রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

২১ শতকের সেরা বাংলাদেশ

আসিফ ইকবাল

২১ শতকের সেরা বাংলাদেশ

ছবি : রোহেত রাজীব

বাংলাদেশের টেস্ট খেলার বয়স মাত্র ২৩ বছর। দুই যুগ ছুঁই ছুঁই বয়সী টেস্ট খেলুড়ে দেশের লড়াকু যুবকটি অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড গড়েছে। ইতিহাস লিখেছে সোনালি কালিতে। শতাব্দী সেরা জয় তুলে ক্রিকেট ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে টাইগাররা। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে চার বছর আগের হারের মধুর প্রতিশোধই নেয়নি শুধু, ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তরা। পাঁচ সেশন হাতে রেখে বাংলাদেশ মাত্র সোয়া তিন দিনে ৫৪৬ রানের জয় তুলে সিরিজ জিতেছে। ১৮৭৭ থেকে ২০২৩: ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে জয়টি আবার তৃতীয় বৃহত্তম। বাংলাদেশের ১৩৮ টেস্ট ইতিহাসে সর্ববৃহৎ।

বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট খেলে ২০০০ সালের নভেম্বরে। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টটি হেরেছিল ৯ উইকেটে। এরপর গত ২৩ বছরে টেস্ট খেলেছে আরও ১৩৭টি। জয় ১৮টি। যার ১১টি রানের ব্যবধানে, দুটি ইনিংস ব্যবধানে এবং ৫টি উইকেটে। রানের ব্যবধানে জয়ের ৬টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, দুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং একটি করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয় ২০০৫ সালে। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়েছিল। ওই জয়টিই ছিল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যবধানে জয়। গতকাল সেটিকে পেছনে ফেলেছে ৫৪৬ রানের জয়টি।

মিরপুরের টেস্টটি ছিল লিটনের অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচ। এর আগেও টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। গত ডিসেম্বরে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ উপহার দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টি-২০ ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন। ম্যাচটি হেরেছিল টাইগাররা। এবার হঠাৎ টেস্টে নেতৃত্ব পান। সাকিবের ইনজুরিতে দায়িত্ব পেয়েই ইতিহাস লিখেন। সোয়া তিন দিনে ইতিহাস গড়া জয়ের পর লিটন বলেন, তিনি নেতৃত্ব উপভোগ করেছেন, ‘আবহাওয়া ছিল অনেক গরম। এমন গরমে খেলা খুবই কঠিন। অসাধারণ এই জয়ের ম্যাচের ক্রেডিট পাবেন ব্যাটাররা। নাজমুল শান্ত উভয় ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করেন। আমাদের বেশ কিছু কোয়ালিটি পেসার ও স্পিনার রয়েছেন। অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচ হলেও আমি উপভোগ করেছি।’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন নাজমুল শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রান করেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুমিনুল প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রান করেছিলেন।

গোটা টেস্টে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৩টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরির ইনিংস রয়েছে। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল শান্ত ১৪৬ ও মাহমুদুল হাসান জয় ৭৬। দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুল শান্ত ১২৪ ও মুমিনুল ১২১ রান করেন। হাফসেঞ্চুরি করেন জাকির হাসান ৭১ ও অধিনায়ক লিটন অপরাজিত ৬৬। ব্যাটারদের দেখানো পথে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স করেছেন বোলাররাও। ৬৬২ রানের টার্গেটে ৯ উইকেটে ১১৫ রান তোলার পর শেষ ব্যাটার ব্যাটিং করেননি। তাসকিনের বাউন্সারে কনুইয়ে আঘাত পান জহির। অবশ্য জহিরকে একবার বোল্ড করে ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন। কিন্তু বলটি ‘নো’ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পারেননি। আগের বলে আরও একবার উচ্ছ্বাস করে মাটিতে চুমু খেয়েছিলেন তাসকিন। কিন্তু রিভিউতে দেখা যায় ব্যাট স্পর্শ করেনি বল। গোটা ম্যাচে আফগানিস্তানের ১৯ উইকেটের ১৪টি নিয়েছেন তিন পেসার।

 

রেকর্ড

♦ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়। আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানে। ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই জয়টি ছিল আবার বাংলাদেশের প্রথম।

♦ ৫৪৬ রানে জয় ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম। সবচেয়ে বড় জয় ইংল্যান্ডের। ১৯২৮ সালে ব্রিসবেনে ইংল্যান্ড ৬৭৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল।

♦ ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ৫০০ রানের ওপরের ব্যবধানে জয় রয়েছে ৪টি। যার তিনটিই আবার উনিশ শতকে। ১৯২৮ সালে ইংল্যান্ড ৬৭৫ রানে, ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়া ৫৬২ রানে ইংল্যান্ডকে এবং ১৯১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ৫৩০ রানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।  

♦ চলতি শতকে বাংলাদেশের ৫৪৬ রানের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। চলতি শতকে এই প্রথম কোনো দেশ ৫০০-এর ওপরে ব্যবধানে জয় পেল। ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯২ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে।

♦ এই প্রথম কোনো টেস্টে বাংলাদেশের পেসাররা দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৪ উইকেট নিয়েছে। যা দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে রেকর্ড।

♦ মুমিনুল হকের পর দ্বিতীয় টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রান করেন।

♦ টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেকেই জয় তুলে নেন লিটন দাস। এর আগে টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে অধিনায়কত্বের অভিষেকে জয় পান মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসান। 

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর