বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগ্রাসি বোলিংয়ে স্বস্তির জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আগ্রাসি বোলিংয়ে স্বস্তির জয়

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এই ওয়ানডে সিরিজে টাইগার কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে যে বড় ধরনের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ চালাবেন তা আগেই জানিয়েছিলেন! এক্সপেরিমেন্ট করলেনও। প্রথম দুই ম্যাচে হেরে কেবল সিরিজটা হাতছাড়া হয়ে গেল। তবে শেষ ম্যাচে দাপুটে এক বোলিং আক্রমণ বিভাগ পেল বাংলাদেশ। আর আগ্রাসি বোলিংয়ে এলো উড়ন্ত এক জয়।

আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ব্যবধান কমাল বাংলাদেশ। স্বাগতিক বোলারদের ক্যারিশমাটিক বোলিংয়ে মাত্র ১২৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় আফগানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫৯ বল হাতে রেখেই জিতে যায় টাইগাররা।

তবে সিরিজে হারজিতের চেয়েও কোচের কাছে যেন বড় বিষয় ছিল বিশ্বকাপের জন্য দলে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো। বাংলাদেশ দলে আগের ম্যাচের তিন পেসারের কেউই ছিলেন না এ ম্যাচে। আগের ম্যাচের একাদশে খেলা পেসারদের সাইডলাইনে রেখে এ ম্যাচে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামকে। দুই পেসারই বাজিমাত করে দিয়েছেন। দুই পেসারই নিয়েছেন ৬ উইকেট। শরিফুলের একার শিকারই ৪টি। এই টাইগার পেসার ৯ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন মাত্র ২১। এই পেসার গতকাল বোলিং করেছেন নিখুঁত লাইনলেন্থে। তার ৫৪টি ডেলিভারির মধ্যে মাত্র একবারই বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে আফগানিস্তান।

ভয়ংকর রূপে ছিলেন দলের সেরা পেসার তাসকিন আহমেদ। ৮.২ ওভারে বোলিং করে তিনি রান দিয়েছেন মাত্র ২৩। উইকেট নিয়েছেন ২টি। গতকাল আফগানরা অলআউট হয়েছে ৪৫.২ ওভারেই। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে কেবল ১০ ওভারের কোঠা পূরণ করার সুযোগ পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের করা ৬০ বল থেকে মাত্র ১৩ রান নিতে পেরেছেন আফগান ব্যাটসম্যানেরা। সাকিব ১টি উইকেটও নিয়েছেন। তার ওভারে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি আফগানরা। এ ছাড়া ২ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল এবং মেহেদী মিরাজের শিকার ১টি।

গতকাল বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারেনি আফগান ব্যাটাররা। সফরকারীদের ৮ উইকেট পড়েছিল ৮৯ রানে। ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের এতটাই দুরবস্থা হয়েছিল যে, ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নামা আজমতুল্লাহ ওমরজাই একাই করেছেন ৫৬ রান, বাকি সবার রানের যোগফল ৬০!

তবে মাত্র ১২৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেও ৩ উইকেট হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তামিম ইকবালের জায়গায় সুযোগ পেয়ে দুই ম্যাচের একটিতেও নিজের স্কোর ডাবল ফিগারে নিয়ে যেতে পারেননি মোহাম্মদ নাঈম। আগের ম্যাচে তবু ৯ রান করেছেন, আর এ ম্যাচে তো রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। বিশ্বকাপের আগে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ এই ওপেনার। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যে তার জায়গা হচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত সিরিজের তিন ম্যাচেই ব্যর্থ। অথচ আফগানদের বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচে তার দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি। গতকাল ১১ রানের বেশি করতে পারেননি শান্ত।

বোলিংয়ের মতো কাল ব্যাটিংয়েও সাকিব দেখিয়েছেন আস্থার ছাপ। অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজে ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। বল হাতে দাপট দেখানোর পর ব্যাট হাতে ৩৯ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। এ ম্যাচে ব্যাট হাতে আস্থা দেখিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস। ইনিংস ওপেন করতে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে ৫৩ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেই তিনি বাইশগজ ছাড়েন।

ম্যাচে দাপুটে বোলিংয়ের জন্য ‘ম্যাচসেরা’ হয়েছেন পেসার শরিফুল। তিন ম্যাচেই ধারাবাহিকতা (৩/২৪, ৩/২২, ২/২৬) দেখিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি।

 

সাকিবের আরেক মাইলফলক

আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের পাশাপাশি ৬০০ উইকেট। গতকাল বল হাতে ১৩ রান দিয়ে ১ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৩৯ রান করেন।

 

লিটনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং

মাত্র ১২৭ রানের টার্গেটে পৌঁছাতেও ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে ওপেনিংয়ে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন লিটন। খেলেছেন অপরাজিত ৫৩ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস।

 

তাসকিনের দাপুটে বোলিং

শেষ ম্যাচে ফিরেই দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ। ৮.২ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। তাসকিনের দাপুটে বোলিংয়ে যেন বদলে যায় বোলিং আক্রমণ।

 

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ৩য় ওয়ানডে

আফগানিস্তান : ১২৬/১০ (৪৫.২ ওভার) (ওমরজাই ৫৬, শহীদি ২২; শরিফুল ৪/২১,  তাসকিন ২/২৩, তাইজুল ২/৩৩, সাকিব ১/১৩)

বাংলাদেশ : ১২৯/৩ (২৩.৩ ওভার) (লিটন ৫৩*, সাকিব ৩৯, হৃদয় ২২*; ফজলহক ২/২৬, নবী ১/৭)

ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী       

সিরিজ : আফগানিস্তান ২-১ জয়ী

ম্যাচসেরা : শরিফুল ইসলাম   

সিরিজ সেরা : ফজলহক ফারুকি

সর্বশেষ খবর