নায়ক হতে পারতেন অলক কাপালি। আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা কেড়ে প্রাইম ব্যাংককে দ্বিতীয়বার শিরোপা উৎসবে মেতে উঠার উপলক্ষ তৈরি করে দিতে পারতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম ধ্রুপদী ব্যাটিং শিল্পী। এজন্য শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য ১৬ রান করতে হতো কাপালিকে। কিন্তু তরুণ শহীদুলের প্রথম তিন বলে কাপালি রান নিতে ব্যর্থ হলে শিরোপা উৎসবে মেতে উঠে মাঠের বাইরে থাকা আবাহনীর ক্রিকেটার ও সমর্থকেরা। চার নম্বর বলে হঠাৎ স্ট্রেইট ছক্কা হাঁকিয়ে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। শেষ দুই বলে এক রান। খেলা শেষ। ৮ রানে ম্যাচ জিতে যায় আবাহনী। হ্যাটট্রিক শিরোপা উৎসবে মেতে উঠে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দল মোসাদ্দেক সৈকতের আবাহনী। সব মিলিয়ে ঢাকা লিগে এটা আবাহনীর ২১ নম্বর শিরোপা এবং গত পাঁচ মৌসুমে চার নম্বর। কোচ খালেদ মাহমুদেরও হ্যাটট্রিক শিরোপা। দিনের প্রথম ম্যাচে ডিএল মেথডে মোহামেডান ২৫ রানে হারায় প্রাইম দোলেশ্বরকে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবারিত সুযোগ ছিল আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংক দুই দলেরই। এজন্য মিরপুর স্টেডিয়ামে দুপুরের ম্যাচটিতে জিততেই হবে যে কোনো এক দলকে। এমন সহজ সমীকরণের ম্যাচে দুই দল মুখোমুখি হয় দুই তারকা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালকে ছাড়া। দুজনেই ইনজ্যুরির জন্য সুপার সিক্স থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। মুশফিক ছিলেন আবাহনীর নিয়মিত অধিনায়ক এবং তামিম ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের। মুশফিকের পরিবর্তে নেতৃত্ব দেন মোসাদ্দেক এবং তামিমের জায়গায় এনামুল বিজয়। মোসাদ্দেক গত মৌসুমেও আবাহনীর চ্যাম্পিয়নের দলনায়ক ছিলেন।
আগের শিডিউলে ম্যাচের সময় ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়।কিন্তু হঠাৎ করেই সময় পরিবর্তন করে দুপুর ২টায় শুরু করে খেলা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমেই বিপদে পড়ে মোসাদ্দেক বাহিনী। ম্যাচের প্রথম বলেই মুস্তাফিজ সাজঘরে ফেরত পাঠান নাঈমকে। ওই ওভারের তৃতীয় বলে মুস্তাফিজের বলে লিটন দাসের বিপক্ষে নিশ্চিত লেগ বিফোরের আবেদন নাকচ করে দেন আম্পায়ার। অবশ্য পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরেন আবাহনীর সফল ওপেনার মুনিম। ১৫ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে আবাহনী যখন কোণঠাসা, তখন দায়িত্বশীল ব্যাট করতে ব্যর্থ হন লিটন। ১৩ বলে ১৯ রান করে ফিরেন সাজঘরে। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা আবাহনীকে টেনে তুলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মোসাদ্দেক। দুজনে ৬১ বলে যোগ করেন ৭০ রান। শান্ত ৪৫ রান করেন ৪০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায়। মোসাদ্দেকের ৪০ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩৯ বলে ১ চার ও এক ছয়ে। শেষ দিকে ম্যাচসেরা সাইফুদ্দিন ১৩ বলে ২ ছক্কায় ২১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললে আবাহনীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০। মুস্তাফিজ, শরীফুল ও রুবেল মিয়া একটি করে এবং রুবেল ২ উইকেট নেন।
প্রাইম ব্যাংকের টার্গেট ২০ ওভারে ১৫১ রান। আহামরি নয়। কিন্তু চাপ নিতে না পেরে প্রথম ওভারেই ফিরে যান আক্রমণাত্মক ওপেনার রনি তালুকদার। যদিও নতুন বলের সঙ্গী রুবেল মিয়া চেষ্টা করেছেন ৪১ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে। কিন্তু জয়ের জন্য সেটা সব ছিল না। শেষ দিকে কাপালি ১৭ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৩৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেললে খেলা শেষ পর্যন্ত জমে উঠে। কিন্তু জয় আর শিরোপা অধরাই রয়ে যায়। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪২ রানের বেশি করতে পারেনি প্রাইম ব্যাংক। ম্যাচসেরা সাইফুদ্দিন ৪ ওভারের স্পেলে ৩৬ রানের খরচে নেন ৪ উইকেট। বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানি দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ ওভারে রান দেন মাত্র ১৮।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আবাহনী : ১৫০/৭, ২০ ওভার (লিটন ১৯, নাজমুল ৪৫, মোসাদ্দেক ৪০, সাইফুদ্দিন ২১*। রুবেল মিয়া ২/২২, মুস্তাফিজ ১/৩৭)।
প্রাইম ব্যাংক : ১৪২/৯, ২০ ওভার (রুবেল মিয়া ৪১, কাপালি ৩৪*, নাঈম ১৯। সাইফুদ্দিন ৪/৩৬, রানা ২/৩০)।
ফল : আবাহনী ৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।