মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেভাবে জেগেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট

মনোয়ার হক

টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এ বিজয় নিঃসন্দেহে গৌরবের। এর আগে নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়েছিল টাইগাররা। টি-২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এমন কোনো দেশ নেই যে বাংলাদেশের কাছে হারেনি। দুর্বল দেশের কথা বাদই দিলাম, ওয়ানতে তো বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। তিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমনকি ভারতের বিপক্ষে সিরিজও জিতেছে বাংলাদেশ। অন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ না জিতলেও ম্যাচ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাও সিরিজ হেরেছে টাইগারদের কাছে। আর নিউজিল্যান্ড তো দুবারই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। টেস্টেও গৌরব কম নয়। ওয়ানডে ও টি-২০ বিশ্বকাপে এখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি। তবু বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিশ্বে পরিচিত মুখ। সাকিব, মাশরাফি, তামিম, মাহমুদুল্লা, মুশফিক, মুস্তাফিজ বা মিরাজকে বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা ভালোমতো চেনেন ও জানেন। ফুটবলে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের অবস্থাও অনেকটা তাই। দলীয় ও ব্যক্তিগত রেকর্ডে বাংলাদেশ ভরপুর। এক সময়ে বাংলাদেশে ফুটবলে আকাশছোঁয়ার মতো জনপ্রিয়তা থাকলেও সবকিছু এখন ক্রিকেটকে ঘিরেই। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রগতি ও জনপ্রিয়তার পেছনে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফির শিরোপা জেতাটাই মূল ভূমিকা রেখেছে। কথাটি মিথ্যা নয়, বাংলাদেশ যদি সেবার আইসিসির ট্রফির মাধ্যমে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুযোগ না পেত তাহলে এই ক্রিকেট অন্ধকারে হারিয়ে যেত। এ খেলা নিয়ে কারও আগ্রহই থাকত না।

আইসিসির শিরোপা ক্রিকেটে বাংলাদেশের বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটে যে রমরমা অবস্থা তার পথ দেখিয়েছে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ পরবর্তীতে যা প্রিমিয়ার লিগে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে জাগিয়ে রাখে এ লিগই। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে ক্রিকেট লিগের যাত্রা। তখন ক্রিকেটের এতটাই দুর্দিন ছিল যে মাঠে লিগ গড়ানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সবার চোখ ফুটবলের দিকে। তাই সেরা সেরা খেলোয়াড়দের পেতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পিছপা হতো না। ১৯৮০ সালের এক ঘটনা না বললেই নয়। ফুটবলে মোহামেডানে দল গড়তে খরচ পড়েছিল দেড় কোটি টাকার মতো। অন্যদিকে ক্রিকেটে দল গড়ার অর্থই ছিল না। পরে ফুটবলে যে টাকা বেঁচে যায় তা দিয়েই দল গড়ে।

ক্রিকেট লিগ চালাতে মোজ্জাফর হোসেন পল্টু, রইস উদ্দিন আহমেদ, রেজা-ই করিম, আমিনুল হক মনি, মাজহারুল ইসলাম তান্না, মুন্না তানভীর হায়দার, আশরাফুল হকদের পরিশ্রম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সত্যি বলতে কি তাদের সাংগঠনিক ক্যারিশমায় বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন জ্বল জ্বল করছে। যদিও তাদের নাম আড়ালে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু যা সত্যি তাতো বলতেই হবে। ঢাকা ক্রিকেট লিগ থেকেই তো অসংখ্য তারকার সৃষ্টি। শামীম কবির, রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা, ইউসুফ বাবু, ওয়াহিদ, পরবর্তীতে লিপু, নান্নু, আকরাম, মনিদের আবির্ভাব ঘটে লিগ থেকে। এখন তো সাকিবদের সুদিন। রইস উদ্দিনদের পরিশ্রম ও রকিবুলরা যদি পথ না দেখাতেন তা হলে কি বাংলাদেশের ক্রিকেট এত দূর আসত?

 

সর্বশেষ খবর