বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবুজ গালিচায় টেস্ট পরীক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

সবুজ গালিচায় টেস্ট পরীক্ষা

প্রস্তুত পেসাররা। বাঁ দিক থেকে মুশফিক হাসান, খালেদ আহমেদ, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন - রোহেত রাজীব

প্রেসবক্স থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল পিচ বেশ সবুজ। দুপুরে আফগান ক্রিকেটাররা মাঠে প্রবেশের পূর্বে গ্রাউন্ডসম্যানরা উইকেটের সবশেষ প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছিলেন। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, আজ যে উইকেটে খেলা হবে- সেটির সঙ্গে পাশের উইকেটের পার্থক্য খুব কমই।

একটি ক্রিকেট ভেন্যুতে অনেক উইকেট/পিচ থাকে। সবার ওপরে সবুজ ঘাসের একটা লেয়ার থাকে। যে উইকেটে খেলা হয়, সেটি পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টের উইকেট দেখে মনে হচ্ছিল পাশের উইকেটের মতোই সবুজ গালিচা।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এমন উইকেট দেখতে পাওয়াটা ‘হ্যালির ধূমকেতু’র মতো ব্যাপার! কারণ, বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্রো স্পিন। তাই উইকেট হবে ঘূর্ণি বোলারদের স্বর্গ। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলটা যখন আফগানিস্তান, তখন তো আর স্পিন উইকেট বানিয়ে লাভ নেই। কারণ, আফগানরা স্পিনে মাস্টার! যদিও তাদের দলে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো স্পিনার নেই। সেরা তারকা রশিদ খানের ইনজুরি। তারপরও স্পিনে সব সময়ই অন্যরকম এই দলটি।

বছর চারেক আগে আফগানরা টেস্টের নবীনতম দল থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ, তখন আফগানদের স্পিন আক্রমণের কথা বিবেচনায় না এনে স্পিন-উইকেট তৈরি করে বিপদ ডেকে এনেছিল বাংলাদেশ। এবার আর সে পথে হাঁটছে না লাল-সবুজরা।

তৈরি করা হয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ এক উইকেট। ঘাসের কারণে উইকেটকে বেশি সবুজ দেখা গেলেও এখানে যে কেবল পেসাররাই সুবিধা পাবেন এমনটা মনে করেন না বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তিনি বলেন, ‘উইকেট সবুজ। অবশ্য গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে সে জন্য। আমি এখানে সবুজ উইকেট এর আগেও দেখেছি। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধেই তো আমরা এমন উইকেটে খেলেছি। তা ছাড়া আমাদের তো কয়েকজন ভালো মানের ফাস্ট বোলারও আছে। এখন প্রয়োজন কন্ডিশন অনুযায়ী তাদের শক্তিমত্তা দেখিয়ে দেওয়া।’

সবুজ উইকেট মানেই পেসারদের স্বর্গ- একথা যেমন ঠিক, কিন্তু ম্যাচের শেষের দিকে মুদ্রার উল্টা পিঠও দেখা যায় মিরপুরে। সেটিও কারও অজানা নয়। সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন হাতুরা, ‘খেলা শুরু হচ্ছে সবুজ উইকেটে এটা যেমন ঠিক, কিন্তু একটাও ঠিক যে অতিরিক্ত গরমে মিরপুরের উইকেট দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। তখন কিন্তু স্পিনাররা অনেক ভালো করে। আমাদের দলে ভালো মানের স্পিনারও আছে। আমার মনে হয়েছে এই উইকেট খুবই স্পোর্টিং। এখানে ব্যাটারদের জন্য যেমন সুবিধা থাকছে, তেমনি বোলারদের জন্যও থাকছে। সেটা হোক পেসার কিংবা স্পিনার। আমি মনে করি এমন উইকেটে দারুণ একটা লড়াই হবে।’

টেস্টে সাকিব আল হাসান নেই সেটা তো সবারই জানা। শেষ পর্যন্ত খেলছেন না তামিম ইকবালও। তিনি পুরোপুরি ফিট নন।

মিরপুরের এই উইকেট শেষের দিকে স্পিনবান্ধব হলেও শুরুর দুই-তিন দিন থাকবে নিঃসন্দেহে পেস স্বর্গ। তাই তিন পেসার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের সঙ্গে খালেদ আহমেদ কিংবা শরিফুল ইসলামের মধ্যে একজন। তবে শেষ পর্যন্ত যদি তাসকিনকে নাও দেখা যায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, সবে ইনজুরি থেকে ফিরেছেন গতি তারকা। তাকে নিয়ে কোনো ক্রমেই ঝুঁকি নিতে চান না কোচ। হাতুরাসিংহে বলেন, ‘অনুশীলনে তাসকিনকে বেশ ভালোই মনে হয়েছে। আমি মনে করি শারীরিকভাবে সে এখন খুবই ভালো অবস্থায় আছে। সে যদি মনে করে খেলার জন্য প্রস্তুত তাহলে তাকে ম্যাচ খেলানো থেকে বিরত রাখার কোনো কারণ নেই। তবে সকালে সবকিছু দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এমন উইকেটে দুই দলের জন্যই সুযোগ ফিফটি-ফিফটি। ঘরের মাঠে খেলা হলেও তথাকথিত ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ থাকছে না বললেই চলে। দুই দলের জন্যই সাফল্যের দরজা খোলা। শুরুতে পেসারদের দাপট এবং শেষে স্পিনারদের ঝলক। তবে বোলারদের যেমন ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হবে তেমনি ব্যাটারদেরও নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে। উইকেট দেখে দুই দলই খুশি। এমন সবুজ গালিচাতেই হবে দুই দলের সত্যিকারের টেস্ট পরীক্ষা।

সর্বশেষ খবর