বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ছোট্ট ছোট্ট অস্ত্র দিয়েই লড়ব

আমি আগের চেয়ে আরও অভিজ্ঞ

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাতুরাসিংহে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আমি আগের চেয়ে আরও অভিজ্ঞ

সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকায় পা রাখেন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। বিমানবন্দরে মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। শুধু গাড়ি ছাড়ার আগে হাত নেড়ে ছোট্ট করে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার টানে ফিরেছি।’ শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভুত হাতুরাসিংহে দ্বিতীয়বারের মতো সাকিব, তামিম, মুশফিকদের দায়িত্ব নিয়েছেন। বিসিবি এবার তাকে নিয়োগ দিয়েছে ২ বছরের জন্য। গতকাল সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়ার মুখোমুখি হন টাইগারদের নতুন কোচ। পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিজেকে এখন অনেক বেশি পরিণত দাবি করেন হাতুরাসিংহে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কেও এখন অনেক বেশি জানেন বলতেও দ্বিধা করেননি, ‘বাংলাদেশ কোচ হিসেবে আমার আগেরবারের সঙ্গে তুলনা করা হলে আমি বলব, আমি এখন অনেক বেশি অভিজ্ঞ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে আমি অনেক জানি।’ এ দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব দেন স্থানীয় কোচদেরও, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি একা নই, অবশ্যই স্থানীয় কোচরাও অনেক বেশি অবদান রেখেছেন। গত কয়েক বছর বাংলাদেশের স্থানীয় কোচরা অসাধারণ কাজ করে গেছেন এ দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে।’

হাতুরাসিংহে প্রথমবার দায়িত্ব পালন করেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। তার কোচিংয়ের প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের (২০১৫) কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে। টেস্টে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কাকে হারায়। সাফল্যেও গ্রাফ উপরে উঠলেও সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্কটা শেষ দিকে শীতল হয়ে পড়েছিল। সাকিবসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তখন। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে সম্পর্ক শীতল থাকার কথা স্বীকার করেননি, ‘সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে একদমই সমস্যা নেই। আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সবার নজর এখন দলের ভালোর দিকে। প্রথমবারও কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল দলের ভালোর দিকে সবার নজর রাখা।’ সাকিব এখন টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক। হাতুরাসিংহে তিন ফরম্যাটেরই কোচ। সাকিবকে তিনি কিভাবে সামলাবেন, এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাকিবের নিবেদন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না- এমন প্রশ্ন আমি কখনোই তুলিনি। এই প্রথম শুনলাম।’

গতকাল ছিল ক্রিকেটারদের ঐচ্ছিক ছুটি। তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ, ইয়াসির আলি চৌধুরী, লিটন দাস, তাইজুল ইসলামরা ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন হাতুরাসিংহে। তিনি জানান, এর আগে আরও কয়েকবার টাইগারদের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিল বিসিবি, কিন্তু নেননি। গত ডিসেম্বরে টি-২০ বিশ্বকাপের সময় বিসিবির সভাপতির সঙ্গে আলোচনার পর মনে হয়েছিল এবার দায়িত্ব নেওয়ার উপযুক্ত সময়, ‘আমাকে আগেও আরও কয়েকবার দায়িত্ব নিতে বলেছিল। টি-২০ বিশ্বকাপের সময় বিসিবি সভাপতি ও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা হয় আমার। আমরা কিছু জিনিস আলোচনা করি। তখন আমার মনে হয়, ফেরার জন্য এটিই উপযুক্ত সময়। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ এগিয়ে আসছে। যদি নিউ সাউথ ওয়েলসের মৌসুম শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতাম, তাহলে হয়তো একটু দেরি হয়ে যেত। তাই বিগ ব্যাশ শেষ হতেই চলে আসার সিদ্ধান্ত নেই।’ প্রথমবার হাতুরাসিংহের প্রথম অ্যাসাইমেন্ট ছিল ঘরের মাটিতে ভারতে বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। দ্বিতীয় নিয়োগেও তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ঘরের মাঠে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

হাতুরাসিংহের প্রথম মেয়াদে ঘরের মাঠের সুবিধাকে কাজে লাগাতে উইকেটগুলোকে স্পিন সহায়ক বানানো হয়েছিল। এবার কী সেই পথে হাঁটবেন তিনি? রাসেল ডমিঙ্গো স্পোর্টিং উইকেটে খেলানোর চেষ্টা করেছেন দলকে। দায়িত্ব নিয়ে হাতুরাসিংহে কথা বলে কিউরেটর গামিনির সঙ্গে। গতকাল উইকেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘ঘরের মাঠের সুবিধা বলতে কী বোঝায়? যখন আমরা নিউজিল্যান্ডে যাই, কী ধরনের উইকেটে খেলি? ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কী করে তাদের ঘরের মাঠে? ভারত এখন ঘরের মাঠে কী করছে? দেশের বাইরে গেলে আমাদের যা আছে, তা দিয়েই ম্যানেজ করতে হবে। যদি মিসাইল না থাকে, তাহলে তুমি কীভাবে লড়াই করবে। আমাদের তো গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে। তাই না? ওদের আমাদের ঘরে আসতে দাও, আমরা ছোট্ট ছোট্ট অস্ত্র দিয়ে লড়ব। যদি আমাদের অস্ত্র না থাকে, তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারব না। আমরা শুধু খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে পারি।’

হাতুরাসিংহের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ দিয়ে। এরপর আয়ারল্যান্ডে খেলবে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। অক্টোবর-নভেম্বরে ভারতের মাটিতে খেলবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ।     

সর্বশেষ খবর