সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ম্যানসিটির স্বপ্নপূরণ

ইন্টার মিলান ০ : ১ ম্যানসিটি (রদ্রি ৬৮)

রাশেদুর রহমান

ম্যানসিটির স্বপ্নপূরণ

শেষ হলো দীর্ঘ অপেক্ষা। বেরিয়ে গেল চেপে রাখা সব দীর্ঘশ্বাস। অনেক সাধনার পর ধরা দিল কাক্সিক্ষত ট্রফি। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চকচকে ট্রফি নিয়ে উৎসব করার সময় ম্যানচেস্টার সিটির ফুটবলারদের চোখ-মুখ ফুটে বেরিয়ে আসছিল উচ্ছ্বাস। কোচ পেপ গার্ডিওলার শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল তার হৃদয়ের কথা। ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামের হাজারো ম্যানসিটি সমর্থকও বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন। একে-অপরকে জড়িয়ে, গলা ফাটিয়ে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেন তারা।

ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার সিটি স্বপ্ন পূরণের আশা নিয়ে খেলতে নামে। যে স্বপ্ন তারা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছে। পেপ গার্ডিওলা ২০১৬ সালে দলটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আশা বাড়তে থাকে ম্যানসিটি সমর্থকদের। প্রথমদিকে গার্ডিওলা বলতেন, ইউরোপসেরা হওয়ার জন্য এখনো অনেক প্রস্তুতি বাকি ম্যানসিটির। গত কয়েক মৌসুমে গার্ডিওলা দলটাকে ইস্পাতের মতোই দৃঢ়তাপূর্ণ করে তোলেন। ক্ষুরধার আক্রমণভাগ, বরফের মতো শীতল আর শক্ত ডিফেন্স লাইন নিয়ে ইউরোপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে নামেন তিনি। ২০২১ সালের অপূর্ণ মিশন শেষ করেন শনিবার। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারায় ম্যানসিটি। দলের পক্ষে ৬৮ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন স্প্যানিশ ফুটবলার রদ্রি। তবে জয়ের উৎসবে বারবারই বাগড়া দিয়েছে ইন্টার মিলান। ফেডেরিকোর হেডে বলটা জালেও জড়াতে পারত! রোমেলু লুকাকোর শেষদিকের শটটা এডারসন সেভ করতে ব্যর্থ হলেও বিপদ হতে পারত! তবে ম্যানসিটির জয়টা ধরা দিয়েছে এমন অনেক কঠিন পরীক্ষায় পাস করার ফলেই। এই জয়ের মধ্য দিয়েই ‘মিশন ট্রেবল’ সম্পন্ন করল ম্যানসিটি। দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয় করল তারা। আগেই জয় করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিও ঘরে তুলল। এর আগে ম্যানইউ প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে এই কৃতিত্ব গড়ে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে। আলেক্স ফার্গুসন তখন ম্যানইউর কোচ। ম্যানসিটিকে ট্রেবল জেতানোর পর ফার্গুসনের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন গার্ডিওলা। ফোনে কথা হয়েছে দুজনের। গার্ডিওলা জানিয়েছেন, ফার্গুসনের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা পেয়ে আপ্লুত তিনি।

‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’ নামের ম্যাচটা সম্পর্কে ফুটবলপ্রেমীরা বেশ ভালোই জানেন। ২০০৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলের জালে প্রথমার্ধেই তিন গোল দিয়ে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে নেয় এসি মিলান। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধেই এক অভিনব ঘটনার জন্ম দেয় লিভারপুল। জেরার্ড, স্মাইসার ও আলোনসো তিন গোল করে দলকে সমতায় নিয়ে আসেন মাত্র ৭ মিনিটের ব্যবধানে। এরপর টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে জিতে যায় লিভারপুল। সেই আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে ম্যাচ। কোনো বিস্ময়কর তেমন কিছু কী হবে! হয়নি। ইন্টার মিলানের ডিফেন্সিভ মনোভাব আর ম্যানসিটির অতিরিক্ত সতর্কতা ম্যাচটার উত্তেজনা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। অন টার্গেটে ম্যানসিটি শট নিয়েছে কেবল চারটা। ইন্টার মিলান অন টার্গেটে শট নিয়েছে ছয়টা। দুই পক্ষই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে। তবে ইন্টার মিলান শেষ রক্ষা আর করতে পারেনি। রদ্রি ম্যানসিটির জয়ের উপলক্ষ এনে দেন।

ইন্টার মিলান দীর্ঘদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল। ২০১০ সালে শেষবার ফাইনাল খেলে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল (বায়ার্নকে হারিয়ে)। ফাইনালের আগে দলটির কোচ ইনজাগি নিজেদের ফেবারিট না মানলেও দারুণ এক ফাইনালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা ভালোই ছিল। ম্যানসিটির আক্রমণ রুখে দিয়ে হঠাৎ আক্রমণ করে গোল আদায় করা। কিন্তু ম্যানসিটির ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি তার দল। অবশ্য ফাইনালের পর ইনজাগি দাবি করেছেন, ইন্টার মিলান হারার মতো খেলেনি ফাইনালে। তবে ম্যানসিটির শ্রেষ্ঠত্বও স্বীকার করেছেন ইনজাগি। অন্তত একটা বছর সবাইকে স্বীকার করতেই হবে, ইউরোপের সেরা দল ম্যানসিটি।

 

রে ক র্ড

♦ ষষ্ঠ ইংলিশ দল হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (ইউরোপিয়ান কাপ) জয় করল ম্যানসিটি। এর আগে অ্যাস্টন ভিলা, চেলসি, লিভারপুল, ম্যানইউ এবং নটিংহ্যাম ফরেস্ট ইউরোপসেরা হয়েছে। জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের তিনটি করে ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

 

♦ দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটি ট্রেবল (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কাপ ও লিগ) জয় করল। এর আগে আলেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে এই রেকর্ড গড়েছিল।

 

♦ প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয় করলেন পেপ গার্ডিওলা। এর আগে তিনি বার্সেলোনার কোচ হিসেবে ২০০৮-০৯ মৌসুমে ট্রেবল জয় করেন।

 

♦ ম্যানচেস্টার সিটির আগে ট্রেবল জয়ের রেকর্ড আছে ইউরোপের সাতটি দলের। স্কটল্যান্ডের সেলটিক (১৯৬৭-৬৭), নেদারল্যান্ডসের আয়াক্স (১৯৭১-৭২) ও পিএসভি (১৯৮৭-৮৮), ম্যানইউ (১৯৯৮-৯৯), বার্সেলোনা (২০০৯-১০ ও ২০১৪-১৫), ইন্টার মিলান (২০০৯-১০) এবং বায়ার্ন মিউনিখ (২০১২-১৩ ও ২০১৯-২০)।

 

গার্ডিওলার অনন্য রেকর্ড

বার্সেলোনার কোচ হিসেবে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছেন পেপ গার্ডিওলা (২০০৯ ও ২০১১ সালে)। ইন্টার মিলানকে হারিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করলেন তিনি। বার্সেলোনার পর ম্যানসিটির কোচ হিসেবেও জয় করলেন ট্রেবল (লিগ, কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ)। এই রেকর্ড শুধু গার্ডিওলারই। তিনটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ (ইউরোপিয়ান কাপ) জয় করেছেন বব পেইসলি এবং জিনেদিন জিদানও। তবে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করে সবার ওপরে আছেন কার্লো আনচেলত্তি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর