রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্ব ক্রীড়া আদালতে কিংস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্ব ক্রীড়া আদালতে কিংস

২০০২ সালে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফা বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করেছিল। অপরাধ ছিল গুরুতর। বেআইনিভাবে বাফুফের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। ফিফা ও এএফসি তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে গঠনতন্ত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল ফেডারেশন পরিচালিত হবে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে। তাদের উপেক্ষা করলে একমাত্র শাস্তি বহিষ্কার। নির্বাচিত কমিটির কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় দেড় মাসের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছিল ঠিকই। তবে অপমান ও মানসম্মান যা যাওয়ার তা গেছেই। এক দিন বা এক বছর হোক বহিষ্কারের লজ্জা কি কখনো মুছবে?

২১ বছর পর বাফুফে সেই পথে হাঁটছে কি না কে জানে? যদি লজ্জার কিছু ঘটে তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে বাফুফে। জানা গেছে, পেশাদার লিগে অনিয়ম ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে দেশের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংস ফিফা ও এএফসির পর কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসের কাছে (সিএসএস) অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে। এ কথা কারও অজানা নয় প্রতিটি দেশের পেশাদার লিগ হয় ফিফার গাইডলাইন মেনে। এশিয়ার লিগগুলোয় আবার এএফসিও খবরদারি করে। গাইডলাইনের সামান্য নড়চড় হলেই ফিফা যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে। বিস্ময় হলেও সত্যি যে, বাফুফের লিগ কমিটি যেন লিগ নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে। এএফসি ও ফিফাকে তোয়াক্কা না করে পেশাদার লিগকে যেন পাড়া-মহল্লার ফুটবলে পরিণত করেছে।

পেশাদার লিগে অনিয়ম নতুন নয়। তবে এবার চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তাতে ক্রীড়াঙ্গন ক্ষুব্ধ। বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু করা হয় নবনির্মিত বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সকে। লিগ কমিটি চূড়ান্ত অনুমতিও দিয়েছিল। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই শেষ মুহূর্তে কিংসের ভেন্যু বাতিল করে লিগ কমিটি।

এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের পরও ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে লিগে ঠিকই উদ্বোধনী ম্যাচ খেলে কিংস। টঙ্গী ও মুন্সীগঞ্জের ভেন্যু পেশাদার লিগের জন্য উপযোগী কি না তা সবাই দেখছে। বসুন্ধরা কিংস তাদের ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিপক্ষে কিংস নীরব থাকে কীভাবে? উদ্বোধনী ম্যাচ হবে তাই জরুরিভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করতে অঢেল অর্থ খরচ হয়েছে কিংসের। তা ছাড়া ভেন্যু বাতিলে ফিফার নিয়মও রয়েছে, কিন্তু তার তোয়াক্কা না করে লিগ কমিটি অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয় কীভাবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অভিযোগ তো তুলবেই। তাই এএফসি ও ফিফার কাছে নিয়ম মেনেই নালিশ করেছেন কিংস কর্তৃপক্ষ। শুধু দুই সংস্থা নয়, দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব দ্বারস্থ হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়ার আদালত কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টসের কাছে। সুইজারল্যান্ডের লুসানে অবস্থিত সিএসএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪। ফিফা আইনের ৫৭ ও ৫৮ ধারায় স্বীকৃতি মিলেছে সিএসএসের। তাদের কাজ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তারা ফিফার বিরুদ্ধেও অভিযোগ পেলে তদন্ত করার অধিকার রাখে। সেখানে তো বাফুফে তুচ্ছ ব্যাপার।

বসুন্ধরা কিংস শুধু নিজেদের ভেন্যু বাতিল নয়, ফিকশ্চার, দলবদলে অনিয়ম, লিগ চলাকালে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ডাগ আউটে থাকাসহ সব অনিয়মই অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছে। বাফুফের সাবেক গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান অভিজ্ঞ সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুল বলেন, ‘আমি বসুন্ধরার ভূমিকার প্রশংসা করি। বাফুফের অন্যায়ে ক্লাবগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। ফিফা ও এএফসির কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে কিংস। এতে টনক নড়বে লিগ কমিটির? বিশেষ করে কোর্ট অব আরবিট্রেশন কোনোভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। মনে রাখতে হবে ইমরুল হাসান শুধু বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি নন, সর্বোচ্চ ভোটে জেতা বাফুফের সহসভাপতি। সেক্ষেত্রে কিংসের  অভিযোগ আলাদাভাবে গুরুত্ব পাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর