মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবারও আসব দেখা হবে সবার সঙ্গে

ঢাকা ঘুরে গেলেন মার্টিনেজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবারও আসব দেখা হবে সবার সঙ্গে

এমিলিয়ানো মার্টিনেজই বর্তমান বিশ্বকাপ জেতা দলের প্রথম ফুটবলার যিনি ঢাকা ঘুরে গেলেন। আর্জেন্টিনার মহাতারকা নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসি। সারা দুনিয়াতেই তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মেসিরই নেতৃত্বে কাতার বিশ্বকাপে তিন যুগ পর স্বপ্নের ট্রফি ফিরে পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তিনিই হয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের পেছনে গোলরক্ষক মার্টিনেজের অবদানও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোয়ার্টার ফাইনালেই আর্জেন্টিনার বিদায়ঘণ্টা বেজে যেত। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টাইব্রেকারে মার্টিনেজ চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়েছিলেন বলেই মেসিরা সেমিফাইনালের টিকিট পেয়েছিলেন। আর ফাইনালে মার্টিনেজের ভূমিকা ভক্তদের হৃদয়ে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে ম্যাচ ২-২ ড্র হয়। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলেও ফ্রান্স তা শোধ করে দিলে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। ২০১৪ সালের মতো তীরে এসে তরী ডুববে কি না এ নিয়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ আর্জেন্টিনার সমর্থক টেনশনে কাঁপছিল। কিন্তু সে চিন্তা মহাউৎসবে পরিণত করেন মার্টিনেজই। টাইব্রেকারে দুটি শট রুখে দিয়ে ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে এনে দেন বিশ্বকাপ। মার্টিনেজ হয়ে যান জয়ের নায়ক। ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ের পর বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার সমর্থকরা উৎসবে মাতল।

কাতার বিশ্বকাপে মেসি ছাড়া মার্টিনেজের নামটি বাংলাদেশের ভক্তদের হৃদয়ে গেঁথে যায়। অবিস্মরণীয় ম্যাচের জয়ের নায়ক বাংলাদেশে আসবেন এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে। গতকাল মার্টিনেজ ১১ ঘণ্টার সফরে ঢাকা ঘুরে গেলেন। সফর যতই সংক্ষিপ্ত হোক না মার্টিনেজের আগমনে উৎসব উন্মাদনা হবে এটাই স্বাভাবিক। কারেন্ট বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ককে কাছ থেকে দেখা কতটা না আনন্দের। কিন্তু কিছুই হলো না। অনেকটা নীরবে এসে নীরবে ফিরেই গেলেন বিশ্বকাপ জয়ী এ ফুটবলার।

মার্টিনেজকে কিন্তু দাওয়াত দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়নি। ভালোবাসার টানে নিজ ইচ্ছায় ঘুরে গেলেন। ভারতীয় ক্রীড়া সংগঠক শতদ্রু দত্ত যখন কলকাতার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মার্টিনেজকে আমন্ত্রণ জানান তখনই আর্জেন্টাইন এ তারকা মানচিত্র দেখে জেনে নেন ভারতের পাশেই বাংলাদেশের অবস্থান। তাই শতদ্রুকে অনুরোধ রাখেন কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও তাকে যেন বাংলাদেশে নিয়ে যান।

বাংলার মানুষের ভালোবাসার টানে মার্টিনেজ ঢাকায় আসেন। কাতারে বিশ্বকাপ চলাকালে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছিল তাদের ঘিরে বাংলাদেশে কী ধরনের উন্মাদনা চলছে। হৃদয় দিয়ে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন জোগাচ্ছে। ঘরে ঘরে উড়ছে পতাকা আর আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ম্যাচ উপভোগ করছে। এ দেশকে দেখার সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়?

শতদ্রু তার অনুরোধ রেখেছেন। ভালোবাসার টানে মার্টিনেজ বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। কিন্তু দেখে গেলেন না আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। যারা আর্জেন্টিনার জয়ে হাসে বা হারে কাঁদে তাদেরই দেখা মিলল না।

মার্টিনেজ ঢাকায় আসবেন তা তো দুই মাস আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। তার আগমন ঘিরে দর্শকদের জন্য কি কোনো অনুষ্ঠান করা যেত না? ১১ ঘণ্টার সফর, এখানে কি ২ বা ১ ঘণ্টা সময় বেছে নেওয়া যেত না। ফান্ডেডনেক্সট নামে এক প্রতিষ্ঠান শতদ্রুর সঙ্গে আলাপ করে মার্টিনেজকে আনার ব্যবস্থা করে। তারা কি জানে না এদেশে আর্জেন্টিনা ফুটবলারদের কত কদর? নিজেদের অফিসে নিয়ে গেছে তাও আবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। বাফুফেও তো পারত ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ করে একটা কিছু করাতে। বিশ্বজয়ের এক নায়ক এলেন। অথচ সাধারণ মানুষ তাকে কাছ থেকে দেখতে পারল না। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজিক আর কী হতে পারে। প্রশ্ন উঠেছে মার্টিনেজের ট্যুরটি কারোর পারিবারিক আয়োজন ছিল কি না?

যাক মার্টিনেজ তা ঠিকই উপলব্ধি করেছেন। অব্যবস্থাপনায় আর্জেন্টিনার ভক্তদের দেখা না পাওয়ায় তিনিও অবাক হয়েছেন। তাই যাওয়ার সময় বলে গেছেন, ব্যস্ততা না থাকলে একা নয়, বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে আসব। আশা করি তখন দেখা হবে সবার সঙ্গে।

ফান্ডেডনেক্সটের আরেকটি বিষয় অবাক করেছে। তাদের অফিসে বাফুফের সভাপতির দেখা মেলেনি। জানি না তাকে বলা হয়েছিল কি না, যদি না বলে থাকে তা বেমানানই বলা যায়। সালাউদ্দিন হয়তো নানা বিতর্কে সমালোচিত। ক্রিকেটারের দেখা মিললেও কোনো তারকা ফুটবলার নেই। আসলে মার্টিনেজের এই ১১ ঘণ্টা সফর ছিল বড্ড সাদামাটা। যা মার্টিনেজের নামের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।

সর্বশেষ খবর