সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেষ পর্যন্ত কী হবে বাফুফের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শেষ পর্যন্ত কী হবে বাফুফের

মিডিয়া যেন সত্তর ও আশির দশকে ফিরে গেছে। সে সময়ে পত্রিকায় ফুটবলের খবরই প্রাধান্য পেত। গত কয়েক দিন ধরে আবার তা-ই দেখা যাচ্ছে। খেলার পাতায় লিড নিউজ করা হচ্ছে ফুটবল ঘিরে। এ ছাড়া থাকছে ফুটবলেরই ছোটখাটো নিউজ। তবে পার্থক্যটা অনেক। আগে দেশের ফুটবলে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ছিল। লিগ হতো জমজমাট। গ্যালারি ছিল ভরপুর। সবকিছু মিলিয়ে পজিটিভই ছিল। এখন নেতিবাচক খবরেই সীমাবদ্ধ। মেয়েরা আশার আলো জ্বালিয়ে রাখলেও পুরুষ ফুটবল চরম বেহাল। ২০ বছর ধরে জাতীয় দলের কোনো শিরোপা নেই। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও সেমি ফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। এই তো সেদিন ১৯৯ নম্বর র‌্যাঙ্কিয়ে থাকা সিশেলসের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে।

যাক, ফুটবলের অবনতি ঘটতে পারে। কিন্তু ফেডারেশনে তো চেইন অব কমান্ড বা স্বচ্ছতা থাকবে। তা-না হলে নির্বাচনের মাধ্যমে লম্বা কমিটি করে লাভ কী। বাফুফের দুর্নীতি নতুন ঘটনা নয়। এর আগে এস এ সুলতান সভাপতি থাকা অবস্থায়ও অভিযোগ উঠেছিল। শোনা যায়, বিদায় বেলায় তিনি ফেডারেশনের বিরাট ফান্ড ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে যান। তবে এসব ভিত্তিহীন উল্লেখ করেছেন এস এ সুলতান। কাজী সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার পর ফুটবলে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, আগে ছিল পুকুর চুরি এখন তা সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ভিতরে ভিতরে যে চুরি হচ্ছিল তা টেরও পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এত বড় লংকাকান্ড  ঘটবে তা ভাবাই যায় না। বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা (ফিফা) যে অনুদান দেয়, তা কী কী কাজে খরচ হয় সেটা ফিফাকে হিসাব দিতে হয়।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ সে হিসাবও দিয়েছিলেন। গড়মিল থাকায় ফিফা সোহাগকে তাদের দফতরে ডেকেও নিয়েছিল। সোহাগ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি। ফিফা সব তদন্ত করে হিসাবে বড় গড়মিল পেয়েছে। আর্থিক অনিয়ম করায় ফুটবলে সব রকম কর্মকান্ড  থেকে সোহাগকে দুই বছর নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। তাছাড়া আবার বড় অঙ্কের জরিমানাও দিতে হবে। ফিফা অনুদান দেয় সে দেশের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য। সেখানে যদি কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়, তা তারা ছাড় দেবে কেন?

সোহাগ নিষিদ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তিনি এখন বর্তমান থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক হয়ে গেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- সোহাগ ফেডারেশনের বেতনভুক্ত কর্মচারী। যে কোনো কাজে তাকে অনুমতি নিতে হয়। সোহাগ যে কারণে নিষিদ্ধ হয়েছেন সে হিসাবের কাগজপত্র সভাপতি সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী বা অন্য, কেউ দেখাননি তা কি বিশ্বাসযোগ্য? সবচেয়ে বড় কথা, বার্ষিক সাধারণ সভায় অডিট নিয়ে আপত্তি তোলেননি কেউ। তাই তো বলা হচ্ছে, মাখন খেয়েছেন অন্যরা আর ফেঁসেছেন সোহাগই। ফিফা কাউকে ছাড় দেবে না। ঠিকই বের করে ফেলবে এর সঙ্গে কারা জড়িত বা কার ইন্ধন আছে।

২০০২ সালে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ফেডারেশন ভেঙে দেওয়ায় ফিফা বাংলাদেশকে বাহিষ্কার করেছিল। ২১ বছর পর আরও একবার কলঙ্কে নাম লেখাল দেশের ফুটবল। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল অথচ সালাউদ্দিন এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে তিনি কিছুই জানেন না। বিষয়টি লজ্জাকর। তাও তিনি বলতে নারাজ। সালাউদ্দিন মনে করছেন তিনি সভাপতি থেকে যাবেন। নতুন এক সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দিলে সব শেষ। না, সালাউদ্দিনও জানেন তিনি এখন কতটা বিপদে আছেন। তাঁর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। সরকারের প্রভাবশালী মহল নাকি ইতোমধ্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানকে নির্দেশ দিয়েছে। যেহেতু দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে, তাই এ কমিটিকে কীভাবে বিলুপ্ত করা যায়। হুট করে ফেডারেশন ভাঙা যাবে না। তাহলে আবার ফিফা বাংলাদেশকেই সাসপেন্ড করবে। বর্তমান কমিটি সদস্যদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে ফুটবল ঘিরে নতুন চিন্তাভাবনা করছে সরকার। ফুটবলে অর্থ লোপাট হয়েছে কি-না তার জন্য শক্তিশালী তদন্ত কমিটিও হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাফুফের সামনে কী ঘটবে তা সময়ই বলে দেবে।

সর্বশেষ খবর