বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

তাঁর শেষটা যেন এক রূপকথা

মেজবাহ্-উল-হক

তাঁর শেষটা যেন এক রূপকথা

ক্রিকেটকে বলাই হয় অনিশ্চয়তার খেলা। অবিশ্বাস্য অনেক ঘটনাই তো ঘটে। এখানে কত শত যে রেকর্ড আছে, তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে কেউ কি কখনো কল্পনাও করেছিল যে, ৬০০ প্লাস উইকেট শিকারি কোনো পেস বোলার তার ক্যারিয়ারের শেষ বলে উইকেট শিকার করবেন? 

হ্যাঁ, এমন এক ঘটনাই ঘটিয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। ক্যারিয়ারের শেষ বলে উইকেট নিলেন। স্টুয়ার্ট ব্রডের শেষটা যেন এক রূপকথা। ব্রডের টেস্টে মোট উইকেট ৬০৪। এ পরিসংখ্যানই তো তার কিংবদন্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। একজন পেসারের জন্য ১৬৭টি টেস্ট খেলাও চাট্টিখানি কথা নয়। 

একজন ব্যাটার কিংবা স্পিনার চাইলেই তার ক্যারিয়ারকে অনেক লম্বা করতে পারেন। কিন্তু এই একই কাজ একজন পেসারের জন্য অনেক কঠিন। কারণ, ইনজুরি ও পেস বোলারের ক্যারিয়ার যেন সমার্থক। একটু এদিক সেদিক হলেই চোটে পড়তে হয়। ব্রডই ক্যারিয়ারে অনেকবারই চোটে পড়েছেন। কিন্তু বারবারই সদর্পে ফিরেছেন এবং ইংল্যান্ডের জার্সিতে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন।

ব্রিটিশ পেস কিংবদন্তি দিন কয়েক আগেই ঘোষণা দিয়েছেন চলতি অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ম্যাচ ওভালেই তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। এদিকে ম্যাচটি ইংল্যান্ডের জন্যও মহাগুরুত্বপূর্ণ। মর্যাদার অ্যাশেজ লড়াইয়ে তারা ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে। চতুর্থ ম্যাচে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হয়নি। বৃষ্টিতে ম্যাচটি ভেস্তে গেছে।

শেষ ম্যাচে তাই প্রাণপণ লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামে ইংলিশরা। একে তো সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচ, তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে যখন ব্রড বললেন, ‘এটাই আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ!’ তখন ওভাল টেস্টের গুরুত্ব যেন হাজার গুণ বেড়ে গেল। মহানায়ককে তো একটা বিদায়ী উপহার দেওয়া চাই!

কিন্তু হায়! চতুর্থ দিন শেষে ইংলিশদের অবস্থা খুবই লেজেগোবরে! কারণ, ৩৮৪ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ১৩৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিনে জয়ের জন্য অসিদের দরকার ছিল ২৪৯ রান, হাতে ১০ উইকেট। এমনকি শেষ দিনে একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৩ উইকেটে ২৬৪ রান! অর্থাৎ তখন জয়ের জন্য তাদের দরকার ছিল মাত্র ১২০ রান, হাতে ৭ উইকেট। ওভার ছিল পর্যান্ত। এ অস্ট্রেলিয়া এমনই এক দল, যাদের সবাই ব্যাটার। জয়টা যেন দেখতেই পাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া!

তাহলে কি ব্রডের বিদায়ী পার্টি প- হয়ে যাবে? টিভি পর্দায় বারবার ভেসে উঠছিল ব্রডের ‘অসহায়’ মুখচ্ছবি! কিন্তু তখনো আত্মবিশ্বাস হারাননি ইংল্যান্ডের ক্যারিশম্যাটিক ক্যাপ্টেন বেন স্টোকস। সতীর্থদের দারুণভাবে ‘বুস্টআপ’ করলেন। ট্রেভিস হেডকে মঈন আলী বিদায় করে জুটি ভাঙার পর ধীরে ধীরে পাল্টে গেল ম্যাচের চিত্রও। এরপর দ্রুত স্টিভ স্মিথের উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশ বোলার ক্রিস ওকস ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান। আর ব্রডের শেষ ধাক্কায় নাটকীয় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন ইংলিশরা।

এবারের অ্যাশেজ সিরিজকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সিরিজ। পাঁচ ম্যাচেই কঠিন যুদ্ধ। ১৮৮২ সালে অ্যাশেজ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা আর ঘটেনি যে ২-০তে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত সিরিজ ২-২-এ ড্র। শুধু অ্যাশেজে কেন, টেস্টের ইতিহাসেও মাত্র চতুর্থবার ২-০তে পিছিয়ে পড়ার সিরিজ ড্র করার ঘটনা ঘটল। ১৯২৭-২৮ মৌসুমে এমন ঘটনা প্রথম ঘটেছিল। সেবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল ইংল্যান্ড এবং ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ ড্র করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মজার বিষয় হচ্ছে, সবকটা ঘটনার সঙ্গেই ইংল্যান্ডের নাম জড়িত।

তবে এবারের অ্যাশেজ সিরিজের ঘটনা যেন সবগুলোকে ছাপিয়ে গেছে। আর এমন এক বহুল আলোচিত সিরিজেই নিজের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানলেন কিংবদন্তি ব্রড এবং শেষ বলে উইকেট নিয়ে যেন এক রূপকথার ‘জন্ম’ দিলেন!

ম্যাচ শেষে ব্রড বললেন, ‘অবিশ্বাস্য, অন্যবদ্য। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এমন ম্যাচে আমার উইকেট দুটি ছিল স্পেশাল। অ্যাশেজের মতো মর্যাদাপূর্ণ এক সিরিজে ম্যাচের শেষ বলে উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পারাটা বিশেষ কিছু। সব কিছু আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর