রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেখানে শুধুই সাদেক

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার উজ্জ্বল ইতিহাস

মনোয়ার হক

আবদুস সাদেক ফুটবল ও হকিতে অনেক দলে খেলেছেন। এক্ষেত্রে দিলকুশা ক্লাবের কথা না বললে নয়। দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৯৬৯ সালে প্রথম বিভাগে সুযোগ মেলে দিলকুশার। মুসা, কালো গফুর, কাদের বক্স, রসুল বক্স, আবদুল্লাহ তখনকার বিখ্যাত মাকরানী ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েছিল তারা। সেরা একাদশে বাঙালি খেলোয়াড়দের সুযোগ পাওয়াটা ছিল কষ্টের। সে মৌসুমেই ভিক্টোরিয়া থেকে সাদেক দিলকুশায় যোগ দেন এবং আস্থার সঙ্গে রক্ষণভাগের দায়িত্ব পালন করেন। সাদেকের নামডাক চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে ঘরোয়া ফুটবলে সেরা ডিফেন্ডারের খ্যাতি পেয়ে যান আবদুস সাদেক।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালেই প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ মাঠে গড়ায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়াচক্র নামে নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছরই ফুটবলের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে আবাহনীর অভিষেক হয়। শক্তিশালী দল গড়া হয়েছে। অনুশীলনেও মাঠে নেমে পড়েছেন খেলোয়াড়রা। তারকার অভাব নেই। অথচ ঠিক করা হয়নি অধিনায়কের নাম। শেখ কামাল নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন সাদেকই হবেন আবাহনীর অধিনায়ক। আবাহনীর প্রথম ম্যাচ বিআইডিসির বিপক্ষে। গ্যালারি ভরা দর্শকে দুই দল মাঠে নামল। আবাহনীর অধিনায়ক সাদেক করমর্দন করলেন বিআইডিসির অধিনায়ক সলিমুল্লাহর সঙ্গে। নতুন এক ইতিহাস রচনা হয়ে গেল ঘরোয়া ফুটবলে। শেখ কামালের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে। আবাহনীর জার্সি, নৈপুণ্য শুরু থেকেই ইউরোপের ক্লাবগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয়।

সাদেকই ক্রীড়াঙ্গনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ফুটবলের পাশাপাশি আবাহনীর হকি দলের অধিনায়ক হয়ে দলকে যেমন শিরোপা জেতান তেমনি তার প্রশিক্ষকও ফুটবল ও হকিতে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ অর্জন শুধু সাদেকেরই। ফুটবল আর হকির শুরুতে আবাহনী বাধা-বিপত্তির মধ্যে পড়লেও বিজয় নিশানা ঠিকই উড়িয়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকান্ডের পর শেখ কামালের আবাহনী নিয়ে ষড়যন্ত্রের শেষ ছিল না। খেলোয়াড়রা ক্লাবে থাকবেন এমন অবস্থাও ছিল না। আতঙ্কটা আরও বেড়ে যায় আবাহনীর ফুটবলার জামিল আক্তারকে হত্যার পর। রাতে জামিল ক্লাবেই ঘুমাচ্ছিলেন। কে বা কারা চোখ বেঁধে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। কোনোভাবেই খোঁজ মিলছিল না। এ ঘটনা সব খেলোয়াড়কে এতটা ভীত করে তুলে যে কেউ আর মাঠে নামতে চাচ্ছিলেন না। শেখ কামাল হত্যার পর ক্লাবের বড় বড় পদে থাকা কর্মকর্তাদেরও পাত্তা নেই। খেলোয়াড়দের সাহস জোগাবেন কে?

ক্লাবের বিপদের সময় অন্যরা এগিয়ে না এলেও হাল ধরেছিলেন আবদুস সাদেক। বাইরে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন হাঁটাচলা করছে। এমন ভয়ংকর পরিবেশের মধ্যেও সাদেক তাঁর ধানমন্ডির বাসার ছাদে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সাহস জোগাচ্ছেন আবাহনীকে টিকিয়ে রাখতে হবে। মাঠে নামতে হবে। ১৯৭৭ সালে আবাহনীর দল গড়াটাই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। দল হলেও মাঠে নামবে সেই ভরসা পাচ্ছিলেন না। সাদেক খেলোয়াড়ের পাশাপাশি কোচের দায়িত্ব নিলেন। যেখানে ফুটবলাররা খেলতে চাচ্ছিলেন না সেই আবাহনীই স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। সেই সঙ্গে লিবারেশন কাপের শিরোপা। এখানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ওই সময় ছিলেন হকির তারকা খেলোয়াড়। পুরান ঢাকায় তাঁর নেতৃত্বেই আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হয়। খেলোয়াড়দের সাহস জোগাতে সমর্থক নিয়ে নিয়মিত মাঠে যেতেন। যে আবাহনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল সেই আবাহনীই আজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর