শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

উদ্বেগ-উত্তেজনার ২৯ ঘণ্টা

অবসর ভেঙে ফিরলেন তামিম

মেজবাহ্-উল-হক

উদ্বেগ-উত্তেজনার ২৯ ঘণ্টা

বিশ্রাম শেষে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবেই ফিরছেন তামিম ইকবাল

হঠাৎই অবসর ঘোষণা! তামিম ইকবাল জানিয়ে দেন তাঁর ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এখানেই পরিসমাপ্তি। চট্টগ্রামে এক হোটেলে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘এটাই আমার শেষ। আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমার ১৬ বছরের যাত্রাপথে পাশে থাকার জন্য সতীর্থ, কোচ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও আমার পরিবারকে অনেক ধন্যবাদ।’

এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

তামিমের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে সমালোচনা ছিলই। গুঞ্জন ছিল হয়তো তিনি নিজে থেকেই ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তাঁর ক্রিকেটকে গুডবাই জানানোর ঘটনায় ক্রিকেটপ্রেমীরা যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান।

গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই যেন হইচই পড়ে যায়। বিশ্বকাপের আগে এই ৩৪ বছর বয়সে কেন এভাবে অবসর নিতে হবে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তরা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করতে থাকেন। কিন্তু কাল এ ঝড় থামিয়ে দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তামিম ইকবালকে গণভবনে ডেকে অবসর থেকে ফিরিয়ে আসতে বলেন। ড্যাসিং ওপেনারও তাঁর নির্দেশ মেনে নেন। এর আগে বিসিবির পক্ষ থেকেও একই অনুরোধ করা হয়। তাই তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত ২৯ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি। পুরো ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্রিকেটে ফিরেছেন তামিম। ২৯ ঘণ্টার অবসর-উদ্বেগ-উত্তেজনার পরিসমাপ্তি।

অবসর থেকে ফেরা লিওনেল মেসি যদি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে পারেন, অভিমান ভেঙে দলে ফিরে ইমরান খান যদি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারেন, তাহলে তামিম ইকবাল কেন পারবেন না! চলমান ঘটনাপ্রবাহ কি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে!

২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে হারায় জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সুপারস্টার লিওনেল মেসি। তারপর তিনি জনতার অনুরোধে অবসর ভেঙে দলে ফিরে কোপা আমেরিকা জেতার পাশাপাশি দলকে বিশ্বকাপের শিরোপাও উপহার দিলেন।

১৯৮৮ সালে অবসর নিয়েছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের অনুরোধে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান। তারপর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো শিরোপা উপহার দেন।

এবার কি তবে তামিম ইকবালের ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে?

যদিও ২০১৬ সালের লিওনেল মেসি কিংবা ১৯৮৮ সালের ইমরান খানের সঙ্গে তামিম ইকবালের একটা জায়গায় বিস্তর ফারাক আছে। তাঁরা দুজনই দারুণ ফর্মে থাকা অবস্থায় অবসর নিয়েছিলেন। কিন্তু তামিমের পারফরম্যান্সে এখন ভাটার টান। তামিমকে নিকট অতীতে ঠিক ‘তামিমের’ মতো খেলতে দেখা যায়নি। বিস্ফোরক তামিমকে অনেক দিন থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! ক্যাপ্টেন্সি করছেন, বাংলাদেশ ম্যাচও জিতছে, কিন্তু ব্যাটার তামিমের সরব উপস্থিতি নেই। ব্যাটার তামিমের কোনো ইমপ্যাক্ট ইনিংস নেই। কখনো কখনো তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হয় যেন জোর করে খেলছেন! ইনজুরি-চাপ-ইগো সামনে তাঁর নানা প্রতিবন্ধকতা!

তবে এশিয়া কাপে যে তামিম ফিরছেন তা সম্পূর্ণ আলাদা। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে তরতাজা হয়ে ফিরবেন। হয়তো জেদি এক তামিমকে দেখা যাবে। যে তামিম ২০১২ সালে অনেক সমালোচনার পর এশিয়া কাপের দলে ফিরে টানা চার চারটি হাফসেঞ্চুরি করে হাতের চার আঙুল দেখিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে সেলিব্রেশন করেছিলেন, সেই তামিমকেই চায় বাংলাদেশ দল!

কাকতালীয়ভাবে এবারও তাঁর প্রত্যাবর্তনের মঞ্চটি সেই এশিয়া কাপ। দেখা যাবে কি সেই বিস্ফোরক তামিমকে?

তবে এরপরই তামিমের সামনে আরও বড় মঞ্চ। ২০২৩ বিশ্বকাপ। খেলা হবে উপমহাদেশের পছন্দের কন্ডিশনে, ভারতের মাটিতে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ওয়ানডে দলটাও দুর্দান্ত। তাই অবসর থেকে ফেরা লিওনেল মেসি যদি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করতে পারেন, অভিমান ভেঙে দলে ফিরে ইমরান খান যদি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারেন, তাহলে তামিম ইকবাল কেন পারবেন না! চলমান ঘটনাপ্রবাহ কি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে!

সর্বশেষ খবর