বিশ্বকাপের শহর কাতারের রাজধানী দোহা। সারা দুনিয়া থেকে লাখ লাখ মানুষের স্রোত এই শহর অভিমুখে। কিন্তু সকালে এই শহরে বের হলেই অবাক হতে হয়। চারদিক ফাঁকা। শূন্য মেট্রো। রাস্তাঘাটে মাঝে মধ্যে দুয়েকটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে চলে গেলেও মনে হয় যেন বিরান ভূমি। অথচ বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই ভিন্ন রূপ। মেট্রোতে চড়তে গেলে ঘণ্টা দেড়েকের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। বাসে চড়তে হলে গুঁতোগুঁতি করতে হয় অনেকটা পথ। বিশ্বকাপের শহর জেগে ওঠে রাতেই।
নভেম্বর শেষ হয়ে ডিসেম্বর আসি আসি করছে। তাও মরুভূমির বুকে প্রচ রোদের দাপট। এই দাপট কেউ অস্বীকার করতে পারে না। অবশ্য সন্ধ্যা নামলেই মরুভূমির তীব্র ঠান্ডা বাতাস কাঁপন ধরিয়ে দেয়। দোহার স্থানীয় সময় একটায় ফুটবল ম্যাচ থাকলে মেট্রোতে ভিড় শুরু হয় দুপুরে। তাও কেবল ম্যাচের টিকেটধারীরাই ছুটে যায় বিশ্বকাপের মাঠে। অন্যরা দিবানিদ্রা যায়। বিকাল গড়াতেই শুরু হয় দাপাদাপি। আরব উপসাগরের তীরে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে কাতার গড়ে তুলেছে বিখ্যাত কোরনিশ এলাকা। এর পাশেই আছে নানা দর্শনীয় স্থান। আল বিদা পার্ক, সুসজ্জিত উঁচু উঁচু বিল্ডিং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, দোহা টাওয়ারসহ আরও নানা স্থাপনা এই এলাকাতেই। আছে আকর্ষণীয় সব শপিং সেন্টার। ফিফার সবচেয়ে বড় ফ্যান জোন গড়ে তোলা হয়েছে আল বিদা পার্ককে কেন্দ্র করে। এখানে লক্ষাধিক ফুটবলদর্শক এক সঙ্গে খেলা দেখতে পারেন বিরাট বিরাট স্ক্রিনে। দিনের সূর্য বিদায় নিতেই তাই কোরনিশ এবং এর আশেপাশে ভিড় জমায় ফুটবল দর্শকরা। বিশেষ করে যাদের হাতে দিনের ম্যাচের টিকেট নেই, তাদের জন্য উপভোগের সেরা স্থান কোরনিশ।
দিনের আলোতে কোরনিশে গেলে মনে হবে এক বিরান ভূমি। বিকাল গড়াতেই জেগে উঠে এই শহর। বিশ্বকাপের শহর। তখন ঠিকই বিশ্বকাপের পুরো আমেজ পাওয়া যায়। কোরনিশে গেলে চোখে পড়ে আরবের ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজন। আছে আকর্ষণীয় রূপে গড়ে তোলা রেস্টুরেন্ট। যেসব রেস্টুরেন্টের প্রবেশ পথে স্থান পেয়েছে আরবের বিখ্যাত সব লোকদের মুর্তি। পাশেই লেখা থাকে তাদের কীর্তিনামা। এসব রেস্টুরেন্টে বসে আরবীয় খাবারের স্বাদ নিতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। একসঙ্গে ৭০ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা আছে কোরনিশ এলাকায়। স্থানে স্থানে বেজে উঠে আরবীয় সংগীত। সৌদি আরব থেকে আসা ওসামা নামের এক ফুটবল সমর্থক সেই আরবীয় সংগীতের অনুবাদ করে দিলেন, ‘আমাদের কেউ বসরা থেকে, কেউবা বাগদাদ থেকে। কেউ আছে মক্কা থেকে কেউ রিয়াদ থেকে। আমাদের কেউ আছে সিরিয়া থেকে কেউ বা আছে অন্য কোনো শহর থেকে। তবে আমরা সবাই এক। আমরা আরব।’ আরব রাষ্ট্রনায়কদের কাছে না হলেও এখানকার মানুষের কাছে এই সংগীত অনেকটা আরবীয় জাতীয় সংগীতের মতোই। তারা এই সংগীত শুনে নিজেদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার নিয়ে আসে।কোরনিশের নানা স্থানে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় আতশবাজি। আরব উপসাগরের গভীর থেকে শুরু হয় সেসব আতশবাজির মহড়া। শূন্য আকাশে ড্রোন দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা প্রদর্শনী। কখনো ফুটবল নিয়ে সেখানে দৌড়ান ম্যারাডোনা। কখনো ফুটবলের বন্ধনে বাঁধা পড়ে পুরো দুনিয়া। দোহায় আরব বিশ্বের ফুটবল সমর্থকরা বেশ উপভোগ করছে। তবে বেশ কষ্টে আছেন ইউরোপ আর আমেরিকানরা। মধ্যরাতের পানশালায় গিয়ে সময় কাটানো তাদের প্রিয় অভ্যাস। কিন্তু দোহায় সেই সুযোগ কোথায়! পানশালা কোথাও কোথাও থাকলেও তা এতটাই দূরে যা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।