শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারাই এখন তারকা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তারাই এখন তারকা

সাকিব, মাশরাফি তামিম, মুশফিক শুধু বাংলাদেশে কেন বিশ্বক্রিকেটেও সুপরিচিত নাম। দেশের হয়ে অনবদ্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে তারা আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তারকা বলতে এখন শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরই বোঝায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চেনেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের কতজন চেনেন এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য যে, পুরুষদের চেয়ে নারী ফুটবলাররা এখন পরিচিত হয়ে উঠেছেন। সাবিনা, স্বপ্না, আঁখি, মারিয়া, শামসুন্নাহার, কৃষ্ণাদের নাম ক্রীড়াপ্রেমীদের মুখে মুখে। তাঁরা নারী ফুটবলকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

পুরুষ ফুটবলে এ চেহারা আগে ছিল না। ’৭০ ও ’৮০-এর দশকে ঘরোয়া ফুটবলে জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। অন্য কোনো খেলা এর ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারত না। আর ফুটবলারদের জনপ্রিয়তা এমন ছিল, রাস্তায় দেখা গেলে ভিড় জমে যেত। বাফুফের সভাপতি হিসেবে ব্যর্থ হলেও ফুটবলার সালাউদ্দিনই ছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম সুপারস্টার। ঢাকা আবাহনীর যে জনপ্রিয়তা, এর পেছনে সালাউদ্দিনের অবদান কম নয়।

এখন যেমন সাকিবের নাম মুখে মুখে, তখন সালাউদ্দিনই ছিলেন দেশের খেলার রাজা। গোলরক্ষক শহীদুর রহমান সান্টু, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, গোলাম সারোয়ার টিপু,  এনায়েতুর রহমান, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, অমলেসেন,  শফিউল আরেফিন টুটুল, মনোয়ার হোসেন নান্নু, শামসুল আলম মঞ্জু, বাদল রায়, আশিষ ভদ্র, খোরশেদ বাবুল, সালাম মুর্শেদী, আবদুল গাফফার, আবুল হোসেন, গোলরক্ষক মহসিন, স্ট্রাইকার মোহসিন, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ইলিয়াস হোসেন, ইমতিয়াস সুলতান জনি, ওয়াসিম- এঁদের জনপ্রিয়তাও ছিল তুঙ্গে। তাঁরা সবাই ছিলেন তারকা ফুটবলার। এখন তো জার্সিতে নাম দেখে ফুটবলার চিনতে হয়। তখন মাঠে নামলেই চেনা যেত খেলোয়াড়দের। সালাউদ্দিনের পর যদি কাউকে মহাতারকা বলা হয় তা হলে শেখ মো. আসলাম, কায়সার হামিদ, মোমেন মুন্না ও রুম্মন ওয়ালি বিন সাব্বিরের নাম বলতে হয়। তাঁরাও দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার। ’৯০-এর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে খেলেছেন তারকারা। সম্রাট হোসেন এমিলি, গোলরক্ষক ছাইদ হাসান কানন, হাসান আল মামুন, জুয়েল রানা, ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব, মামুন জোয়ারদার, রুমি, আলফাজ এঁরাও তারকার খ্যাতি পেয়েছিলেন। গোলরক্ষক আমিনুল হক, বিপ্লব ভট্টাচার্য, মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হাসান এমিলি পর্যন্ত ফুটবলে তারকার খ্যাতিটা ছিল।

কয়েক বছর ধরে তারকা নামটি যেন উধাও হয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন জাতীয় দলের লাগাতার ভরাডুবির কারণে এ দশা। সালাউদ্দিন বা কায়সার হামিদরা যখন খেলতেন তখনো তো জাতীয় দল আহামরি কিছু করতে পারেনি। সাফ গেমসেও ছিল ব্যর্থ। তাহলে তাঁরা তারকার খ্যাতি পেলেন কীভাবে? আসলে ঘরোয়া আসরে নৈপুণ্য তাঁদের হিরো বানিয়েছে। পেশাদার লিগে তো শুধু বিদেশি ফুটবলারদের দাপট। স্থানীয়রা বড্ড ম্লান। শিরোপা জেতার পেছনে বিদেশিদেরই অবদান বেশি। তারপরও স্থানীয়রা যে নজর কাড়ছেন না তা বলাটা ভুল হবে বা লোকালদের প্রতি অবিচার করা হবে। এখনো তারকা আছেন তবে এর সংখ্যা খুবই কম। এর মধ্যে জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণ ও গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। ’৭০ বা ’৮০-র দশকের মতো ঘরোয়া ফুটবলে উত্তেজনা না থাকলেও এই তিনজনকে তখনকার তারকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তাদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ দর্শকরা।

জামাল ভূঁইয়া প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে ঘরোয়া আসর ও জাতীয় দলে খেলছেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এ ফুটবলার দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও তাঁর পারফরম্যান্সে আগের মতো ঝলক নেই। তবু মধ্য মাঠে তিনিই সেরা। তপু তো দেশের সেরা ডিফেন্ডার। বসুন্ধরা কিংসে খেলা এ ফুটবলার লিগ ও জাতীয় দলে আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। দলের প্রয়োজনের সময় তিনি গোলও করছেন। অনেকে তাঁকে মোমেন মুন্নার সঙ্গে তুলনা করেন। গোলরক্ষক পজিশনে জিকো শুধু বসুন্ধরা কিংস নয়, জাতীয় দলেও অপরিহার্য হয়ে পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর