বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

টি-২০তে তরুণরাই ভরসা

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ

মেজবাহ্-উল-হক


তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাস - তিন তারকা ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে নেই। তারপরও উজ্জীবিত বাংলাদেশ। কারণ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে দাপট দেখিয়েছে টাইগাররা।

যদিও এক ম্যাচ হেরেছে। তবে শেষের ম্যাচটিই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। জিম্বাবুয়েকে তাদের মাটিতে ১৯৪ রানের এভারেস্টসম টার্গেটে পৌঁছে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি টি-২০তে নতুন করে বুষ্টআপ হয়েছে টিম-বাংলাদেশ।

মজার বিষয় হচ্ছে, ওই সিরিজে বাংলাদেশের একাদশে কিন্তু তামিম, মুশফিক কিংবা লিটন ছিলেন না! দুই সিনিয়র সাকিব আল হাসান এবং অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরও কোনো ম্যাচে একাধিপত্য ছিল না।

সাম্প্রতিক বাংলাদেশের জয়গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি ম্যাচেই সিনিয়রদের জোড়ালো ভূমিকা ছিল। এক একটি জয়ের চিত্রনাট্যে তরুণরা কেবলই পার্শ্বচরিত্র। কিন্তু এবার দেখা গেল উল্টো চিত্র। তরুণরা দায়িত্ব নিয়েই দাপুটে ক্রিকেট উপহার দিয়েছেন টি-২০তে।

তামিম-লিটন-মুশফিক না থাকায় তাদের প্রভাবটা কি খুবই প্রকট হবে? অবশ্যই অভিজ্ঞতা একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু তিন তারকা না থাকায় বরং টিম ম্যানেজমেন্টের জন্যও দল বেছে নেওয়া সহজ হয়েছে।

কেননা তামিম-লিটন দুজনই ওপেনার। ওয়ানডেতে তারা ক্যারিশমাও দেখিয়েছেন। কিন্তু টি-২০তে সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম তো রীতিমতো চমক দেখিয়েছেন। তিন ম্যাচের দুইটিতে ফিফটি করে সিরিজ সেরা হয়েছেন সৌম্য। তা ছাড়া এই ফরম্যাটে শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি আছে তার। গত মার্চে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ৫১ রানের একটি ইনিংস ছিল তার। শেষ ম্যাচে তো নিজের ক্যারিয়ার সেরা ৬৮ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেললেন। পার্টটাইমার পেসার হিসেবেও সফল তিনি। তাই দলে অবিচ্ছেদ্য অংশ এখন সৌম্য।

আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমেরও একটি হাফ সেঞ্চুরি আছে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৩ রানের ইনিংস। তাই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওপেনিংয়ে নাঈমকে বসিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। তাই যেহেতু ফরম্যাটটা টি-২০ তাই ওপেনিংয়ে তামিম-লিটনের অভাব অনুভূত হওয়ার কথা নয়।

তরুণ তারকা শামীম পাটওয়ারী ও নুরুল হাসান সোহান ভালো করায় লোয়ার মিডল অর্ডারেও সমস্যা থাকছে না। ব্যাটিং অর্ডারের তিনে খেলবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মুশফিক না থাকায় অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলবেন চারে। পাঁচে আফিফ হোসেনই সেরা পছন্দ। পারফেক্ট এক ফিঞ্চ হিটার! ফিনিশার হিসেবেও বেশ দক্ষ হয়ে উঠছেন আফিফ।

ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অভিষিক্ত শামীম পাটওয়ারী যে ঝলক দেখিয়েছেন তার তুলনা হয় না। টি-২০তে প্রতিপক্ষের বোলারদের মানসিকভাবে ঘায়েল করে দেওয়ার জন্য যে শরীরী ভাষা দরকার তা দেখিছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকার মধ্যে।

সাতে নুরুল হাসান সোহান। এই পজিশনে লম্বা সময় ব্যাট করার সুযোগ থাকে না। তাই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের দুটিতেই অপরাজিত ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে।

আর শেষ চারজন তো মূলত বোলার। এখানে পরিবর্তন করারও সুযোগ আছে। তবে দুইজন অলরাউন্ডার খেলানোর বিষয়টিও অনেকটা নিশ্চিত। বাকি দুই পজিশনে দুই পেসার নাকি একজন স্পিনার এবং একজন পেসার নিয়ে একাদশ গঠন করা হবে তা উইকেটের ধরন এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কৌশলের ওপর নির্ভর করবে। তবে তিন তারকা না থাকার পরও টি-২০র জন্য এই বাংলাদেশ দলই সেরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তা ছাড়া এই অস্ট্রেলিয়াকেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তারা পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছে। দলের সেরা তারকারা তো নেই-ই, নিয়মিত অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চও সফর থেকে ছিটকে গেছেন। তবে টাইগারদের জন্য মানসিক বাধা হচ্ছে, অসিদের বিরুদ্ধে এখনো

টি-২০তে কোনো জয় নেই। অবশ্য সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে দুই দলের দেখাই হয়েছে মাত্র চারবার। টাইগাররা অসিদের বিরুদ্ধে সব শেষ টি-২০ খেলেছেন সেই ২০১৬ সালে।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে টেস্টে ঘরের মাঠে সাকিব-মিরাজ-তাইজুলের ঘূর্ণিতে জয়ের মধুর স্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে মোহাম্মদ আশরাফুলের ক্যারিশমায় কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া-বধের রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। এবার কি তবে ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টি-২০তে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রথম’ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত অপেক্ষা করছে টাইগারদের জন্য?

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর