কানেকটিং ফ্লাইট পেয়ে যাওয়ায় এক দিন আগেই ঢাকায় চলে আসেন ‘ইউনিভার্সাল বস’ ক্রিস গেইল। করোনা নেগেটিভ হয়ে ‘ব্যাটিং ঝলক’ দেখাতে গতকাল মাঠে নামেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং তারকা। কিন্তু গেইলের উপস্থিতিতেও জেতাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশালকে। ‘ধান-নদী-খাল, তিনে মিলে বরিশাল’কে হারের তিক্ত স্বাদ দেয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। টানা দুই হারের পর জয়ে ফিরল ঢাকা। প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে হারল বরিশাল।
টার্গেট মাত্র ১৩০। ওভার প্রতি সাড়ে ৬। টি-২০ ক্রিকেটে এমন টার্গেট সহজ থেকে সহজতর। কিন্তু মাঘের কুয়াশায় মিরপুরের উইকেটে এমন টার্গেট অনেকটা আকাশ ছোঁয়ার মতো। টানা হারের ধাক্কা সামলে খেলতে নেমেই তরুণ শহিদুল ও আলঝারি জোসেফের বোলিং ঝড়ে ল-ভ- হয়ে পড়ে ঢাকা। ২.৫ ওভার বা ১৭ বলে উপরের চার ব্যাটার হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পরে ঢাকা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় সাকিব বাহিনী। খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা দলকে টেনে তুলতে কাঁধে তুলে নেন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। টাইগার টি-২০ অধিনায়ক চাপের মুখে ভালো খেলেন-কাল আরও একবার প্রমাণ করলেন। হারলেও বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।
১০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন টানা তৃতীয় হারের শঙ্কায় ঢাকা, তখন মাহমুদুল্লাহ পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন অভিজ্ঞ শুভাগত হোমের সঙ্গে। দুজনে মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৯ রান যোগ করেন ১০.৩ ওভারে। শুভাগত ব্যক্তিগত ২৯ রানে সাজঘরে ফিরেন ডুইন ব্রাভোর বলে। দলীয় ৭৯ রানে শুভাগতের বিদায়ের পর মাহমুদুল্লাহ জুটি বাঁধেন ক্যারিবীয় দানব আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে। দুজনেই ম্যাচ শেষ করেন। যদিও স্কোর সমান সমান হওয়ার পর আলগা শট খেলে মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরেন ব্যক্তিগত ৪৭ রানে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ঢাকার দরকার যখন ৭ রান, তখন নিজের ৪ নম্বরে বল করতে আসেন সাকিব। বিশ্বসেরা স্পিনারের ওভারের প্রথম বলেই স্ট্রেইট ছক্কা মারেন মাহমুদুল্লাহ। ৪১ থেকে মুহূর্তে ৪৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। বিপিএলের চলতি আসরে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো ঢাকার অধিনায়ক। দলের জয়ের জন্য দরকার ১ রান। মাহমুদুল্লাহর চাই বাউন্ডারি। এমন সমীকরণে সাকিবের টানানো বলটিকে কাভারে খেলতে যেয়ে ডুয়াইন ব্রাভোর সহজ ক্যাচে পরিণত হন ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। ৪৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি খেলেন ৪৭ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায়। জয়সূচক রান নেন ইসুরু উদানা। তবে আগের দুই ম্যাচের ব্যর্থতার খোলশ ঝেড়ে দারুণ অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করেন রাসেল। ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংস ছিল ২টি বিশাল ছক্কা ও ৩টি চার। ১৭ নম্বর ওভারে তাইজুলকে ১ ছক্কা ও ২ চারে ১৬ রান নিয়ে ম্যাচকে নিজেদের করে নেন কারিবীয় দানব। আগের ম্যাচে দারুণ বোলিং করা সাকিব গতকাল ৩.৩ ওভারে রান দেন ২১।টস হেরে ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি বরিশালের। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সেখান থেকে দলের দুই সেরা তারকা সাকিব ও গেইল হাল ধরেন। সাকিব ১৯ বলে ২৩ রান করেন। আগের দিন ঢাকা পা রাখা গেইল অবশ্য চেষ্টা করেন নিজেকে মেলে ধরতে। ৩০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করে জানান দেন বিপিএলে নতুন কিছু করার। কিন্তু উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছে ইউনিভার্সাল বসের। আরেক ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার ব্রাভো ৩৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন ২৬ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায়। ঢাকার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন দুই বিদেশি ইসুরু উদানা ও আন্দ্রে রাসেল।