বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

‘ফিল্ডিংয়ে আমরা এশিয়ার সেরা’

এত দিন বাংলাদেশ ছিল ওয়ানডে-সর্বস্ব দল। কিন্তু এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে যেন নতুন উচ্চতায় চলে গেলেন টাইগাররা। যদিও ২০২১ সালে টানা দুই টি-২০ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

মেজবাহ্-উল-হক

‘ফিল্ডিংয়ে আমরা এশিয়ার সেরা’

ছবি : রোহেত রাজীব

ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ১৪তম ওভারের প্রথম ২ বলে। উইকেটের পেছনে অনেকটা লাফিয়ে উঠে ক্যারিশম্যাটিক ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। ইংল্যান্ডের ৯৫ রানের জুটি ভেঙে যায়। ডেভিড মালান ৫৩ রানে আউট।

পরের বলেই মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত থ্রোতে জস বাটলার রানআউট। ৪০ রানে থেমে যায় ইংলিশ ক্যাপ্টেনের দারুণ ইনিংস।

পরপর ২ বলে দুই দুটি অসাধারণ ফিল্ডিং। এ ছাড়া ম্যাচে বেশ কটি দর্শনীয় ক্যাচ নিয়েছে বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি বাউন্ডারিও বাঁচিয়েছেন স্বাগতিক ফিল্ডাররা। ইংল্যান্ডকে টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং টিম বললেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, ‘ইংল্যান্ড ফিল্ডিংয়ে সেরা। কিন্তু এই সিরিজে আমার মনে হয় আমরা ইংল্যান্ডের চেয়েও ভালো ফিল্ডিং করেছি। ফিল্ডিংয়ে আমাদের উন্নতি সবার চোখে পড়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল সেরা ফিল্ডিং টিম তৈরি করা। আমার মনে হয় এই দলটি এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং টিম।’

এত দিন বাংলাদেশ ছিল ওয়ানডে-সর্বস্ব দল। কিন্তু এবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে যেন নতুন উচ্চতায় চলে গেলেন টাইগাররা। যদিও ২০২১ সালে টানা দুই টি-২০ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেই দুই সিরিজ জয় নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।

‘হোম কন্ডিশন’ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ যে ফল নিজের করে নিয়েছিল তা বোঝা যায় আমিরাত বিশ্বকাপে টাইগারদের ভরাডুবির পর। এর পরই যেন টি-২০ নিয়ে আলাদাভাবে কাজ শুরু করে লাল-সবুজরা। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপে তার ফলও পেয়েছে বাংলাদেশ।

সে কারণেই এবারের বিজয়ের গুরুত্ব সাকিবের কাছে আলাদা। তিনি বলেন, ‘ওই সিরিজের (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) সঙ্গে তুলনায় যেতে চাই না। এবার আমাদের অ্যাপ্রোচ অন্যরকম ছিল।’ টি-২০তে বাংলাদেশ দলের পরিবর্তনটা শুরু হয়েছে সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব পাওয়ার পর। গত এশিয়া কাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পরিবর্তে তিনি দায়িত্ব নেন। সাকিব বলেন, ‘এশিয়া কাপ থেকে আমরা টি-২০তে ভালো করা শুরু করেছি। বিশ্বকাপে আমরা একটি ম্যাচ (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) জিতলে তো সেমিফাইনালে খেলতাম। আমরা টি-২০তে একটু একটু করে ভালো করছি। বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে জয়ের আত্মবিশ্বাসটা আমরা বিশ্বকাপ থেকে পেয়েছি।’

ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি এই সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিও চমৎকার হয়েছে। বোলারদের নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমাদের বোলিং ইউনিটটা খুবই ভালো ছিল। আগে সাধারণত আমরা টি-২০তে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতাম। কিন্তু এখন বোলিং অপশন বেশি থাকে। টি-২০তে বোলাররাই ম্যাচ জেতায়।’

ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারের মধ্যে লিটনই কেবল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো করতে পারছিলেন না। শেষ ম্যাচে এসে জ্বলে উঠল তার ব্যাটও। লিটন খেললেন ৫৭ বলে ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস। একটি ছক্কার সঙ্গে ১০টি চারের মার। অথচ ইংলিশদের বিরুদ্ধে আগের পাঁচ ইনিংসে (তিন ওয়ানডে ও দুই টি-২০) ৭, ০, ০, ১২ ও ৯ রান করেন। সেই লিটনই শেষ ম্যাচে নিজেকে যেন উজাড় করে দিলেন।

নাজমুল হোসেন শান্ত এবার সুপার ফর্মে। ইংলিশদের বিরুদ্ধে তার আগের পাঁচ ইনিংস ৫৮, ০, ৫৩, ৫১ ও ৪৬*। আর গতকাল খেললেন হার না মানা আরেকটি ৪৭ রানের ইনিংস। ইনিংসের শুরুতেই ইংলিশ স্পিনার মঈন আলীর বলে লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকালেন, তা ছিল দেখার মতো। এরপর রেহান আহমেদের ওভারে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল গ্যালারির মাঝে আছড়ে ফেলেন। ক্যারিশম্যাটিক এ শট দুটিই যে বলে দিচ্ছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শান্ত কতটা আত্মবিশ্বাসী।

দ্বিতীয় উইকেটে লিটনের সঙ্গে তার ৫৮ বলে ৮৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৫৮ রানের সংগ্রহ। তবে এমন দিনে টাইগারদের দলীয় স্কোরলাইনটা ১৭০ কিংবা ১৮০ হলেই ভালো হতো! কেননা পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৪৬ রান, এরপর ১২.২ ওভারে দলীয় সেঞ্চুরি। ১৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৩৯। কিন্তু স্লগ ওভারে এলো মাত্র ২৭ রান। হাতে ৯ উইকেট থাকার পরও স্লগ ওভারে তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

তবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বাংলাওয়াশ করার মধুর ক্ষণে এমন ছোটখাটো ভুলত্রুটি চোখে পড়ার মতো নয়!

সর্বশেষ খবর