২০১৫ মৌসুমে শিরোপা জেতে তারা। টানা পাঁচ বার ফাইনালে খেলার বিরল রেকর্ডও রয়েছে শেখ জামালের।
শেখ রাসেল
২০০৪ সালে অভিষেকেই তারা লিগে রানার্স আপ হয়। প্রথম ট্রফি ঘরে আসে ২০১২-১৩ মৌসুমে। সেবার ফেডারেশন কাপ ফাইনালে শেখ জামালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের খাতায় নাম লেখায় বিপ্লবের নেতৃত্বে দেওয়া দলটি।
বসুন্ধরা কিংস
প্রথম আসরে ফেডারেশন কাপের ফাইনালেও উঠেছিল। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসকে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরের মৌসুমেই নতুন চ্যাম্পিয়নের নাম লেখায় তারা। এবারও সাইফকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রেখেছে দলটি।