সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইতিহাসের সাক্ষী হলো কিংস অ্যারিনা

রাশেদুর রহমান

ইতিহাসের সাক্ষী হলো কিংস অ্যারিনা

বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে। ঐতিহাসিক এ ম্যাচ উপভোগ করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। পাশে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ছবি : জয়ীতা রায়

ইতিহাস গড়ার দিন এলো। চারদিকে সাজ সাজ রব। দর্শকদের ঢল নামল। ঐতিহাসিক এক ম্যাচের সাক্ষী হতে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক। স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিপূর্ণ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলো। বাংলাদেশ খেলল আফগানিস্তানের সঙ্গে। খেলার ফলাফল গোলশূন্য ড্র। তবে এ ম্যাচে ফলাফলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যাচের আয়োজন। ঢাক-ঢোল, বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে দর্শকরা এক আবহ তৈরি করল দেশের ফুটবলে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের এমন আয়োজনে মুগ্ধ ফুটবলার, কোচ, ফুটবল সংগঠক সবাই।

বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে বসুন্ধরা কিংস নিজস্ব মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করে ইতিহাস গড়ল। এমন ঘটনা পুরো এশিয়াতেই বিরল। গৌরবের এমন দিনে বাংলাদেশ দারুণ ফুটবল খেলল। দর্শকদের মাতিয়ে রাখলেন মোরসালিন-রাকিবরা। বারবার গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন ভেঙে গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে শট নিলেন কয়েকবার। তবে গোলের দেখা মেলেনি। ২২ মিনিটে রাকিব সুযোগ হারান ডি বক্স ফাঁকা পেয়েও। ৫৬ মিনিটে মোরসালিনও গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন। গোলশূন্য ড্রয়ের এ ম্যাচেও অনেক কিছুই আছে। মাঠে রাকিব-মোরসালিনের বোঝাপড়াটা বেশ চোখে পড়েছে। গোলবারের সামনে দাঁড়িয়ে আনিসুর রহমান জিকো আগের মতোই ক্ষিপ্র গতিতে রুখে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ। ডিফেন্সে বিশ্বনাথ, তপু বর্মণ, তারিক কাজীরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু গোলটাই হয়নি ম্যাচে। আফগানিস্তান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আফগাস্তিান ১৫৭ এবং বাংলাদেশ ১৮৯ নম্বরে। আফগানদের কাছে ফুটবলে পরাজয়ের ঘটনাই ছিল। সে হিসেবে গতকালের ড্রও ছিল বড় প্রাপ্তি। তবে গোলের সুযোগ না হারালে ইতিহাস গড়া ম্যাচে জয় নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারতেন জামাল ভূঁইয়ারা।

ঐতিহাসিক এ ম্যাচের সাক্ষী হলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের স্বপ্নদ্রষ্টা আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও অনেক ফুটবল সংগঠক। ম্যাচ চলাকালীনই বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে কথা বলছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ ব্যাপারে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ম্যাচের পর বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। বাফুফে সভাপতি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে বলছিলেন, এরকম আরও দু-একটা করপোরেট গ্রুপ যদি এগিয়ে আসত তাহলে বাংলাদেশের ফুটবলে আগের সেই সুদিন ফিরে আসত। এ ছাড়া আজ (গতকাল) বসুন্ধরা গ্রুপের ম্যানেজমেন্টের যারাই বাংলাদেশের খেলা দেখেছেন তারা দলের প্রতি সন্তুষ্ট।’

দর্শকদের মধ্যেও ম্যাচটি ঘিরে ছিল বাড়তি উন্মাদনা। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ছুটে এসেছেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। কানায়-কানায় পরিপূর্ণ ছিল গ্যালারি। ম্যাচের পর দর্শকরা গানে গানে মাতিয়ে তোলেন কিংস অ্যারিনা। ফুটবলারদের অভিবাদন জানান। দর্শকদের এমন উচ্ছ্বাস আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে বাংলাদেশে সম্প্রতি বিরল। জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আশা করেন, দর্শকদের এমন সরব উপস্থিতি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের কোচ আবদুল্লাহও বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনার আবহ দেখে মুগ্ধ।

বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মালদ্বীপ ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে। প্রস্তুতি নেওয়ার মানসিকতা ছিল আফগানদেরও। তারা বাছাইপর্বে মঙ্গোলিয়ার মুখোমুখি হবে। কেমন খেললেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা! স্প্যানিশ এ কোচ বললেন, ‘আমরা কিছু কিছু জায়গায় ভুল করেছি। এগুলো শোধরাতে হবে। তবে সবদিক মিলিয়ে বললে, ছেলেরা ভালো খেলেছে।’ বাংলাদেশের ভালো খেলার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিপক্ষ দলের কোচও। আফগানিস্তানের কুয়েতি কোচ আবদুল্লাহ আল মুতাইরি বলেছেন, ‘ম্যাচে বাংলাদেশ বেশ কটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। মোরসালিন গোল না করলেও তাকে ম্যাচসেরা বলা যায়।’ বিশ্বনাথ এবং রাকিবের প্রশংসাও করেছেন প্রতিপক্ষ দলের কোচ। তবে নিজের শিষ্যদের নিয়েও বেশ সন্তুষ্ট তিনি। আশা করেন, আফগানিস্তান ফুটবলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

 

সর্বশেষ খবর