তারুণ্যের প্রতীক কমলা রং। নেদারল্যান্ডস ফুটবল দলের জার্সির রং কমলা। অথচ বিশ্বকাপে কমলা রং বদলে এখন হয়ে গেছে বেদনার রং। লুই ফন গালের ‘কমলা বাহিনী’ এবার মনে-প্রাণে চাইছে বেদনার রং মুছে আনন্দের রঙে রূপ নিতে। আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসবে ভাসতে নেদারল্যান্ডসের আসল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ। নকআউট পর্বে গাকপো, ডি জং, ক্লাসেনদের প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক, মুসা, অ্যারোনসনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কোয়ার্টারে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল।
টিউলিপ ফুলের দেশ নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেদনাহত দল। বলা হয় ফুটবলের ‘চোকার্স’। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলেছে। কিন্তু আকাশপানে ট্রফি তুলে উৎসবে মেতে ওঠা হয়নি কমলা বাহিনীর। অথচ দলটি আধুনিক ফুটবলের রূপকার। ১৯৫৮-১৯৭০ সাল পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপে দর্শক হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। ১৯৭৪ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে অংশ নেয়। রাইনাস মিশেলের ‘অলআউট ফুটবল’ মুগ্ধতা ছড়ায় ফুটবল বিশ্বে। ইয়োহান ক্রুইফের ফুটবল মেধায় আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালির মতো ফুটবল পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে ফাইনাল খেলে হল্যান্ড বা নেদারল্যান্ডস। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কাল হয়ে দাঁড়ায় ফাইনালে। ফেবারিট হয়েও ফাইনালে হেরে যায় স্বাগতিক জার্মানির কাছে। চার বছর পর ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে ফের ফাইনালে ওঠে। এবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। দলকে বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে মাত্র ৩০ বছর বয়সে অবসর নিয়ে নেন ক্রুইফ। খেলতে যাননি বুয়েন্স আয়ার্সে। টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা কমলা বাহিনী সর্বশেষ ফাইনাল খেলে ২০১০ সালে। আগের দুবারের মতো এবারও দেশকে শিরোপা উৎসবে মাতাতে ব্যর্থ হন আরিয়েন রোবেন, রবিন ফন পার্সিরা। দেশটির সবচেয়ে বড় সাফল্য ১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান কাপ জয়। রুড গুলিত, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, ভ্যান বাস্টেনরাও পারেননি বিশ্বকাপ জেতাতে। বিশ্বের অন্যতম ফুটবলশক্তি নেদারল্যান্ডস গতবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেনি। লুই ফন গাল দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলে যায় দলটি। তার কোচিংয়ে সর্বশেষ ১৭ ম্যাচে অপরাজিত কমলা বাহিনী। এবার একঝাঁক তরুণ ফুটবলার নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে এসেছে খেলতে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে হারায় সেনেগালকে। স্বাগতিক কাতারকে হারায় একই ব্যবধানে। ইকুয়েডরের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে সুপার সিক্সটিন খেলছে।
বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বড় অঘটনের স্রষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় ‘দ্য ইয়াঙ্কস’। দলটি ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল। পরের আসরেও খেলে। ৩৮ সালে খেলেনি। ১৯৫০ সালে খেলতে এসেই চমকে দেয় ফুটবল বিশ্বকাপে। গত আসরে দলটি খেলতে পারেনি। ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত খেলেছে। এবার এক জয় ও দুই ড্রয়ে সুপার সিক্সটিনে খেলছে।