সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্থানীয়দের নিয়ে দুই কোচের দুই মত

মনোয়ার হক

স্থানীয়দের নিয়ে দুই কোচের দুই মত

২০২২-২৩ ফুটবলের পেশাদার লিগ শেষ হয়েছে। বসুন্ধরা কিংস ইতিহাস গড়েই টানা চতুর্থ শিরোপা জিতেছে। সঙ্গে স্বাধীনতা কাপের হারানো শিরোপা ফিরে পেয়েছে। কিংসের মতো সমমানের দল গড়লেও ঢাকা আবাহনী কোনো ট্রফি জিততেই পারেনি। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান লিগে চতুর্থ স্থান দখল করলেও অনেকদিন পর স্বস্তির এক মৌসুম শেষ করল তারা। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাদা-কালো জার্সিধারীরা। গোটা টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেছে। সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংস ও ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অনেক দিন পর দেশের জনপ্রিয় দুই দল ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ায় ফুটবলে প্রাণচাঞ্চল্যের দেখা মেলে। পুলিশ এএফসি কোনো ট্রফি না জিতলেও চমক দেখিয়েছে। এই প্রথম তারা লিগে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র, মোহামেডান ও শেখ জামাল ধানমন্ডির মতো শক্তিশালী দলকে পেছনে ফেলে পুলিশের এ অবস্থান নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের।

এবারও লিগ বা টুর্নামেন্ট জেতার পেছনে বিদেশি ফুটবলারদের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হবে। নতুনভাবে যোগ দেওয়া ডরিয়েলটন গোমেজ ও অধিনায়ক রবসন রবিনহোর নৈপুণ্য কিংসকে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে যেমন সহায়তা করেছে তেমনি অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতের একক নৈপুণ্যে মোহামেডান ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলা যায়। ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করে অন্ধকারে ডুবে থাকা মোহামেডানকে আলোর মুখ দেখান সুলেমান দিয়াবাতে।

লিগে বসুন্ধরা সর্বোচ্চ ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০ ম্যাচে তারা ১৮টি জয় পেয়েছে। গোল করেছে ৫১টি। এর মধ্যে ডরিয়েলটন সর্বোচ্চ ২০ গোল করেছেন। রবসন ও মিগেল ফিগেরা ১০+১০=২০ গোল করেন। অর্থাৎ কিংসের তিন ব্রাজিলিয়ান মিলে করেন ৪০ গোল। ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান, পুলিশ, শেখ রাসেল কিংবা শেখ জামালও ছিল বিদেশিদের ওপর নির্ভর। তাহলে কি স্থানীয়রা কোনো কাজেই আসেনি। এতটা নিষ্ক্রিয় যদি থাকে তাহলে অনেক দিন পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রশংসিত হলো কীভাবে। বেঙ্গালুরুতে তো আর বাংলাদেশের জার্সি পরে বিদেশিরা খেলেননি। শেষ হওয়া মৌসুমে স্থানীয়দের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট তা জানতে চাওয়া হয় দুই কোচ মাহবুবুর হোসেন রক্সি ও আলফাজ আহমেদের কাছে। স্বাধীনতা কাপ ও লিগে কিংসের হেড কোচ ছিলেন অস্কার ব্রজোন। রক্সি তার সহযোগী হিসেবেই কাজ করছেন। শফিকুল ইসলাম মানিক বিদায়ের পর মোহামেডানের হেড কোচ হন আলফাজ আহমেদ। তার প্রশিক্ষণে মোহামেডান ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।

এবারের স্থানীয় পারফরম্যান্স নিয়ে দুই কোচের আবার দুই মত। রক্সি যেমন বললেন, ‘স্থানীয়রা লিগে খুব যে ভালো খেলেছেন তা বলব না। তবে গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় স্থানীয় ফুটবলাররা আস্থার পরিচয় দিয়েছেন এবং টেকনিক্যাল সেন্সও উন্নতি হয়েছে। আগে যেমন নাভার্সে থাকতেন বা ভয় কাজ করত সেটা কাটিয়ে তুলেছেন। এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমি বলব স্থানীয়রা সামনের মৌসুমে যে ক্লাবেই খেলুক না কেন তারা আরও ভালো খেলবেন। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী। দেখুন বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ফাইনালেও ওঠেনি। তারপরও খেলোয়াড়রা বাহবা পাচ্ছেন। কারণ তারা সত্যি ভালো খেলেছেন। জাতীয় দলে কারা খেলেন অনেকে তো চিনতেনই না। মান এত খারাপ ছিল যে চেনার আগ্রহও ছিল না। এবার দেখেন বেশ কজনার নাম মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। জিকো, তপু, জামালরা তো আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন। জিকো সেরা গোলরক্ষক হয়ে তো নিজেকে অন্য অবস্থানে নিয়ে গেছেন। মোরসালিন আহমেদ, রাকিব হোসেন, বিশ্বনাথ, ফাহিম বা হৃদয়কে এখন সবাই চেনেন। লিগে যদি এরা একেবারে খারাপই খেলত তাহলে সাফে এমনভাবে জ্বলে উঠতে পারত কি? আমার বিশ্বাস ফুটবল তার সোনালি অতীতে ফিরতে শুরু করেছে। যেখানে জার্সি নম্বর দেখে খেলোয়াড়কে চিনতে হবে না।’

রক্সি বলেন, ‘এবার লিগে কজন স্থানীয়ের পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করেছে। এদের মধ্যে বসুন্ধরা কিংসের বিশ্বনাথ, তারিক কাজী, রাকিব হোসেন, মোরসালিন আহমেদ। ঢাকা আবাহনীর মো. হৃদয়, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, সোহেল রানা। পুলিশের ঈশা, রবিউল, মোহামেডানের জাফর ইকবাল, ইমন শাহারিয়ার, রাজিব ও মুরাদ হোসেন। শেখ রাসেলের দীপক রয়ের খেলা ভালো লেগেছে। আমার বিশ্বাস আগামীতে ভালো লাগার সংখ্যা আরও বাড়বে।’

যাক, রক্সি স্থানীয়দের নিয়ে আশাবাদী হলেও আরেক কোচ আলফাজের মুখে হতাশার সুর। তার কথা, ‘স্থানীয়রা এবার এমন আহামরি খেলেননি যে তাদের প্রশংসা করতে হবে। আমি বলব, গতবার যা দেখেছি এবারও সেই দৃশ্য। ঘুরেফিরে ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদেরই দাপট। জানি না এ দৃশ্য বদলাবে কবে?’

সর্বশেষ খবর