শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

তৃপ্তির দিনে অস্বস্তির ‘২৭ মিনিট’

মেজবাহ্-উল-হক

তৃপ্তির দিনে অস্বস্তির ‘২৭ মিনিট’

ছবি : রোহেত রাজীব

জয়টা এখন বাংলাদেশের জন্য কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র! ৩৭০ রানের লিড। এখনো ৯ উইকেট হাতে রয়েছে বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে টাইগাররা ৩৮২ রান করার পর আফগানিস্তানকে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে দেয়। ২৩৬ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শান্ত ও জাকিরের ঝড়ে ১ উইকেটে ১৩৪ রান করেছে বাংলাদেশ।

তবে দিনের শেষটা যতটা তৃপ্তিদায়ক সকালটা ছিল রীতিমতো বিভীষিকাময়। প্রথম ইনিংসের শেষের ৯ রান করতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। ২৭ মিনিটের এক ঝড়ে টাইগারদের লোয়ার অর্ডার লন্ডভন্ড হয়ে যায়। আগের দিনের ৩৬২ রানের সঙ্গে কাল আর মাত্র ২০ রান যোগ করতে পেরেছে স্বাগতিকরা। এরপর বোলারদের দাপট এবং পরের ইনিংসে টপ অর্ডারের মারকুটে ব্যাটিং সব ভুলিয়ে দিয়েছে।

উইকেট সবুজ হলেও এখানে রান করা যে মোটেও কঠিন নয় তা শান্ত-জাকিরের ব্যাটিং দেখেই বোঝা যায়! আর আফগানদের এই বোলিং আক্রমণ যে একেবারেই নখদন্তহীন তা-ও প্রমাণিত! এই উইকেটে এবং এমন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কীভাবে ২৭ মিনিটের মধ্যে ৫ উইকেট পড়ে গেল বাংলাদেশের?

সকালে উইকেটে ছিলেন টেস্টের দুই পরীক্ষিত যোদ্ধা মুশফিকুর রহিম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুটাও ভালোই হয়েছিল। প্রথম ১৮ মিনিটে মুশফিক-মিরাজ অবিচ্ছিন্ন থেকে বড় স্কোরের আভাসও দিলেন। তখন মনে হচ্ছে আফগান বোলারদের নিয়ে হয়তো ছেলেখেলা করবেন বাংলাদেশের লেজের ব্যাটাররাও। স্কোর লাইন ৫/২৭৩ দেখে ৫০০ রানের লিড ভাবাটা মোটেও বাড়াবাড়ি কিছু ছিল না।

কিন্তু হায়! সেই ১০টা ১৮ মিনিটেই শুরু হলো ধ্বংসযজ্ঞ! ১০টা ৪৫ মিনিটেই বাংলাদেশ অলআউট। ৮.২ থেকে ৮৬ ওভার- মাত্র ২৩ বলের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

১০টা ১৮ মিনিটে মিরাজ আউট। এর ৬ মিনিট (১০টা ২৪ মিনিট) পর মুশফিকও ড্রেসিংরুমের পথ ধরলেন। বাইশগজে তাইজুলের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ মিনিট। ১০টা ২৫ মিনিটে ব্যাট হাতে নেমে মাত্র ২ বল মোকাবিলা করে আউট। এরপর তাসকিন ১০টা ৩৭ মিনিটে এবং সবশেষ উইকেট হিসেবে ১০টা ৪৫ মিনিটে আউট হন শরিফুল।

প্রথম দিন শেষে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ কাল আর মাত্র ৫ রান করতে পারলেন। মাত্র ২ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস। আর মুশফিক তার ব্যক্তিগত স্কোরে আর মাত্র ৬ রান যোগ করতে পারলেন। ৪১ রান নিয়ে খেলতে নেমে কাল ৪৭ রানে আউট মিস্টার ডিপেন্ডেবল। মুশফিক-মিরাজই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে স্বীকৃত শেষ জুটি। টেস্টে কখনো কখনো লেজের ব্যাটসম্যানদেরও বড় ভূমিকা রাখতে হয়। কিন্তু কাল তাসকিন-তাইজুলরা ব্যর্থ।

প্রথম দুই দিনের পারফরম্যান্স দল হিসেবে আফগানিস্তানের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো হলেও তাদের অভিষিক্ত বোলার নিজাত মাসুদের কাছে স্মরণীয় হয়ে গেল। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তিনি ৫ উইকেট নেওয়ার দারুণ এক কীর্তি গড়লেন। আগের দিন প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। কাল আরেক রেকর্ড গড়লেন।

তবে সকালের সেই ‘২৭ মিনিট’ বাদ দিলে পুরোটা দিন ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে। বোলাররা যেমন তাদের ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন, তেমনি বিকালে শান্ত ও জাকির মিলে আফগান বোলারদের রীতিমতো তুলাধুনা করেছেন। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরির পর এ ইনিংসেও অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি করেছেন শান্ত। ম্যাচসেরার পুরস্কারটি যেন অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখলেন। হাফ সেঞ্চুরি এসে জাকির হাসানের ব্যাট থেকেও। দুজনেই অপরাজিত রয়েছেন ৫৪ রানে।

তবে কাল প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও ইবাদত-শরিফুলরা কিন্তু বল হাতে ঠিকই আগ্রাসি ছিলেন। পেসার ৪৭ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। আরেক পেসার শরিফুলের শিকার ২ উইকেট। দারুণ বোলিং করেছেন দুই স্পিনার মিরাজ ও তাইজুল। দুজনই ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

প্রথম দিনের মতো মিরপুরে দ্বিতীয় দিনেও রাজত্ব করল বাংলাদেশ। তবে এমন তৃপ্তির দিনে অস্বস্তি কেবল সেই ‘২৭ মিনিট’!

 

সর্বশেষ খবর