প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩০২/২। নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত ১২৬, তামিম ইকবাল ৯০ এবং মুমিনুল হক নট আউট ৬৪।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্বপ্নের এক দিন পার করল বাংলাদেশ। পাল্লেকেলেতে প্রথম দিনের তিন সেশনেই একক আধিপত্য বাংলাদেশের।
অথচ দিনের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্ন দিয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন ওপেনার সাইফ হাসান। কিন্তু সকালের সূর্য দেখে যে সবসময় দিনের পূর্বাভাস জানা যায় না, তাই যেন প্রমাণ করে দিল বাংলাদেশ।প্রথম উইকেট পতনের পরই শুরু হয় শান্তর মিশন। তামিম ইকবালের সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটির পর অধিনায়ক মুমিনুল হকের সঙ্গে আরেকটি ১৫০ রানের অপরাজিত জুটি গড়েন শান্ত। এই দুই জুটিই বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের সব শেষ শত রানের জুটি ছিল ২০০৯ সালে। অথচ গতকালই দুই দুটি সেঞ্চুরি জুটি। সব মিলে টেস্টে বাংলাদেশের স্বপ্নের এক দিন।
শ্রীলঙ্কা সফরে সাকিব আল হাসানের মতো সেরা ক্রিকেটার নেই। এর চেয়েও বিষয় হচ্ছে, আগের সিরিজে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে লাল-সবুজরা। সেই দলটাই কি না লঙ্কানদের মাটিতে গিয়ে সম্পূর্ণ বদলে গেল। প্রথম দিনে বাংলাদেশকে বদলে দিলেন শান্ত, তামিম ও মুমিনুল।
সাকিবের অনুপস্থিতির কারণেই নাজমুলকে ব্যাটিং অর্ডারের তিনে সুযোগ দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ছিলেন একদম ফ্লপ। তারপরও শান্তর ওপর থেকে আস্থা হারায়নি দল। গতকাল পাল্লেকেলেতে সেই আস্থারই প্রতিদান দিলেন অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস খেলে।
ইনিংসের শুরুর দিকে তামিম যখন এক প্রান্তে আগ্রাসীভাবে ব্যাটিং করছিলেন তখন আরেক প্রান্তে ধৈর্যের সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন শান্ত। ২৮৮ বলের ইনিংসে ভুল শট খেলেননি। তবে বাজে বল পেলে তার ব্যাট ঠিকই চড়াও হয়েছে। দিনে একমাত্র ছক্কাটিও এসেছে তার ব্যাট থেকেই। নাজমুলের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংসে চার ১৪টি।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবালও। তার ৯০ রানের ইনিংসটি ছিল ১৫টি বাউন্ডারিতে সাজানো। ড্যাসিং ওপেনার ব্যাটিং করেছেন ওয়ানডে স্টাইলে। তার স্ট্রাইকরেট ৮৯.১০। গতকাল ১০১ বলের ইনিংসে মাত্র একবারই যেন ভুল করেছেন তামিম। সেই বলেই আউট হয়ে যান। তামিম যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন বাংলাদেশের রান রেট ছিল চারের ওপরে। যদিও টেস্টে স্ট্রাইকরেট কোনো বিষয় নয়। তারপরও তামিম কাল শুরু থেকেই লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হন। ড্যাসিং ওপেনার যখন ব্যাট করছিলেন, লঙ্কান বোলাররা যেন দিশাহারা হয়ে যাচ্ছিলেন। যদিও প্রথম দিনের বাকি সময়েও তারা আর সুবিধা করতে পারেননি।
অসাধারণ ব্যাটিং করছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। তিনিও খেলেছেন অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংস। দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন শান্তকে। তাদের অপরাজিত ১৫০ রানের জুটি বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে রানের পাহাড়ের দিকে।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের এমন স্বস্তির দিন খুব কমই এসেছে। অনেক সময় দেখা গেছে সারা দিন ভালো খেলার পরও শেষ বিকালে হঠাৎ ছন্দপতন। কিন্তু গতকাল মুমিনুল-নাজমুল প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগই দেননি।
টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে ধৈর্যের খেলা। টার্গেট থাকে সেশন বাই সেশন ভালো করা। সে কাজটা যে গতকাল খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছে বাংলাদেশ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম সেশনে সাইফের উইকেট ছাড়া আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি। দ্বিতীয় সেশনে নিজের ভুলে আউট হয়ে যান তামিম। তৃতীয় সেশনে তো কোনো উইকেটই পড়েনি।
লঙ্কানদের কোনো পরিকল্পনাই কাজে লাগেনি। পাল্লেকেলের উইকেট সবুজ ঘাসের হলেও তা যেন রানে ভরা। হয়তো স্বাগতিকরা ভেবেছিল বাংলাদেশ টস জিতলেও প্রথম ফিল্ডিং নেবে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি। তারপর ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় প্রথম দিনটা নিজের করে নিল বাংলাদেশ। আজ দৃঢ়তা দেখাতে পারলে প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড়েই উঠে যেতে পারেন টাইগাররা।
এমন উইকেটে ডাবল সেঞ্চুরির ভাবনা আসতে পারে শান্তর মনেও। সেটা তার কথাতেই বোঝা যায়। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘উইকেট খুবই ভালো। আশা করি আগামীকালও (আজ) বেশ ব্যাটিং উপযোগী থাকবে। তৃতীয় দিনের পর থেকে উইকেটে স্পিন ধরতে পারে।’
পাল্লেকেলের এই মাঠে ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ৪৮৭। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে এই রান করেছিল ভারত। বাংলাদেশ যদিও ইতিহাস গড়ে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ টাইগারদের হাতে আছে এখনো ৮ উইকেট।