এক বিশ্বকাপের কত রং! একদিকে হাসি-আনন্দ-উচ্ছ্বাস, আরেকদিকে হৃদয় ভাঙার গল্প। একদিকে বাঁধভাঙা উৎসব, আরেকদিকে কান্নার স্রোত। একদিকে অঘটন, আরেকদিকে ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের রচনা। কাতার বিশ্বকাপটা কি অঘটন আর ইতিহাসের নতুন নতুন অধ্যায় রচনার বিশ্বকাপ হয়ে যাচ্ছে?
একটা বিশ্বকাপে একটা অঘটন হলেই, একটা ইতিহাস রচিত হলেই ফুটবল দুনিয়া হেলেদুলে পড়ে। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে যেমন হয়েছিল। সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের ঘটনা পুরো ফুটবল বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সে সময় ইংলিশদের বলা হতো ‘কিংস অব ফুটবল’। বিশ্বকাপের আগে ৩০ ম্যাচের ২৩টিতেই জয় পেয়েছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পার্টটাইম’ ফুটবলারদের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ছিল ‘পিঁপড়ার তুলনায় হাতি’র মতোই। কিন্তু কী অবাক কাণ্ড। সেই পিঁপড়ার কামড়েই প্রাণ গেল হাতির! এর পরের সাত দশকে ১৭ বিশ্বকাপে নানা অঘটন দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। ১৯৬৬ সালে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইতালির পরাজয় (১-০), ১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের কাছে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার আত্মসমর্পণ (১-০), ২০০২ সালে সেনেগালের কাছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের পরাজয় (১-০) এবং ২০১০ বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ডের কাছে স্পেনের হার (১-০) ছাড়াও আরও বেশ কটি দুর্ঘটনার কথা আলোচনায় আছে।
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসটাই যেন বদলে গেল কাতারে এসে। এক বিশ্বকাপে একটা অঘটন হজম করাই যেখানে কষ্টকর সেখানে বিশ্বকাপের মাত্র চার দিনেই চার অঘটন! সৌদি আরব আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরম মিত্র জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল জাপান। ইউরোপিয়ান ফুটবলের অন্যতম সেরা শক্তি ডেনমার্ককে থামিয়ে দিল (০-০) আফ্রিকার পুঁচকে তিউনিসিয়া। মরক্কোর কাছে থামতে হলো রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে (০-০)। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনা তিনে সৌদি আরব ৫১ নম্বরে, জার্মানি এগারোতে জাপান ২৪ নম্বরে, ডেনমার্ক দশে তিউনিসিয়া ৩০ নম্বরে এবং ক্রোয়েশিয়া বারোতে মরক্কো ২২ নম্বরে।কাতার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে ইরানের ৬-২ গোলে পরাজয়ের ঘটনায় ইউরোপিয়ানরা বেশ আহ্লাদিত হয়েছিল। প্রশ্ন তুলেছিল এশিয়ান ফুটবলের মান নিয়ে। এ কেমন ফুটবল খেলল ইরান! এ যেন ‘পরে নিন্দ, নাহি দেখ ছিদ্র আপনার।’ ইংল্যান্ডের কাছে ইরানের পরাজয় না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার আর জাপানের কাছে জার্মানির পরাজয়ের কী ব্যাখ্যা দেবেন ইউরোপ-আমেরিকার ফুটবল বিশ্লেষকরা!
কাতারে কেন ঘটছে এসব অঘটন? ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এখন ভরা মৌসুম। মাঝপথে সেই মৌসুমের খেলা বন্ধ করে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে ফেবারিট দলগুলো। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় লিগ শেষ হলেও এই দুই দলের প্রায় সবাই খেলছেন ইউরোপিয়ান লিগ। বিপরীত দিকে এশিয়ান ফুটবলের দুই সেরা শক্তি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া বেশ আগেই লিগের পাট চুকিয়ে এসেছে।