রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেমিতেই হৃদয় ভাঙল লাল-সবুজের

সেমিতেই হৃদয় ভাঙল লাল-সবুজের

নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। গোলশূন্য ড্র ম্যাচ। আরও ৩০ মিনিটের লড়াই। মাঠের সৈনিকদের সেবায় নেমে পড়ল কোচিং স্টাফ। সাইডলাইনে বসে থাকা ফুটবলাররাও এগিয়ে গেলেন। সতীর্থদের পায়ের যত্ন নিলেন। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে পাওয়া ক্ষত সারিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন ফুটবলাররা। ১০ মিনিটের ছোট্ট বিরতির পর আবারও নামলেন লড়াইয়ে। এবার আর পারলেন না লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। হঠাৎ আক্রমণে গোল পেয়ে যায় কুয়েত। বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ১-০ ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে তারা। সাফের বাইরের প্রথম দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করল কুয়েত। বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৪ বছর পর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তা আর হলো না। শেষ চারে হেরেই হৃদয় ভাঙল লাল-সবুজের।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর দুটি দলই ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ দল একটু বেশিই। এর কারণও আছে। ৬২ মিনিটের মধ্যেই পাঁচটা পরিবর্তন করেন কুয়েতের কোচ। সেরা একাদশের ফুটবলারদের পেয়ে বেশ চাঙা হয়ে যায় তারা। অন্যদিকে ৬৮ মিনিটে জামালের পরিবর্তে ফাহিমকে এবং ৮৭ মিনিটে শেখ মোরসালিনের পরিবর্তে ইব্রাহিমকে মাঠে নামান কোচ কাবরেরা। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলতে নামার আগে হৃদয়ের পরিবর্তে জনিকে লড়াইয়ে নামান তিনি। ক্লান্ত সোহেল বারবার হাত দেখিয়ে পরিবর্তন করার কথা বলছিলেন। পায়ে টান পড়েছে তার। অবশেষে ১০৯ মিনিটে তিনটা পরিবর্তন আনেন কোচ। সোহেল রানার স্থানে সুমন রেজা, ইসা ফয়সালের স্থানে রহমত মিয়া এবং ফাহিমের স্থানে রবিউলকে নামিয়ে দেন কোচ কাবরেরা। কিন্তু শেষ দিকের এই পরিবর্তনেও কাজে আসেনি। ম্যাচে আর ফিরতে পারেননি তপু বর্মণরা। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথম ভাগে যোগ করা সময়ে (১০৫+২) আবদুল্লাহ আলবোশির গোলটাই ম্যাচের ফলাফল নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ পুরো ম্যাচে কী দুরন্ত সব সেভ করেছেন জিকো। পাখির মতো ডানা মেলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। চীনের প্রাচীরের মতো দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন। অন্তত আটটা গোলমুখী শট রুখে দিয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষের আক্রমণে বাঁধ সেধেছেন আরও অনেকবার।

বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালের লড়াই শেষ হওয়ার পর ধাতস্থের মতো দাঁড়িয়ে গেল পুরো বাংলাদেশ। বেশির ভাগেরই চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো অশ্রুরাশি। তপু বর্মণ। বাংলাদেশ ফুটবল দলের স্তম্ভ। তিনিও বিমূঢ়। আহা! ম্যাচটা তো জেতার মতোই ছিল। কী দুরন্ত আক্রমণ করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মিনিটেই মোরসালিনের শটটা যদি জালে জড়াত! রাকিবের জিরো ডিগ্রি থেকে নেওয়া শটটা যদি ক্রসবারে লেগে জালে জড়িয়ে যেত! শেষ দিকেও রাকিবরা চেষ্টা করেছেন। গোল হতেই পারত। কিন্তু হয়নি। বিপরীতে হঠাৎ আক্রমণে হালকা শটে একটা গোল করে বসল কুয়েত। অথচ পুরো ম্যাচে তাদের অন্তত আটটা গোল হওয়ার মতো শট রুখে দিয়েছেন জিকো। গোললাইন সেভ করেছেন ইসা ফয়সাল। এমন একটা ম্যাচ হারার পর ধাতস্থ হওয়াটা স্বাভাবিক বটে। বিশেষ করে মোরসালিনের জন্য। ১৭ বছরের এই তরুণ ম্যাচটার পর দীর্ঘ সময় তাকিয়েছিলেন গোলবারের দিকে। প্রথম সুযোগটা তো তিনিই হারান! মোরসালিন, তপু, ফাহিম, রবিউলদের সান্ত্বনা দেন কোচিং স্টাফরা। দলের ম্যানেজার আমের খান পিঠে হাত বুলিয়ে দেন ফুটবলারদের।

হারলেও বাংলাদেশ মন জয় করেছে। প্রতিপক্ষ কোচেরও। ম্যাচের পর তিনি অবলীলায় বলে দিলেন, দক্ষতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে তাদের ‘টিম স্পিরিট’ অসাধারণ। এই দলটার ভবিষ্যৎও যে দারুণ, তাও বলে গেলেন কুয়েতের পর্তুগিজ কোচ রয় বেনতো। আর বাংলাদেশের কোচ! হাভিয়ের কাবরেরার দৃষ্টিতে, তার ছেলেরা অসাধারণ খেলেছে। বরং নিজেদের সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে খেলেছে। কুয়েত বেশ এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে (বাংলাদেশ ১৯২ ও কুয়েত ১৪১) তো বটেই, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও। টানা দশ ম্যাচে অপরাজিত তারা। এমন এক দলের বিপক্ষে সিনা টান করে ১২০ মিনিটের ম্যাচ খেলে একটা গোল হজম করা যে সত্যিই কঠিন ব্যাপার। পাশাপাশি অন্তত এক হালি সুযোগ তৈরি করা! মোরসালিন, রাকিব কিংবা ফাহিমরা একটা গোল করলেই তো ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত!

বাংলাদেশ দারুণ একটা টুর্নামেন্ট খেলে গেল। টানা দুই ম্যাচে তিনটি করে গোল করে দেখিয়েছে, গোল করার সক্ষমতা কম নয় তাদের। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে দৃঢ়তাপূর্ণ লড়াইয়ে নামার মানসিকতা দেখিয়েছেন জামাল-তপুরা। বাংলাদেশের ফুটবল দলের এমন চিত্র পুরনো দিনে থাকলেও বর্তমান সময়ের জন্য একেবারেই নতুন। কোচ কাবরেরা নতুন এই বাংলাদেশের রূপটা আরও বাড়িয়ে তুলতে চান। না বাড়ুক, অন্তত এর চেয়ে কমাতে রাজি নন।

সর্বশেষ খবর