শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩০ বছরেও মুন্নাকে ভোলেনি ইস্টবেঙ্গল

মুন্না ছাড়াও ইস্টবেঙ্গলে খেলা বাংলাদেশের আরও তিন ফুটবলার আসলাম, রুমি ও গাউস সম্মাননা পাবেন। আছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা সংগঠক বাফুফে ও ঢাকা আবাহনীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদও। মুন্নার পুরস্কার গ্রহণ করবেন তার স্ত্রী সুরভী মুন্না, গাউস ও হারুনুর রশিদ নিজেরাই উপস্থিত থাকবেন। রুমি কানাডা থেকে কলকাতায় পৌঁছেছেন কি না তা জানা যায়নি

মনোয়ার হক

৩০ বছরেও মুন্নাকে ভোলেনি ইস্টবেঙ্গল

৩০ বছর আগে মোনেম মুন্না খেলেছেন ভারতের বিখ্যাত ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে। সঙ্গে খেলেছেন বাংলাদেশের আরও তিন তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম, রিজভী করিম রুমি ও মো. গোলাম গাউস। তিনজনই ছিলেন ঢাকা আবাহনীর ফুটবলার। জাতীয় দলেও সুনামের সঙ্গে খেলেছেন তারা। মুন্নার নেতৃত্বে তো ১৯৯৫ সালে জাতীয় দল দেশের বাইরে প্রথমবার মিয়ানমারে চার্মস কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। মুন্নার নেতৃত্বে আবাহনীও দুবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। তাছাড়া অসংখ্য ট্রফি জয়ের পেছনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। যার এত ত্যাগ ও পরিশ্রম, সেই আবাহনী কি মুন্নাকে স্মরণ করে সেভাবে? বাফুফেও কি জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ককে কখনো সম্মাননা জানিয়েছে? ২০০৫ সালে কিংবদন্তি এই ফুটবলার না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মুন্না নেই অথচ তার ক্যারিয়ারে একমাত্র বিদেশি ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ঠিকই মনে রেখেছে তাঁকে। মনে রেখেছে বললে ভুল হবে। মুন্না নামটি ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তা ও সাবেক সতীর্থদের হৃদয়ে গেঁথে গেছে।

মৃত্যুর পরও মুন্নাকে ইস্টবেঙ্গল কতটা ভালোবাসে তার প্রমাণ ক্লাবটির শতবর্ষ পূর্তির উদযাপনে। আজ ক্লাবটির ১০৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দিনভর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কলকাতা ক্ষুদিরাম অনুশীলন মাঠে ইস্টবেঙ্গলে খেলা বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়দের সম্মাননা প্রদান করা হবে। মুন্না ছাড়াও ইস্টবেঙ্গলে খেলা বাংলাদেশের আরও তিন ফুটবলার আসলাম, রুমি ও গাউস সম্মাননা পাবেন। আছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা সংগঠক বাফুফে ও ঢাকা আবাহনীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদও। মুন্নার পুরস্কার গ্রহণ করবেন তার স্ত্রী সুরভী মুন্না, গাউস ও হারুনুর রশিদ নিজেরাই উপস্থিত থাকবেন। রুমি কানাডা থেকে কলকাতায় পৌঁছেছেন কি না তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশের অনেক ফুটবলারই বিদেশি লিগ খেলেছেন। ১৯৭৬ সালে কাজী সালাউদ্দিন হংকং পেশাদার লিগ খেলেন। মুন্নারা যে সময়ে ইস্টবেঙ্গলে খেলেন তখন কায়সার হামিদ, রুম্মন ওয়ালিবিন সাব্বির, ইমতিয়াজ সুলতান জনি কলকাতা মোহামেডানে খেলেন। মামুনুল ইসলাম অ্যাথলেটিকো কলকাতা ও জামাল ভূঁইয়াও খেলেন কলকাতা মোহামেডানে। কিন্তু মুন্নার মতো সুনাম বা জনপ্রিয়তা কেউ পাননি। ১৯৯১ সালে ইস্টবেঙ্গলে মুন্নার অভিষেক। আর এতেই কলকাতা জয় করেছেন। সেবার ইস্টবেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে মুন্না গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যা এখনো অকপটে স্বীকার করেন ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তারা।

১৯৯৩ সালে মুন্না শুধু একা নন। ইস্টবেঙ্গলে খেলতে নিয়ে যান আসলাম, রুমি ও গাউসকে। কিন্তু মুন্নাই ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের নয়নের মণি। মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের সম্মাননা এটাই প্রথম। তারপর আবার আরও তিন খেলোয়াড় ও এক সংগঠকের একই দিনে সম্মাননা। এ এক বাংলাদেশের বিশেষ দিনই বলা যায়।

মুন্নার কলকাতা জয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা আবাহনী প্রথমবার কলকাতায় আইএফএ শিল্ড খেলতে যায়। সেবার আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সঙ্গে অলিখিত একটা চুক্তি হয় যে, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে বিদেশি কোটায় তাদের ফুটবলার দুই দলে লিগ খেলতে পারবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ায় শেখ কামাল তা আর দেখে যেতে পারেননি। ১৯৮৬ সালে লিগের শেষ ম্যাচে মোহামেডানের বিপক্ষে ইস্টবেঙ্গল থেকে আবাহনী উড়িয়ে আনে ভাস্কর গাঙ্গুলি, মনোরঞ্জন ধর ও চিমাওকোরিকে। যে ম্যাচ ড্র করলে লিগ ইতিহাসে আবাহনী টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই ম্যাচ ০-২ গোলে হেরে যায় ভাস্কর, মনোরঞ্জন, চিমাকে নিয়ে গড়া আবাহনী। চিমারা পারেননি। কিন্তু মুন্নারা ঠিকই পেরেছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে।

সর্বশেষ খবর