শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিরপুরের প্রতিচ্ছবি চেমসফোর্ডে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চেমসফোর্ডের ছোট্ট গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। ২৪ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরায় দর্শকের এমন উচ্ছ্বাস তা কিন্তু নয়। গ্যালারির সমর্থকরা সবাই বাঙালি। টাইগারদের খেলা বলেই গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড়। আয়ারল্যান্ড-বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচটি ইংল্যান্ডের মাটিতে হচ্ছিল নাকি মিরপুরে-তা বোঝার উপায় ছিল না।

ইংল্যান্ডের মাটিতে বরাবরই বাংলাদেশের সমর্থক অনেক বেশি থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ক্রিকেট নিয়ে এতটাই উজ্জীবিত যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা হলেও গ্যালারিতে প্রায় অর্ধেক দর্শক থাকে লাল-সবুজের। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কিংবা ২০১৯ বিশ্বকাপের সময়ে দেখা গেছে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের দর্শকদের জোয়ার। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ ম্যাচেও দেখা যায় একই চিত্র।

তবে প্রথম ওয়ানডেতে দর্শকরা হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। বৃষ্টির জন্য ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে ২৪৬ রান করেছিল। ২৪৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ড ১৬.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান করার পর খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। আর মাত্র ৩.৩ ওভার খেলা হলেই ডার্কওয়াথ/লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচের ফল নির্ধারিণ হতো। অবশ্য তাতে লাভ হতো না আইরিশদের।

তবে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের চেয়েও বেশি হতাশ হয়েছে আয়ারল্যান্ড। কারণ, এটি ছিল বিশ্বকাপের সুপার কাপের ম্যাচ। আর বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সামান্য একটি সুযোগ ছিল আইরিশদের সামনে। তারা যদি তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে পারত তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে ভারত বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট পেয়ে যেত। তখন প্রোটিয়াদের খেলতে হতো বাছাইপর্ব। কিন্তু ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে গেল। তাই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট পেয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন বাছাইপর্ব খেলতে হবে আইরিশদের।

এই সিরিজকে পাখির চোখ করে রেখেছিল আয়ারল্যান্ড। সে কারণে সিরিজটি নিয়ে বেশ সতর্কও ছিল। হোস্ট হওয়ার পরও তারা সিরিজটি আয়ারল্যান্ডে না খেলার পেছনে বড় কারণ ছিল এ সময় আয়ারল্যান্ডে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই কোনোভাবেই যাতে ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত না হয়। এই চিন্তা থেকেই চেমসফোর্ডে খেলে। তা ছাড়া আয়ারল্যান্ডের উইকেট ও কন্ডিশনের সঙ্গে চেমসফোর্ডের কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে গেল।

ম্যাচে প্রথম থেকেই ভীষণ সিরিয়াস মনে হয়েছে আইরিশদের। জয়ের জন্য যে তারা কতটা মরিয়া সেটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা গেছে। মেঘলা আকাশ দেখে আইরিশ দলপতি অ্যান্ডি বলবার্নি টস জিতে প্রথমে বোলিং নেন। তাদের শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দিনে ম্যাচের লাগামটা শক্ত করে ধরে। মাত্র ১৫ রানে দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবালকে হারানোর পর সাকিব আল হাসানও উইকেটে লম্বা সময় থাকতে পারেননি। কন্ডিশন উইকেটের কথা চিন্তা করে এ ম্যাচে বাংলাদেশ একটি বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলিয়েছিল। কিন্তু তারপরও রান মাত্র ২৪৬। একমাত্র মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কারও ফিফটি নেই। লিটন দাস প্রথম বলেই আউট। এ ছাড়া আরও পাঁচ ব্যাটসম্যান উইকেটে সেট হওয়ার পরও তাদের ইনিংসকে ফিফটিতে রূপান্তর করতে পারেননি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উদাসীন ব্যাটিংয়ের সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন আইরিশ পেসাররা।

তবে ব্যাটিংয়ে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি আইরিশদের। বৃষ্টির আগে যতক্ষণ ব্যাটিং করেছে দলটি, তাদের বেশ চাপের মধ্যেই রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। একে তো টপ অর্ডারের সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে তারা হারিয়েছিল, তা ছাড়া রানরেটও ভালো ছিল না (৩.৯৩)।

পরিত্যক্ত ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটা শিক্ষাও বটে। পাঁচ পাঁচজন ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হওয়ার পরও কেন বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না? ম্যাচের পর ব্যাটিংয়ের ব্যবচ্ছেদ করে নিশ্চয়ই কোচ হাতুরাসিংহে তার শিষ্যদের সাবধান করে দিয়েছেন! আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামীকাল।

সর্বশেষ খবর