শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
নাটকীয় জয়

বোলিং আক্রমণে আভিজাত্য!

শেষ ওভারে ২ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ

মেজবাহ্-উল-হক

বোলিং আক্রমণে আভিজাত্য!

‘দুর্বল’ দল ও ‘শক্তিশালী’ দলের ম্যাচ পরিকল্পনাতেই একটা বড় ছাপ থাকে! একাদশেই আত্মবিশ্বাসের দূত্যি দেখা যায়। দুর্বল দলের সহজ পরিকল্পনা- ৫ বোলার এবং ৬ ব্যাটার। কোনো বোলার বেশি খারাপ করলে পার্টটাইমার কেউ তা পুষিয়ে দেবেন। টি-২০তে শক্তিশালী দল সাধারণত তাদের বোলিংয়ে শক্তি বাড়ায়। ২০ ওভার ব্যাটিং করতে ৫ ব্যাটারের বেশি দরকারই নেই! গতকাল সিলেটে ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান একাদশে ৬ বোলার নিয়ে যেন তার ‘লাক্সারি’ মেজাজ দেখিয়ে দিলেন।

গতকাল টাইগারদের বোলিং আক্রমণে ছিল আভিজাত্য! তিন পেসারের সঙ্গে একাদশে তিন স্পিনার। সিলেটের সবুজ উইকেটে একাদশে যে তিন পেসার থাকবে তা জানাই ছিল! তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু এমন উইকেটে তিনজন জেনুইন স্পিনার নিয়ে যেন চমকে দিয়েছেন ক্যাপ্টেন। সাকিব আল হাসান নিজে রয়েছেন, সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদকে নিয়েছেন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, একাদশে ৬ বোলার নেওয়ার পরও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে কিন্তু সাত সাতজন জেনুইন ব্যাটার ছিলেন। সাকিব-মিরাজ দুজনেই অলরাউন্ডার হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ‘গভীরতা’ বেড়ে গিয়েছিল।

সিলেটের উইকেট সবুজ হলেও পুরোপুরি ‘স্পোর্টিং’! এমন উইকেটে ব্যাটার কিংবা বোলার সবার জন্যই সমান সুবিধা থাকে। রান করা যেমন কঠিন কিছু নয়, তেমনি স্কিলফুল বোলাররাও বাজিমাত করে দিতে পারেন। সাধারণত আইসিসির ইভেন্টগুলো এমন উইকেটে হয়ে থাকে। যেখানে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ বলে তেমন কিছু থাকে না বললেই চলে!

‘লাক্সারি’ বোলিং আক্রমণ নিয়ে পাওয়ার প্লে-র প্রথম ৬ ওভারে দারুণ দাপট দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। আফগানিস্তানের ভয়ংকর তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিংরুমের পথ ধরিয়ে দেন টাইগার বোলাররা। তবে শুরুর দাপটটা শেষের দিকে দেখাতে পারেননি। আফগানিস্তান যেখানে পাওয়ার প্লের মধ্যেও প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ৩৭ রান করেছিল সেখানে স্লগ ওভারের ৫ ওভারে সফরকারীরা করেছে ৬০ রান।

আফগানিস্তানের টপঅর্ডার ধসে পড়লেও মিডলঅর্ডারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবী ঝোড়ো গতিতে ব্যাটিং করে পুষিয়ে দিয়েছেন। তিনি মাত্র ৪০ বলে খেলেছেন অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের সঙ্গে তার ৩১ বলে ৫৬ রানের জুটি আফগানিস্তানকে পৌঁছে দিয়েছে ১৫৪ রানে।

গতকাল টস হারার পর প্রথমে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে আফগান দলপতি রশিদ খান বলেছিলেন, ‘এখানকার উইকেট কেমন তা তো জানি না। এখানে আগে টি-২০ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাই আগে বোলিং করতে পারলে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যেত। কিন্তু টসে তো আমাদের হাত নেই। আশা করছি ১৫০ রান হলে ভালো হবে।’

তবে রশিদের টার্গেটের চেয়ে গতকাল বেশি রান করেছিল আফগানিস্তান। ছয় ছয়জন জেনুইন বোলার নিয়েও শেষ দিকে লাক্সারি ভাব ধরে লাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ বিভাগ। শেষ ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বোলিং করার শরিফুল ইসলাম তিন ওভারে দিয়েছেন ৩০ রান। এ ছাড়া বাকি বোলাররা আফগান ব্যাটারদের চাপের মধ্যেই রেখেছিলেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, গতকাল ৬ বোলারই বোলিং করেছেন। উইকেটও ৬ বোলারই পেয়েছেন। সাকিব তার কোটার ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। বাকি ৫ বোলার একটি করে উইকেট শিকার করেছেন। টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ ওভারেই দিয়েছেন ১৪ রান। অবশ্য এখানে সাকিবের করারও কিছু ছিল না। শরিফুল সুবিধা করতে না পারায় ১৯তম ওভারে তার জায়গায় তিনি নিজেই বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২৯ রানে এক উইকেট নিয়েছেন। তবে প্রথম তিন ওভারে তিনিও দিয়েছিলেন মাত্র ১৬ রান। মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়েছেন। নাসুম ৩ ওভারে দিয়েছেন ২০ রান।

শুরুতে দাপট দেখালেও শেষে বোলিংয়ে আভিজাত্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। প্রথমে ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান করে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ ১৫৫ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শেষ ওভারে দুই উইকেটে জিতে যায়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর